ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

২০০৩ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২০৯৭

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:৪১ পিএম, ২০ নভেম্বর ২০২২ রবিবার

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে ২০০৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৯৭ জন মারা গেছেন, আহত  হয়েছেন ১২৮৬ জন। নিহতদের মধ্যে ১৬.৫৪ শতাংশের (৩৪৭ জন) বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছর এবং ৭৩.১০ শতাংশের (১৫৩৩ জন) বয়স ১৮ থেকে ৫০ বছর।

দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ৭৬৪ জন (৩৬.৪৩ শতাংশ) শিক্ষার্থী। আর মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মারা গেছেন ৯২ জন পথচারী, যা মোট নিহতের ৪.৩৮ শতাংশ।

গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি এ প্রতিবেদনটি রোববার (২০ নভেম্বর) প্রকাশ করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং টেলিভিশন চ্যানেলে প্রকাশিত সংবাদের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরণ: 
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্য যানবাহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ৩৭৪টি (১৮.৬৭%), নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ৬২৯টি (৩১.৪০%), অন্য যানবাহনে চাপা খেয়ে ও ধাক্কার ঘটনা ঘটেছে ৯৫৮টি (৪৭.৮২%)। আর অন্যান্য কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪২টি (২.০৯%)।

দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যারা: 
ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮৩৭টি (৪১.৭৮%) দুর্ঘটনার জন্য মোটরসাইকেল চালকরা এককভাবে দায়ী। বাসচালক দায়ী ১৬৯টির জন্য (৮.৪৩%), ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, ট্রাক্টর, ট্রলি ও লরিচালকরা দায়ী ৭৪২টি দুর্ঘটনার (৩৭.০৪%) জন্য, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস চালকরা দায়ী ৫৬টির জন্য (২.৭৯%), থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক, অটোরিকশা, অটোভ্যান, নসিমন, ভটভটি ও টমটম) চালকরা দায়ী (১১৯টির (৫.৯৪% ) জন্য, প্যাডেল রিকশা ও বাইসাইকেল চালকরা দায়ী ১৭টির (০.৮৪%)  জন্য এবং পথচারীরা দায়ী ৬৩টির (৩.১৪%) জন্য।

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরণ: 
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৬৯৫টি (৩৪.৬৯%) জাতীয় মহাসড়কে, ৮৭৯টি (৪৩.৮৮%) আঞ্চলিক সড়কে, ৩২৯টি (১৬.৪২%) গ্রামীণ সড়কে এবং ১০২টি (৫.০৯%) শহরের রাস্তায় সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহনের সংখ্যা: 
দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহনের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৬১টি। এর মধ্যে মোটরসাইকেল ২ হাজার ১৩৩টি, বাস ২১৪টি, পণ্যবাহী যান (ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ) ৭৫৬টি, বিশেষ যান (ডাম্পট্রাক, ট্রাক্টর, ট্রলি ও লরি) ১২৯টি, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার ১০৩টি, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক, অটোরিকশা, অটোভ্যান, নসিমন, ভটভটি ও টমটম) ২০৭টি এবং প্যাডেল রিকশা ও বাইসাইকেল ১৯টি।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণ: 
১) কিশোর-যুবকদের বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানো।

২) অতি উচ্চগতির মোটরসাইকেলের সহজলভ্যতা ও চালনায় বাধাহীন সংস্কৃতি।

৩) মোটরযান চালকদের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা।

৪) দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা।

৫) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির শিথিলতা।

৬) বাস, ট্রাক, পিকআপ, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসসহ দ্রুতগতির যানবাহনের বেপরোয়া গতি।

৭) চালকদের অদক্ষতা ও অস্থিরতা।

৮) স্বল্পগতির থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিকশা, নসিমন, ভটভটি ইত্যাদি) অদক্ষ হাতে চালানো।

৯) সড়ক-মহাসড়কে ডিভাইডার না থাকা।

১০) মোটরসাইকেলের বিজ্ঞাপনে কিশোর-যুবকদের গতির প্রতি আকৃষ্ট করতে উত্তেজনাকর ভাষা-ভঙ্গি ব্যবহার।

১১) সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা না থাকা।

১২) পারিবারিকভাবে সন্তানদের বেপরোয়া আচরণকে প্রশ্রয় দেওয়া এবং

১৩) দেশে কলুষিত রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় কিশোর-যুবকদের মধ্যে বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানোর সংস্কৃতি গড়ে ওঠা ইত্যাদি।

দুর্ঘটনা রোধে রোড সেফটির  সুপারিশ: 
১) কিশোর-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

২) মাত্রাতিরিক্ত গতিসম্পন্ন মোটরসাইকেল বিক্রয় ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৩) দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়াতে হবে।

৪) গণপরিবহন চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে;

৫) বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

৬) ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

৭) মোটরসাইকেল ও স্বল্পগতির যানবাহনের জন্য মহাসড়কে সার্ভিস রোড নির্মাণ করতে হবে। ;

৮) পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে সড়ক বিভাজন নির্মাণ করতে হবে।

৯) যানবাহনের গতি মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।

১০) গণপরিবহন উন্নত ও সহজলভ্য করে মোটরসাইকেল নিরুৎসাহিত করতে হবে।

১১) রেল ও নৌ-পথ সংস্কার এবং বিস্তৃত করে সড়ক থেকে ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের মতো পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ কমাতে হবে।

১২) সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে এবং

১৩) ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

উল্লেখ্য, গত বছরের (২০২১) জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে মোট ১৬৫৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৭৫৮ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।

এনএস//