পাহাড়ী ঢলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, দিশেহারা কৃষকরা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:৫০ পিএম, ২২ এপ্রিল ২০২২ শুক্রবার

সোনালী ধানে যখন বিস্তীর্ণ ফসলী জমি ভরে উঠেছিল তখনি আকস্মিক পাহাড়ী ঢলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এতে কেড়ে নিয়েছে কৃষকের হাসি। বাধ্য হয়ে কাঁচা-পাকা ধান কেটে নিতে হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার হাওরাঞ্চলের কৃষকদেরকে। কাঙ্খিত ফলন থেকে বঞ্চিত হওয়ায় কৃষকের চোখে-মুখে এখন শুধুই হতাশার ছাপ।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১ লক্ষ ১১ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে হাওর এলাকায় আবাদ হয়েছে ৩২ হাজার ২ হেক্টর জমিতে। আকস্মিক পানি বেড়ে যাওয়ায় নাসিরনগর উপজেলার রঙ্গন ও মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষা নিচু জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
নাসিরনগর সদর, ভলাকুট, বুড়িশ্বর ও গোয়ালনগরসহ অন্তত ৬টি ইউনিয়নের হাওর এলাকার জমিগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে কৃষকরা নির্ধারিত সময়ের আগেই জমির কাঁচা ও আধা পাকা ফসল কাটতে বাধ্য হচ্ছে। কয়েকদিন পরেই ফসল ঘরে তোলার কথা থাকলেও আকস্মিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবাদকৃত বিআর-২৮ ও ২৯ ধান তলিয়ে যাওযায় বাধ্য হয়েই জমির ধান কেটে নিচ্ছেন।
কৃষকরা জানিয়েছেন কানি প্রতি জমি আবাদ করতে তাদের খরচ হয়েছে ৫/৬ হাজার টাকা। অসময়ে ধান কাটতে বাধ্য হওয়ায় কাঙ্খিত ফলন পাবেন না। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন তারা দিশেহারা।
কৃষক বাবুল মিয়া বলেন, অনেক ধার দেনা করে ২০ কানি জমিতে বিআর-২৮ ধান চাষ করেছি। জমি থেকে প্রায় পাঁচশ মণ ধান পাওয়ার কথা থাকলেও অসময়ে কেটে ফেলায় এখন এক থেকে দেড়শ মণ ধান পাওয়া যেতে পারে।
কৃষক ইউসুফ মিয়া বলেন, কানি প্রতি ১৫ থেকে ১৮ মণ ধান পাওয়ার কথা থাকলে এখন পাওয়া যাবে অর্ধেকেরও কম। তাছাড়া ধান কাঁচা কাটতে প্রতি শ্রমিককে দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা করে। ফলে আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
কৃষক ইসমাইল মিয়া বলেন, প্রতিবছর চলতি সময়ের চেয়ে দুই সপ্তাহ পর পানি আসে কিন্তু এবার আকস্মিকভাবে আগেই পানি চলে আসায় কয়েক হাজার কানি-ধানি জমির ফসল হুমকির মুখে।
নবী নেওয়াজ মিয়া নামে এক কৃষক জানান, ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তিনি মেদিনী হাওরে নিজের জমিতে ধান চাষ করেছেন। গত কয়েকদিন ধরে হাওরে পানিতে তার অধিকাংশ জমি তলিয়ে গেছে। কিছু ধান আধাপাকা অবস্থাতেই কেটেছেন তিনি।
কৃষক হরিলাল দাস জানান, কৃষিকাজ করেই তার পরিবার চলে। এবারও হাওরের ১০ কানি জমিতে তিনি ধান চাষ করেছেন। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ধান কাটতে পারেননি। ১০ কানি জমিতে এবার ২০০ মণ ধান পাওয়ার আশা ছিল তার।
নাসিরনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাইদ তারেক বলেন, পানিতে তলিয়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আউশ আবাদ প্রণোদনার আওতায় আনা হবে। তবে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ করতে কিছুটা সময় লাগবে। অন্যদিকে কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নাসিরনগরের বিভিন্ন হাওর ও নদীতে পানি বেড়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান শাওন বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পানি বাড়তে থাকায় হাওরে পানি বেড়েছে। অনেক স্থানে ধানি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করছি। তাদেরকে সহায়তা করা হবে।
কেআই//