ইউক্রেনে কী পরিমাণ খাদ্যশস্য আটকে আছে?
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:৩১ পিএম, ২৪ জুলাই ২০২২ রবিবার

ইউক্রেনের বন্দরগুলোতে আটকে থাকা খাদ্যশস্য সারাবিশ্বে সরবরাহের জন্য জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় সম্প্রতি একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। যদিও চুক্তি সই হওয়ার পরদিনই ইউক্রেনের বৃহৎ একটি বন্দর বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে।
বন্দর শহর ওডেসাতে চালানো এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে হওয়া এই সমঝোতার ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের সংশয় দেখা দিয়েছে।
এসব বন্দরগুলোর ওপর রাশিয়ার অবরোধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম দ্রুতগতিতে বাড়ছিলো এবং দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিচ্ছিলো।
কী পরিমাণ খাদ্যশস্য আটকে আছে?
রপ্তানির জন্য প্রস্তুত থাকা প্রায় বিশ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য আটকা পড়ে আছে ইউক্রেনে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন চলতি বছরের ফসল তোলার পর এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৭৫ মিলিয়ন টন।
দেশটি বছরে প্রায় ৮৬ মিলিয়ন টনের মতো খাদ্যশস্য উৎপাদন করে যার ত্রিশ ভাগ তোলাই হয় না বলে জানিয়েছেন খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ লরা ওয়েলেসলি। এবার যুদ্ধের কারণে ফসল তোলার পরিমাণ আরও কম হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের গম কোথায় যায়?
ইউক্রেনের গমের বড় ক্রেতা মিশর। দেশটি ৩৬ লাখ টনের বেশি আমদানি করে ইউক্রেন থেকে।
দ্বিতীয় বড় ক্রেতা হলো ইন্দোনেশিয়া যারা বছরে ৩২ লাখ টন গম আমদানি করে। আর তৃতীয় বড় ক্রেতা দেশ হলো বাংলাদেশ, যার আমদানির পরিমাণ হলো ২৩ লাখ টন।
এর বাইরে দশ লাখ টনের সামান্য বেশি পরিমাণ আমদানি করে তুরস্ক, ইয়েমেন ও ফিলিপাইন। এছাড়া মরক্কো, তিউনিসিয়া, লিবিয়া ও ইথিওপিয়াও ইউক্রেন থেকে গম নিয়ে থাকে।
শস্য ঘাটতি অন্য দেশগুলোতে যেভাবে প্রভাব ফেলেছে
ইউক্রেন বিশ্বের চতুর্থ খাদ্যশস্য রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্বের ৪২ ভাগ সূর্যমুখী তেল উৎপাদন হয় এই দেশটিতে। এছাড়া মোট ভুট্টার ১৬ ভাগ ও ৯ ভাগ গম তারাই উৎপাদন করে। এর বাইরে বিশ্বে গমের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক রাশিয়া থেকে রপ্তানি কমে গেছে এই যুদ্ধের জের ধরে।
যদিও রাশিয়ার কৃষির ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা পশ্চিমারা দেয়নি, কিন্তু পেমেন্ট সিস্টেমে প্রভাব পড়ার পাশাপাশি ইন্স্যুরেন্স ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে রাশিয়ার রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।
রাশিয়ার কৃষিপণ্যবাহী জাহাজগুলোকেও অবশ্য ইউরোপের বন্দরগুলোতে এখনো কোন বাধা দেয়া হচ্ছেনা।
আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক জানিয়েছে আফ্রিকার প্রয়োজনীয় গমের ৪০ ভাগই সরবরাহ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন।
কিন্তু যুদ্ধের কারণে প্রায় তিন কোটি টন খাদ্যের ঘাটতি তৈরি হয়েছে আফ্রিকায়। যার ফলে পুরো মহাদেশজুড়ে খাদ্যের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ।
তবে সর্বশেষ যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো সেই খবরে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমতে শুরু করেছে।
নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পরিকল্পনা কী
কৃষ্ণসাগরে সামুদ্রিক করিডোর উন্মুক্ত করতে জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় চুক্তি করেছে ইউক্রেন ও রাশিয়া।
কর্মকর্তারা বলছেন এ পরিকল্পনায় আছে:
•যেসব বন্দরে মাইন পোতা আছে সেখানে শস্যবাহী জাহাজগুলোকে গাইড করে নিয়ে যাবে ইউক্রেনের জলযান
•পণ্য জাহাজীকরণের সময় যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে রাশিয়া
•জাহাজে অস্ত্র আনার বিষয়ে রাশিয়ার উদ্বেগের কারণে এটি পর্যবেক্ষণ করবে তুরস্ক
•কৃষ্ণসাগর দিয়ে রাশিয়া শস্য ও সার রপ্তানি করতে পারবে
ইউক্রেনের রাশিয়ার হামলার পর থেকেই কৃষ্ণসাগর দিয়ে চলাচলকারী জাহাজের ইন্স্যুরেন্স খরচ অনেক বেড়ে গেছে।
তবে এখন ইন্স্যুরেন্স প্রতিষ্ঠান লয়েডস মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন বলছে যে চুক্তির কারণে এ খরচ কমে আসা উচিত।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসবি/