ঢাকা, বুধবার   ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩১

মারিউপোলে আত্মসমর্পণের জন্য রুশ আল্টিমেটামে সাড়া দেয়নি ইউক্রেন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৫ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২২ রবিবার

অবরুদ্ধ শহর মারিউপোলের অবশিষ্ট ইউক্রেনিয়ান সেনাদের আত্মসমর্পণের জন্য রাশিয়া সময়সীমা বেঁধে দেয়ার পরও এখনো তাতে কেউ সাড়া দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।

মস্কো বলছে, মারিউপোলের অবশিষ্ট ইউক্রেনিয়ান সেনাদের সবাই এখন এক বিশাল ইস্পাত কারখানার ভেতর অবস্থান নিয়ে রয়েছে। রাশিয়া আরও বলছে, মারিউপোল শহর এখন প্রায় পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে।

যদি মারিউপোলের পতন ঘটে, এটি হবে গত দুমাসের যুদ্ধে রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজয়।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আযভস্টল ইস্পাত কারখানার ভেতর এখন প্রায় আড়াই হাজার ইউক্রেনিয়ান সেনা আছে। সেখান থেকে তাদের বেরুবার পথ বন্ধ করে রেখেছে রুশ বাহিনী। বিবিসি অবশ্য এসব দাবির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি।

তবে মারিউপোলের মেয়রের একজন উপদেষ্টা টেলিগ্রামে এক পোস্টে জানিয়েছেন, তাদের বাহিনী এখনো প্রতিরোধ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

ইউক্রেনের একজন এমপি, ওলেক্সি গনচারেনকোও বিবিসিকে বলেছেন, মারিউপোলে ইউক্রেনের সৈন্যরা রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করবে না।

তিনি বলেন, "আমি গতকালই তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি জানি যে তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে।"

ইউক্রেনের উত্তরাঞ্চলের যুদ্ধে রাশিয়া তেমন সুবিধা করতে না পারার পর পূর্বের ডনবাস অঞ্চলের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছিল। তবে এর পাশাপাশি তারা দূরপাল্লার ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে রাজধানী কিয়েভে এবং অন্যান্য এলাকায় হামলা অব্যাহত রাখে।

মারিউপোলের সর্বশেষ অবস্থা

রাশিয়া দাবি করছে, তারা শহরটির বেশিরভাগ এলাকায় পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে মারিউপোলের আযভস্টল ইস্পাত কারখানা, যেটিকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইস্পাত শিল্প বলে গণ্য করা হয়, সেটি এখনো তারা দখল করতে পারেনি। অবশিষ্ট ইউক্রেনিয়ান যোদ্ধারা সেখানেই আছে।

রাশিয়া বলেছিল, যারা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আত্মসমর্পণ করবে, তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া হবে।

মস্কোর স্থানীয় সময় সকাল ছয়টার পর কয়েক ঘণ্টা ধরে রুশ বাহিনী বলছিল, তারা আযভস্টাল ইস্পাত কারখানার এলাকা থেকে বেরিয়ে এসে অস্ত্র সমর্পণ করলে তাদের প্রাণে মারা হবেনা।

রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল, যারা এভাবে আত্মসমর্পণ করবে, তাদেরকে জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যুদ্ধবন্দীর সব অধিকার দেয়া হবে।

আধ ঘণ্টা পর পর রুশ বাহিনী আত্মসমর্পণের এসব শর্ত তাদের প্রতিপক্ষকে জানাচ্ছিল।

রাশিয়া বলেছিল, যদি ইউক্রেনিয়ানরা এই প্রস্তাবে রাজী হয়, তাহলে রুশ বাহিনী ছয়টায় লাল পতাকা তুলবে এবং ইউক্রেনিয়ানরা তখন ইস্পাত কারখানার সীমানার কাছে এসে সাদা পতাকা তুলতে পারে।

তবে ইউক্রেনিয়ান কর্মকর্তারা এখনো পর্যন্ত এই প্রস্তাবে রাজী হয়েছেন বলে কোন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না।

মারিউপোলের পতন ঘটতে পারে, এমন কথা গত কদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল।

রুশ বোমা বর্ষণে শহরটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানে বিদ্যুৎ নেই, ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা নেই, পানি নেই। খাদ্য বা ওষুধেরও তীব্র সংকট। হাজার হাজার মানুষ এরই মধ্যে শহরটি ছেড়ে আরও উত্তর দিকে পালিয়ে গেছে।

এর আগে রুশ টেলিভিশনে দেখানো হয়েছিল মারিউপোলের ইউক্রেনিয়ান মেরিন সেনারা আত্মসমর্পণ করছে। তবে ইউক্রেনিয়ানরা উল্টো দাবি করছিল, মেরিন সেনারা আত্মসমর্পণ করেনি, বরং তারা রুশ সৈন্যদের বাধা অতিক্রম করে আযভ ব্যাটালিয়নের সঙ্গে গিয়ে যোগ দিয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি স্বীকার করেছেন যে, শহরটির খুব অল্প অংশই এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।

মারিউপোল দখল কেন রাশিয়ার জন্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ

মারিউপোল হচ্ছে আযভ সাগর অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বন্দর। এটি লৌহ এবং ইস্পাত শিল্পের বড় কেন্দ্র। ইউক্রেনের বেশিরভাগ ইস্পাত, কয়লা এবং শস্য এই বন্দর দিয়েই রফতানি করা হয়। এটি হারালে ইউক্রেনের অর্থনীতির জন্য সেটি হবে আরেকটি বড় আঘাত।

বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্রাংক গার্ডনার বলছেন, মানচিত্রের দিকে তাকালে মনে হবে মারিউপোল বেশ ছোট্ট একটা জায়গা। কিন্তু রুশদের কাছে এর বিরাট গুরুত্ব আছে। রাশিয়া যদি এই শহর দখল করতে পারে, তাহলে ক্রাইমিয়া থেকে রাশিয়া পর্যন্ত তারা একটি সরাসরি স্থল সংযোগ স্থাপন করতে পারবে। এটি হবে রাশিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত এবং সামরিক বিজয়।

মারিউপোলে ইউক্রেনের একটি মিলিশিয়া ইউনিট আছে, যার নাম আযভ ব্রিগেড। এই মিলিশিয়া বাহিনীতে অনেক চরম দক্ষিণপন্থীর পাশাপাশি নব্য নাৎসীরাও আছে। যদি রাশিয়া আযভ ব্রিগেডের যথেষ্ট সংখ্যাক সদস্যকে জীবিত গ্রেফতার করতে পারে, তাদেরকে তখন রাশিয়ার সরকারী গণমাধ্যমে দেখিয়ে তারা ফায়দা নিতে পারবে। ইউক্রেন সরকারের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারবে। যদিও তারা ইউক্রেনের যুদ্ধরত বাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র, তারপরও এটি রাশিয়ার প্রপাগান্ডার কাজে এক বিরাট অস্ত্র।

প্রেসিডেন্ট পুতিন কৃষ্ণসাগরের উপকুলকে নোভোরুশিয়া, বা নতুন রাশিয়ার অংশ বলে মনে করেন, এই অঞ্চল উনিশ শতকের রুশ সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। প্রেসিডেন্ট পুতিন এই সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে চান। মারিউপোল তার সেই পরিকল্পনার অংশ, কাজেই সেদিক থেকেও রাশিয়ার কাছে মারিউপোলের গুরুত্ব আছে। সূত্র- বিবিসি বাংলা
কেআই//