ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪,   বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

মেঘালয়ের পথে পথে (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন  

প্রকাশিত : ০৩:৩৭ পিএম, ১৭ মে ২০২২ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৩:৩৯ পিএম, ১৭ মে ২০২২ মঙ্গলবার

ভারতের কাশ্মীরকে পৃথিবীর স্বর্গ বলা হলেও তার চেয়ে কোনও অংশে কম নয় দেশটির উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্য মেঘালয়। যেখানে প্রতিনিয়ত মেঘের আনাগোনা; প্রাকৃতিক ঝর্ণা আর পাহাড়ের মাঝে মেঘের খেলা। তবে রাজ্যের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় চেরাপুঞ্জি, যেখানে রয়েছে সেভেন সিস্টার্স ফলস এবং নোহকালিকাই ফলস। 

প্রায় ১০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের মাথা থেকে অনেক নিচে সটান আছড়ে পড়ছে ঝর্ণার পানি। নিচে বিশাল উন্মুক্ত অঞ্চল। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পাথুরে পাহাড়ের মাথা সবুজ চাদরে ঢাকা।

এটি ভারতের দীর্ঘতম নিমজ্জিত জলপ্রবাহ, যা মেঘালয়ের পূর্ব খাশি পাহাড়ে অবস্থিত। এর অনেক নিচে সৃষ্টি হয়েছে ছোট জলাশয়। স্নিগ্ধ নীল তার রঙ। হাজার সিঁড়ি বেয়ে নেমে যাওয়া যায় জলাশয়ের কাছে। বর্ষায় ঝর্ণাটি জলরাশিতে ভরে ওঠে। নোহকালিকাই ফলসের কাছেই আছে বাংলাদেশ ভিউ পয়েন্ট। পরিষ্কার আবহাওয়ায় সেখান থেকে দেখা যায় বাংলাদেশ। 

চেরাপুঞ্জির নোহকালিকাই ফলস থেকে মাত্র দশ কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত সেভেন সিস্টার্স ফলস। যেখানে পাশাপাশি সাতটি ঝর্ণা বয়ে চলেছে আপন গতিতে।  তবে বর্ষাকাল ছাড়া অন্য মৌসুমে সাতটি ঝর্ণা একসাথে দেখার সৌভাগ্য নাও মিলতে পারে। 

এছাড়া চেরাপুঞ্জির আশপাশে রয়েছে ইকো পার্ক, গুহা, পাহাড়ের ভিউপয়েন্টসহ ছোটখাটো আরও কিছু ঝর্ণা। সেখানেও মনোরম সময় কাটানোর ব্যবস্থা রয়েছে।

শিলংয়ের আর একটি দর্শনীয় স্থান হল উমিয়াম লেক। এটিকে স্থানীয় লোকজন বড়াপানি নামেই বেশি চেনেন। এটি মূলত পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে অনেকটা নিচে নেমে একটি বিশাল লেক। যেখানে প্রকৃতি ও স্বচ্ছ পানির একাগ্রতা রাঙিয়ে তুলবে আপনার হৃদয়কে। টলটলে স্বচ্ছ পানি আর চারিদিকে অপরূপ প্রকৃতিতে ঘেরা পাহাড় আপনার মনকে করে তুলবে সিন্ধ। এই লেকের কোল ঘেঁষে রয়েছে খোলা মাঠ, যেখানে বসে এক বিকাল কাটিয়ে দেওয়া যাবে নিমেষেই।   

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং নগরের ১৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত এই জলাধার। ১৯৬০ এর দশকে উমিয়াম নদীতে বাঁধ দিয়ে এর সৃষ্টি করা হয়েছিল। হ্রদ এবং বাঁধের অববাহিকা অঞ্চল প্রায় ২২০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত। 

মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে রয়েছে ডন বস্কো মিউজিয়াম। এই মিউজিয়াম হল শিলংয়ের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ, যেখানে উত্তর-পূর্ব ভারতের আদিবাসীদের সমৃদ্ধ এবং বহু-সাংস্কৃতিক জীবনধারা সম্পর্কিত বিভিন্ন জিনিস সংরক্ষণ করা রয়েছে। 

ডন বস্কো মিউজিয়াম শিলংয়ের মাওলাই ফুদমুরিতে অবস্থিত। এর স্থাপত্য মন ছুঁয়ে দেয় এবং শিলংয়ের স্থাপত্যের গর্বের সঙ্গে প্রতিফলন ঘটায়। সাংস্কৃতিক সচেতনতা এবং বুদ্ধিমত্তা ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই মিউজিয়াম।

জাদুঘরটি বিভিন্ন দিকের ১৬টি গ্যালারি প্রদর্শন করে, যার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত যেমন কৃষি গ্যালারি বিভিন্ন চাষের বিস্তারিত বিবরণ প্রদর্শন করে, আর্ট গ্যালারি যা বিরল চিত্রকর্মের সংগ্রহ প্রদর্শন করে, অস্বাভাবিক নিদর্শন এবং দেশীয় বস্তু, ঝুড়ি গ্যালারি তার অসংখ্য ঝুড়ি সংগ্রহের জন্য পরিচিত।

জাদুঘরটি অলঙ্কার এবং পোশাকের গহনার গ্যালারি, মাছ ধরা এবং শিকারের গ্যালারি, খাদ্য গ্যালারি এবং একটি স্কাই ওয়াকারের অনন্য সংগ্রহ প্রদর্শন করে। এর ছাদ থেকে দেখা যায় আসাধারণ সৌন্দর্যে ঘেরা প্রায় সমগ্র শিলংকে। 

এর আগে বাংলাদেশের সিলেট জেলা থেকে তামাবিল-ডাউকি বর্ডার হয়ে শিলং এ যাওয়ার পথে দেখা মিলবে ছোট বড় অসংখ্য ঝর্ণার। এর মাঝে অন্যতম বড়হিল ফলস। 

এটি বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা একটি ঝর্ণা। উমক্রেম ফলস থেকে একটু সামনেই এর অবস্থান। ঝর্ণাটির সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।

প্রচণ্ড পানির স্রোত পাহাড়ের গা বেয়ে নিচে আছড়ে পড়ছে। এর অবস্থান একেবারেই পথের ধারে। যে কারণে সেতুর ওপর দাঁড়িয়েই উপভোগ করা যায় এর সৌন্দর্য। সেতুর একপাশে ঝর্ণা আর সেই ঝর্ণা ফেনিল পানি বয়ে চলেছে সেতুর নিচ দিয়ে অপর প্রান্তে। এই ঝর্ণার পানিই মিশেছে  বাংলাদেশের গোয়াইন নদীতে। আর এই ঝর্ণার সৌন্দর্য কিন্তু সীমান্তের এপার বাংলাদেশের পানতুমাই থেকেও উপভোগ করা যায়। 

আরএমএ