ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

যশোরে ৫শ’ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু করলো আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশন

যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১১:৩৬ পিএম, ১২ মার্চ ২০২৩ রবিবার | আপডেট: ১১:৪১ পিএম, ১২ মার্চ ২০২৩ রবিবার

দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের চিকিৎসায় সেবায় যুক্ত হলো নতুন মাত্রা। অবহেলিত বৃহত্তর এলাকাটির কোটি মানুষের জন্য বিশেষায়িত আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ মাইলফলকও বটে। ১১ মার্চ উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে নতুন বার্তাও দিয়েছেন দেশের প্রত্থিতযশা ব্যবসায়ী আকিজ উদ্দিনের সুযোগ্য সন্তান ডা. শেখ মহিউদ্দিন। যিনি আদ দ্বীন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার কথা চিন্তা করে যশোর শহরতলীর পুলেরহাটে নির্মিত হয়েছে আদ্-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজের ৫শশয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল। নবনির্মিত ১১ তলার অত্যাধুনিক ভবনটিতে  এরইমধ্যে বসানো হয়েছে আধুনিক চিকিৎসার বিভিন্ন যন্ত্রাপাতি।

১১ মার্চ হাসপাতালের নতুন পথচালার উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ।  অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুস সবুর।


শুভযাত্রার শুরু উপলক্ষে ১১ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৪০ দিন ব্যাপি বিনামূল্যে এক্সিডেন্ট এন্ড ইমার্জেন্সি, সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, চক্ষু, নাক-কান-গলা, ইউরোলজি, মেডিসিন, ডায়াবেটিস, মনোরোগ, চর্ম, গর্ভকালীন গর্ভোত্তর, গাইনি, শিশু ফিজিওথেরাপি বিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে আদ দ্বীন ফাউন্ডেশন।  সাধারণ মানুষের স্বল্পমূল্যে জটিল রোগের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য উন্নত দেশের আদলে এই হাসপাতালটি গড়ে তোলা হয়েছে বলে দাবি করেছেন আদ দ্বীন ফাউন্ডেশনের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক তারিকুল ইসলাম মুকুল। বিশাল এই হাসপাতালে শীগগিরই যুক্ত  হবে এয়ারএ্যাম্বুলেন্স-এমন তথ্যও দেন তারিকুল ইসলাম মুকুল। তিনি আরও জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্ডিয়াক রোগীদের জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানও করা হবে। একই স্থানে সব ধরনের রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের স্বপ্ন নিয়ে হাসপাতালটি নির্মাণ করেছেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. শেখ মহিউদ্দিন। তিনি হাসপাতালটি নির্মাণে তার সৃষ্টিশীল মেধা, মনন সময়োপযোগী চিন্তাসংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন। হাসপাতালটি নির্মাণে জাপান, জার্মান, তুর্কি, চায়না ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অত্যাধুনিক মেডিকেল সরঞ্জাম আমদানি করা হয়েছে। বিশেষায়িত এই হাসপাতালের প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন প্রায় ১৭ হাজার বর্গফুট। জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা সব ধরনের রোগীর চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে।
যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশেই গড়ে উঠেছে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে। একাডেমিক নান্দনিক ইনটেরিয়র ডিজাইনে সাজানো হয়েছে এটি। বহির্বিভাগ এবং আন্তঃবিভাগের রোগীরা ৫টি লিফট ব্যবহার করে ওপর তলায় যাতায়াত করতে পারবেন। এছাড়া ইমারজেন্সি এবং অসুস্থ রোগীদের ওপর তলায় ওঠা-নামার জন্য রয়েছে এক্সেলেটর। ইমারজেন্সি এক্সিটের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সাধারণ সিঁড়ি। রাখা হয়েছে অগ্নি-নির্বাপন ব্যবস্থা।

হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সংগ্রামী বাংলাদেশের সংগ্রামী ব্যবসায়ী আকিজ উদ্দিনের সুসন্তান ডা. শেখ মহিউদ্দিন একজন মানবতাবাদী চিকিৎসক। তাঁর তত্ত্বাবধানে বৃহত্তর খুলনার মানুষ কম খরচে ভালো চিকিৎসা পাচ্ছেন। যশোরে এই হাসপাতাল সেবার মানকে আরও এগিয়ে দেবে। সুতরাং ডা. মহিউদ্দিন এ এলাকার মানুষের জন্য আশির্বাদস্বরূপ।

যশোরের পুলেরহাটে ১১তলা ভবনের বিশেষায়িত হাসপাতালটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত আদ দ্বীন মেডিকেল ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. শেখ মহিউদ্দিন তাঁর আগামীর দিনের স্বপ্ন তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজধানীর আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার খান এমপি, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমডি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, আদ দ্বীন ফাউন্ডেশনের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক তারিকুল ইসলাম মুকুলসহ অন্যরা আদ দ্বীন হাসপাতালের ব্যতিক্রমী সেবা সম্পর্কে তুলে ধরেন। আদ-দ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আব্দুস সবুরের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, প্রথিতযশা ব্যবসায়ী আকিজ উদ্দিনের সুসন্তান ডা. শেখ মহিউদ্দিন যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলিয়েছেন। ডা. মহিউদ্দিনের কর্মনিষ্ঠা, সততা ও দক্ষতায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গরিবেরা সুচিকিৎসা পাচ্ছেন। জাতি অনেকদিন তাঁর অবদান মনে রাখবে।

প্রতিষ্ঠানটি ঘুরে দেখা যায়, নিচতলাতেই রয়েছে বৃহৎ এক্সিডেন্ট এন্ড ইমারজেন্সি বিভাগ। যেখানে দুর্ঘটনায় আহত অথবা অন্য যেকোনো রোগে আক্রান্তদের জরুরি চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য ওটি এবং ১০টি অত্যাধুনিক বেড স্থাপন করা হয়েছে। পাশেই রয়েছে ২৪ ঘণ্টা মায়ের ছোয়া ক্যাফেটেরিয়া, যেখানে স্বল্পমূল্যে সব ধরনের স্বাস্থ্য সম্মত খাবার এবং নাস্তা প্রাপ্তির সুবিধা রয়েছে। এখানে স্থাপন করা হয়েছে এয়ার এ্যাম্বুলেন্স কাউন্টার।
১ম তলায় স্থাপন করা হয়েছে বিজনেস ক্যাশ কাউন্টার এবং ২৪ ঘণ্টার ফার্মেসি। ডান পাশেই গর্ভবতী মায়েদের জন্য চেকআপ কেন্দ্র। সহজলভ্যতার জন্য তার পাশেই রাখা হয়েছে আল্ট্রাসনোগ্রাফি বিভাগ। একই তলায় পশ্চিম পাশে স্থাপিত হয়েছে বৃহৎ শিশু বহির্বিভাগ ওপিডি। যেটা ইনডোর শিশু পার্কের আদলে সাজানো হয়েছে। চিকিৎসা সেবা গ্রহণের সাথে বিনোদনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পাবে শিশু রোগীরা। হাসপাতালে শিশু রোগীদের জন্য এই ধারণাটি সম্পূর্ণ নতুন এবং ব্যতিক্রমি উদ্যোগ।

শিশু বহির্বিভাগের সাথেই রয়েছে টিকাদান কেন্দ্র। ১ম তলার পূর্বপাশে রয়েছে প্রশাসনিক বিভাগ। যেখানে হাসপাতালের পরিচালক, ম্যানেজার, ইমারজেন্সি ম্যানেজার, সুপারভাইজার এবং হিসাব বিভাগের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন।
২য় তলায় পূর্ব পাশে নির্মাণ করা হয়েছে ফিজিওথেরাপি ক্লিনিক। মহিলা এবং পুরুষের জন্য আলাদাভাবে সাজানো হয়েছে এই বিভাগটি। এই তলায় রয়েছে ডায়াবেটিক বহির্বিভাগ, ইএনটি, অর্থপেডিক্স, চর্ম মনোরোগ বিভাগ।
৩য় তলায় পূর্ব পাশে বৃহৎ চক্ষু আউটডোর। রোগীদের সুবিধার জন্য ৩য় তলায় আরেকটি বিজনেস কাউন্টার ওপিডি ম্যানেজার বিভাগ রাখা হয়েছে। পাশেই রয়েছে মেডিসিন সার্জারী বহির্বিভাগ, ব্লাড ব্যাংক, প্যাথলজি, এক্স-রে ইসিজি রুম।
৪র্থ তলায় থেকে শুরু হয়েছে ইনডোরে ভর্তি রোগীদের সেবা কার্যক্রম। পূর্ব পাশে আনোয়ারা ফিটাল মেডিসিন ওয়ার্ড, এরপর প্রসূতি মায়েদের জন্য নাসিমা ওয়ার্ড। এই তলায় ২টি লেবার রুমে ৫৪টি বেড এবং পাশেই ১টি ওটি। পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড। পশ্চিম পাশে রয়েছে ১৩ শয্যার আইসিইউ বিভাগ। ৪র্থ তলা থেকে শুরু করে প্রতি তলায় একটি করে কাউন্সিলিং রুম রাখা হয়েছে।
৫ম তলায় পূর্ব পাশে ইমারজেন্সিসহ ২৮ শয্যার এনআইসিইউ। কিডনী কেয়ার ইউনিট, মহিলা এবং পুরুষ রোগীদের ৪৩ শয্যার কিডনী ডায়ালাইসিস এবং মেডিসিন ওয়ার্ড। ৬ষ্ঠ তলা থেকে ৮ম তলা পর্যন্ত প্রচলিত আইসিইউ থেকেও উন্নত মানের প্রযুক্তি সমৃদ্ধ সর্বমোট ২৭ শয্যার এইচডিইউ সেবা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
৬ষ্ঠ তলায় পূর্ব পাশে ২৩ শয্যার শিশু ওয়ার্ড স্থাপন করা হয়েছে। এখানে চক্ষু বিভাগে আলাদা মহিলা পুরুষ ওয়ার্ড রয়েছে। একই তলায় পশ্চিম পাশে স্থাপন করা হয়েছে এইচডিইউ। ৭ম তলা পূর্ব পাশে ১৯ শয্যার মহিলা চক্ষু ওয়ার্ড। এই তলায় আরো রয়েছে সার্জারি, অর্থপেডিক্স এবং ইএনটি বিভাগের মহিলা পুরুষ ভর্তি রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড। ৮ম তলায় ৮টি জেনারেল অপারেশন থিয়েটার। পশ্চিম পাশে ২১ শয্যার পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে ১৬ বেডের রিকভারি ওয়ার্ড। রয়েছে পেসেন্ট ওয়েটিং লাউঞ্জ।
৯ম তলায় রয়েছে উন্নত কার্ডিয়াক ওটি ক্যাথলাব। পাশেই রয়েছে ২১ শয্যার বিশিষ্ট কার্ডিয়াক ইমারজেন্সি বিভাগ। যেখানে এয়ার এ্যাম্বুলেন্সযোগে আসা রোগীরা জরুরি কার্ডিয়াক সেবা পাবেন। এয়ার এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের জন্য ভবনের ১০ তলায় এবং রুফটপে নির্মাণ করা হয়েছে ২টি হেলিপ্যাড। ১০টি এ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে সার্বক্ষনিক রোগী যাতায়াত সেবাও বাদ যায়নি। এছাড়া সব ধরনের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। খুলনা বিভাগ এবং গোপালগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ এয়ার এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের মাধ্যমে কার্ডিয়াক চিকিৎসাসহ অন্যান্য জরুরি চিকিৎসা সেবা পাবেন। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে যশোরের পুলেরহাটে প্রতিষ্ঠা হয় আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চলতি বছর ১৭ হাজার বর্গফুট জমিতে প্রতিষ্ঠা হলো ৫শ শয্যার বিশাল হাসপাতাল। যেখানে ধনী গরিব সবাই ন্যায্য ও কাক্সিক্ষত চিকিৎসা সেবা পাবেন বলে নিশ্চিত করেন আদ দ্বীনের কর্ণধান ডা. শেখ মহিউদ্দিন।