ঢাকা, রবিবার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

১২৬ বছরের তরুণ স্বামী শিবানন্দ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৫:০৪ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০২৩ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৫:০৫ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০২৩ বৃহস্পতিবার

১২৬ বছর বয়সেও সুঠাম চেহারায় দিব্যি হেঁটে বেড়াচ্ছেন! শুনতে অবাক লাগলেও স্বামী শিবানন্দ এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন। তার নামটি এখন স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের মুখে মুখে। মানুষের গড় আয়ুকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে সুস্থভাবে বেঁচে আছেন এই বয়সেও। তাকে ভক্তি করে অনেকেই ডাকেন বাবা শিবানন্দ আবার কেউ ডাকেন যোগগুরু কেউ ডাকেন যোগদা বলে।

শিবানন্দের জন্ম ১৮৯৬ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশের হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার হরিতলা গ্রামে। জন্মতারিখ অনুযায়ী তিনি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের চেয়েও পাঁচ মাসের বড়। আরো অবাক ব্যাপার তিনি দেখেছেন ৩ শতক। এই প্রবীণ বয়সে এসে তিনি ভূষিত হয়েছেন বিরল সম্মানে। সম্প্রতি ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ লাভ করেন তিনি। তাকে বলা হয়েছে বিশ্বের ‘প্রবীণতম’ যোগসাধক। 

বিষয়টি যত না চমকপ্রদ, এর চেয়েও বেশি চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে যেদিন তার হাতে পদকটি তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে নাম ঘোষণা হতেই খালি পায়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকে এগিয়ে যান শিবানন্দ। পরনে সাদা ধুতি এবং কুর্তা। একেবারেই সাদাসিধে এক বৃদ্ধ অথচ পদক্ষেপে তার ছাপ নেই। তিনি এগিয়ে এসে হাঁটু গেড়ে বসে প্রণাম করেন নরেন্দ্র মোদীকে। এ সময় মোদীকেও মাথা নোয়াতে দেখা যায়। এরপর রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকেও নতজানু হয়ে প্রণাম করেন এই যোগসাধক। রাষ্ট্রপতিও আসন ছেড়ে উঠে এসে তাকে উঠে দাঁড়াতে সহায়তা করেন। এই ঘটনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রায় সবাই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে শিবানন্দকে শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি মঞ্চের মাঝখানে যান। সেখানেও একইভাবে হাঁটু গেড়ে বসে তিনি সবাইকে প্রণাম করেন। 

যোগশাস্ত্রে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য পদ্মশ্রী পুরস্কার এদিন তার হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ সময় তার অনাড়ম্বর জীবনশৈলী নজর কাড়ে সবার।

শিবানন্দের জীবনী থেকে জানা যায়, তার বাবা শ্রীনাথ গোস্বামী, মা ভগবতী দেবী মুষ্টিভিক্ষা করে একসময় জীবন ধারণ করতেন। চরম দারিদ্র্যের কারণে ৪ বছর বয়সে শিবানন্দকে বাবা-মা নবদ্বীপের বিখ্যাত সন্ন্যাসী স্বামী ওঙ্কারানন্দের কাছে দিয়ে দেন। দুই বছর পর ৬ বছর বয়সে সন্ন্যাসীর সাথে বাড়ি ফিরে এসে তিনি জানতে পারেন তার দিদি না খেতে পেয়ে মারা গেছেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বাড়ি ফিরে আসার ৭ দিন পর মা-বাবা একই দিনে মারা যান। পরে তিনি স্বামী ওঙ্কারানন্দের সঙ্গে ভারতের নবদ্বীপ চলে যান। তখন ১৯০১ সাল। সেখানে শুরু হয় পড়াশোনা। পরে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। ১৯২৫ সালে তিনি বিলেত যান উচ্চশিক্ষার জন্য। সেখান থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯২৫ সালে শিবানন্দ বিশ্বভ্রমণ শুরু করেন। টানা ৩৪ বছর তিনি বিদেশে ঘুরেছেন। ১৯৫৯ সালে গুরুর নির্দেশে কাশীধামে ফিরে সাধনজগতে ডুব দেন। যোগসাধনার পাশাপাশি চালিয়ে যেতে থাকেন নিঃস্বার্থ সেবামূলক কাজ। দীর্ঘ অধ্যাবসায় ও আত্মত্যাগে ভারতের যোগশাস্ত্রকে বিশেষ মাত্রায় পৌঁছে দেন তিনি। নিয়মিত শরীরচর্চা ও অনুশীলনের মধ্য দিয়ে অর্জন করেন সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী শিবানন্দের এই সাফল্যের রহস্য সহজ জীবন যাপন। তেল-মুক্ত সিদ্ধ খাদ্য ছাড়া তিনি কিছু খান না। মানবতার জন্য তার নিজস্ব উপায় রয়েছে। নিঃস্বার্থ সেবা তার প্রধান ব্রত। প্রচার তিনি চান না। জীবনকে নৈতিক শিক্ষা হিসেবে তিনি প্রদর্শন করেন। প্রতিদিন ব্রহ্ম মুহূর্তে রাত ৩টার সময় তিনি শয্যা ত্যাগ করে এক ঘণ্টা যোগব্যায়াম করেন। তারপর ঈশ্বরের আরাধনা দিয়ে দিন শুরু হয় তার।  

স্বামী শিবানন্দ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সম্পূর্ণরূপে বিশুদ্ধ ও নিরামিষ খাবার খাওয়ার জন্যই তিনি সম্পূর্ণরূপে সুস্থ আছেন। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বের প্রবীণতম ব্যক্তি চিতেতসু ওয়াতানাবে হলেও শিবানন্দ হচ্ছেন বিশ্বের প্রবীণতম সম্পূর্ণ সুস্থ ব্যক্তি।

এমএম/