ঢাকা, শনিবার   ১২ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২৭ ১৪৩১

যুদ্ধেও থেমে যাননি ইউক্রেনের যেই গ্রামের চাষীরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৪১ পিএম, ১৪ এপ্রিল ২০২২ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০১:৪৩ পিএম, ১৪ এপ্রিল ২০২২ বৃহস্পতিবার

রাশিয়ার হামলা শুরুর পর দেশের সব নারী, শিশু এবং ষাটোর্ধ পুরুষদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে যেতে বলেছিল ইউক্রেন সরকার। কিন্তু ইয়াকভলিভকা গ্রামের অধিকাংশ মানুষ যাননি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গম চাষ করছেন তারা।

চলুন দেখে নেওয়া যাক ঝুঁকি নিয়ে করে যাওয়া তাদের কাজের অবদান-

ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শহর খারকিভের কাছে ইয়াকভলিভকা গ্রাম৷ গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই কৃষিজীবী। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া৷ তারপর থেকে দেশ ছেড়েছেন অন্তত ৪০ লাখ ইউক্রেনীয়। কিন্তু ইয়াকভলিভকার অধিকাংশ মানুষ কোথাও যাননি। কৃষক অধ্যুষিত ছোট্ট গ্রামটির অনেকে এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষিকাজ।

হামলা শুরুর এক সপ্তাহ পর খারকিভেও বোমা ফেলতে শুরু করে রাশিয়া। ইয়াকভলিভকা গ্রামে বোমার আঘাতে মারা যান চার জন, আহত হন ১১ জন।

প্রথম বোমা হামলার মনে পড়লে নিনা বোনদারেঙ্কো এখনো আঁতকে ওঠেন৷ জানালেন, সেদিন সারারাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছিলেন তারা, ‘‘ সেদিন সেলারে বসে বসে শুধু ঈশ্বরকে স্মরণ করছি৷ বাচ্চাগুলোকে কম্বল জড়িয়ে শুইয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা বড়রা ভোর তিনটা কি চারটা পর্যন্ত একটুও ঘুমাতে পারিনি।’’

গ্রামের স্কুলে অস্থায়ী ক্যাম্প করেছিল ইউক্রেনের সেনাবাহিনী৷ ধারণা করা হয়, সেখানেই বোমা ফেলতে চেয়েছিল রুশ সৈন্যরা। কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় স্কুল ভবনটি প্রায় অক্ষত থেকে যায়৷ রয়টার্স অবশ্য বলছে, রুশ বাহিনী ইয়াকভলিভকা গ্রামে সত্যিই হামলা চালিয়েছিল কিনা তা তারা যাচাই করে দেখতে পারেনি৷ রাশিয়ার দাবি, তারা বেসামরিক নাগরিকের ওপর হামলা চালায়নি।

বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম গম রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেন। রুটির জন্যও বিখ্যাত দেশটি৷ ইয়াকভলিভকা গ্রামে এখনো গম চাষ চলছে।  তবে ক্ষেতে গমের বীজ বপণ করা হলেও গম শেষ পর্যন্ত ঘরে তোলা সম্ভব হবে তো? এ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন কৃষিপণ্য উৎপাদনের প্রতিষ্ঠান ‘গ্র্যানারি অব স্লোবোদা’র পরিচালক ভাদিম আলেকসান্দ্রোভিচ৷ অথচ গত মৌসুমে ৩০০০ টন গম, ৩০০০ টন সূর্যমুখী এবং ১০০০ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করেছিল তার প্রতিষ্ঠান!

আলেকসানদ্রোভিচ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খুবই খারাপ৷ আমরা জানি না কী হতে চলেছে৷ আগামী এক ঘণ্টার মধ্যে কী কী হতে চলেছে তা-ও বুঝতে পারছি না।’’

যুদ্ধ শুরুর আগে ৫৩৩ জনের গ্রাম ছিল ইয়াকভলিভকা। ১৩৩ জন প্রাণভয়ে গ্রাম ছেড়েছেন। কিন্তু পরে অন্য এলাকা থেকে কিছু মানুষ আশ্রয় নেয়ায় গ্রামের লোক সংখ্যা এখন ৪৩৬। বেঁচে থাকলে আবার নিজের গ্রামকে সুন্দর করে সাজাতে চান তারা। ৬৬ বছর বয়সি ভেরা বাদেঙ্কোর চাওয়া অবশ্য এত বড় কিছু নয়৷ তার ঘর এখন প্রায় ধ্বংস্তূপ৷ সুসময় এলে ঘরটা নতুন করে বানাবেন, সবার আগে ঠিক করবেন রান্নাঘরটা।

সূত্রঃ ডয়েচে ভেলে
আরএমএ/এসবি/এমএম