ঢাকা, শনিবার   ০৪ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২১ ১৪৩১

বোরো মওসুমের শুরুতে সুনামগঞ্জে তীব্র সেচ সংকট

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:৫৯ এএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার

সুনামগঞ্জে হাওরে বিল সেচে ও হাওরের বাঁধ কেটে মাছ ধরায় বোরো মওসুমের শুরুতেই সেচ সংকটের তীব্র আকার ধারণ করেছে। কৃষকরা পানির অভাবে হালচাষ ও চারা রোপণ করতে পারছেন না। 

বিএডিসি সেচ প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী জানান, বাজেট না থাকায় কৃষকের সেচের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না তারা। 

সরেজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জের দেখার হাওরে পর্যাপ্ত পানি ছাড়াই শুষ্ক জমিতে হালচাষ করছেন কৃষক। কিন্তু পানির অভাবে জমিতে পর্যাপ্ত কাদা তৈরি হচ্ছে না। হাওরের উঁচু জমির আশপাশ পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। পানির অভাবে জমি ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছে। কৃষকরা দীর্ঘ ফিতা পাইপ দিয়ে কোন রকমে জমি ভিজিয়ে হালচাষের উপযোগি করার চেষ্টা করছেন। 

সেচ সংকটের কারণে জমি হালচাষ করতে না পারায় বীজতলা থেকে ধানের চারা উত্তোলন করছেন না। অসময়ে হাওরের পানি কমে যাওয়ায় জলাশয় ও খালবিল শুকিয়ে গেছে। আগেভাগে পানি সরে যাওয়ার চিত্র শুধু দেখার হাওরেই নয় হালিরহাওর, শনিরহাওর,পাকনার হাওর, করচার হাওর, ছায়ার হাওর, নলুয়ার হাওরের মাটিয়ান হাওরসহ বড়বড় সকল হাওরের উঁচু জমিতে সেচের পানির সংকট দেখা দিয়েছে। 

ফলে  সদর, শান্তিগঞ্জ, জামালগঞ্জ, দিরাই, জগন্নাথপুর, বিশ্বম্ভরপুর,দোয়ারাবাজারসহ জেলার ৭টি উপজেলার হাজার হাজার কৃষক বোরো আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। 

সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের দরিয়াবাজ গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, গেল বারের থেকে এবার হাওরের উঁচু জমির পানি দ্রুত নেমেছে। কারণ, এবছর পরপর তিনবার বন্যার কারণে জমিতে কোন বনচালিয়া হয়নি। তাই দ্রুত সরে গেছে পানি। এখন হালচাষ করা যাচ্ছেনা। 
সুবেল মিয়া বলেন, গেলবার পৌষমাস পর্যন্ত জমিতে পানি ছিল এবার অগ্রাহায়নের শেষভাগেই জমির পানি নেমে গেছে।  

ইছাঘড়ি গ্রামের আলী হোসেন বলেন, জেলেরা চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরার ফলে ক্ষেতের আইল নষ্ট হয়ে সমান হয়ে গেছে তাই কোন জমিতে পানি আটকে থাকেনি। 

বেতগঞ্জ এলাকার কৃষক বিজন মিয়া বলেন, এবছর দেখার হাওরের তীব্র সেচ সংকট দেখা দিয়েছে। হাওরের উঁচু জমি পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। কোন রকমে হালচাষ দিয়ে চারা রোপণ করতে পারলেও পরে আর পানি পাওয়া যাবে না। 

জগন্নাথপুর গ্রামের কৃষক আবু বকর বলেন, সারা হাওর এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে অথচ কৃষি বিভাগের কোন খবর নেই। 

বড়দই বিলের বাঁধ কেটে মাছ ধরার কথা অস্বীকার করে ইজারাদার সৈয়দ মনোয়ার বলেন, বাধ কেটে বিলের মাছ ধরা হয়নি। এবছর বন্যার কারণে ভাঙ্গা বাধ দিয়ে এমনিতে পানি নদীতে চলে গেছে। কৃষকরা সময় মতো খেয়াল না করায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। 

সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল হক বলেন, এবছর তিনবার বন্যার কারণে হাওরের জলজ উদ্ভিদ হয়নি ও জেলেরা বাঁধ কেটে মাছ ধরায় হাওরের উঁচু জমির পানি দ্রুত নেমে গেছে। এছাড়া কার্তিক মাস থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মাটি শুকিয়ে গেছে। 

সুনামগঞ্জ বিএডিসি সেচের সহকারী প্রকৌশলী কাজী হুসনে আরা রাফি জানান, বাজেট ও মেশিনারিজ সংকটের কারণে সেচ সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দাবি করেন, এখনও সেচ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেনি। 

চলতি বছর ২ লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

এএইচ