ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

বাংলা ভাষাভাষীর কাছে আবেগের নাম ভূপেন হাজারিকা

স্মৃতি মণ্ডল

প্রকাশিত : ০১:৪৮ পিএম, ৩ আগস্ট ২০২২ বুধবার | আপডেট: ০১:৫৮ পিএম, ৩ আগস্ট ২০২২ বুধবার

ভূপেন হাজারিকা- যার কণ্ঠে সুরের মূর্চ্ছনায় মানবতাবাদী সঙ্গীত মন ছুঁয়ে গেছে সুরপ্রেমীদের। বাংলা, অসমীয়া, হিন্দিসহ বিভিন্ন ভাষায় তার এক একটি গান জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গেছে। কিংবদন্তীতূল্য ভূপেন হাজারিকা নামটি প্রোথিত হয়েছে মানুষের হৃদয়ে।

‘মানুষ মানুষের জন্য’, ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি’, ‘হে দোলা হে দোলা’, ‘মেঘ থম থম করে’, ‘বিস্তীর্ণ দুপারের’, ‘গঙ্গা আমার মা’, ‘আমি এক যাযাবর’- এমন অসংখ্য কালজয়ী গানের জন্য বাংলা ভাষাভাষীর মানুষের কাছে ভূপেন হাজারিকা এক আবেগের নাম।

আসামের গোহাটির জালুকবাড়িতে রয়েছে কিংবদন্তি এই শিল্পীর সমাধি। জালুকবাড়ি স্থানটিতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল শিল্পীর।বাহারি ফুল আর গাছপালায় শোভিত সমাধিক্ষেত্রে ঢুকতেই কানে আসে শিল্পীর কণ্ঠ। একের পর এক গান বাজছে। ভূপেন হাজারিকার প্রতিমূর্তি এবং সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা জানাতে দেশ-বিদেশ থেকে এখানে আসেন সঙ্গীতপ্রেমিরা। সমাধিক্ষেত্র ঘিরে গড়ে উঠেছে মিউজিয়াম। শিল্পীর স্মৃতি বিজড়িত ছবিতে সাজানো মিউজিয়ামের দেয়াল। ভূপেন হাজারিকার জামা কাপড়, জুতো, টুপিসহ ব্যবহার করা বিভিন্ন জিনিস স্থান পেয়েছে মিউজিয়ামে।

১৯২৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের আসাম প্রদেশের সদিয়াতে জন্ম ভূপেন হাজারিকার।বাবা নীলকান্ত হাজারিকা ও মা শান্তিপ্রিয়া হাজারিকার দশ সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান ভূপেন হাজারিকা।

১৯৪০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন তেজপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। আসামের গোহাটির কটন কলেজ থেকে ১৯৪২ সালে ইন্টারমিডিয়েট আর্টস, কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ সালে বিএ এবং ১৯৪৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাস করেন।নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। গবেষণার বিষয় ছিল ‘প্রাপ্তবয়ষ্কদের শিক্ষায় শ্রবণ-দর্শণ পদ্ধতি ব্যবহার করে ভারতের মৌলিক শিক্ষাপদ্ধতি প্রস্তুতি সংক্রান্ত প্রস্তাব’।  

ছোটবেলা থেকে আসামের লোকজ গানের সাথে পরিচিত ভূপেন হাজারিকা ১০ বছর বয়স থেকেই গান লিখে সুর দিতেন। ১২ বছর বয়সে অসমীয়া ছবি ইন্দুমালতীতে গান করেন ভূপেন। গানের পাশাপাশি শিশু শিল্পী হিসেব যুক্ত হন অসমের চলচ্চিত্রে। পরবর্তীতে হয়ে উঠেন প্রথম সারির পরিচালক।  

আসাম, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মানুষের কাছে তুমুল জনপ্রিয় ভূপেন হাজারিকা।মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসা ধ্বণিত হয়েছে তার কণ্ঠে, একই সাথে সামাজিক শোষণ, নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সুর তুলেছেন।

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে প্রিয়ংবদা প্যাটেলের সাথে প্রথম পরিচয় এবং ১৯৫০ সালে বিয়ে করেন প্রিয়ংবদাকে। তাদের একমাত্র সন্তান তেজ হাজারিকা।বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ভূপেন হাজারিকা যুক্ত হয়েছিলেন রাজনীতিতেও। শিক্ষকতা করেছেন গোহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সারাজীবন অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন ভূপেন হাজারিকা। ১৯৭৫ সালে ২৩তম জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ আঞ্চলিক চলচ্চিত্র ‘চামেলী মেমসাহেব’ ছবির সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।১৯৭৭ সালে ‘পদ্মশ্রী’ উপাধিতে ভূষিত হন। দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পান ১৯৯২ সালে। প্রথম ভারতীয় হিসেবে ১৯৯৩ সালে জাপানে এশিয়া প্যাসিফিক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘রুদালী’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার অর্জন করেন।২০০১ সালে ‘পদ্মভূষণ’ ও ২০০৯ সালে ‘অসমরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হন। ২০১৯ সালে মরনোত্তর ‘ভারতরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হন।

২০১১ সালের ৫ নভেম্বর এই ভুবনের মায়া ছেড়ে অন্যলোকে পাড়ি দেন ভূপেন হাজারিকা। উত্তর পূর্বের এক রাজ্য থেকে ভারতরত্ন হয়ে উঠা মায়াভরা উদাত্ত কণ্ঠের ভূপেন হাজারিকা শ্রোতাদের অন্তরে আছেন, থাকবেন।

এএইচএস