ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

প্রান্তিক চরবাসীদের জীবনমান উন্নয়ন পর্যবেক্ষণে মুগ্ধ লুক্সেমবার্গ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:৩৬ পিএম, ৯ মে ২০২৩ মঙ্গলবার

প্রান্তিক চরবাসীদের জীবনমান উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ করে মুগ্ধ হয়েছেন লুক্সেমাবার্গের উন্নয়ন সহযোগিতা এবং মানবিক মন্ত্রী বিষয়ক ফ্রান্জ ফায়োট। সম্প্রতি কুড়িগ্রাম গাইবান্ধা জেলার যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের চর সফর করেন লুক্সেমবার্গের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল। সফরে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাতে চরবাসীদের সফলতা পর্যবেক্ষণ করেন তারা।

সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ-এর আমন্ত্রণে লুক্সেমবার্গ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দলটি কুড়িগ্রামের চিলমারীর গয়নারপটল চর এবং গাইবান্ধার বাটিকামারি চর সফর করেন। দুই দিনের সফরে চরের জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন তারা। প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে চরবাসীর টিকে থাকা এবং একে অপরকে সহযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেন লুক্সেমবার্গ প্রতিনিধিরা। 

উল্লেখ্য, ২০ বছর আগে ফ্রেন্ডশিপ যখন একটি ভাসমান হাসপাতাল নিয়ে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদীর চরগুলোতে কাজ শুরু করে তখন চরগুলোতে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা সমস্যা ছিলো। যেমন-চরগুলোতে কোনো সংযোগ ছিলো না, নদী ভাঙ্গন, বন্যার কারণে দারিদ্রতা চরবাসীদের অনিবার্য সমস্যা ছিলো এবং এখানে জরুরি কোনো সেবা গ্রহণেরও সুযোগ ছিলো না। পরবর্তীতে দিন দিন এই সমস্যা বেড়েছে। অন্যদিকে দেশের নানা দিকের অগ্রগতিও হয়েছে। জীবন রক্ষা, দারিদ্র বিমোচন, জলাবয়ু অভিযোজন, জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একাত্ম হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলে এসব এলাকায় এবং জনগোষ্ঠীর মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।

লুক্সেমবার্গ মন্ত্রী ফ্রান্জ ফায়োট বলেন, “বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ফ্রেন্ডশিপ-এর প্রকল্প পরিদর্শন করেছি। আমি দেখেছি যে, ফ্রেন্ডশিপ-এর সঙ্গে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থানীয় জনগণের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ফ্রেন্ডশিপ যে কাজের ধারা এবং মানসিকতা অব্যাহত রেখেছে তা অনুকরণীয়। বাংলাদেশের জনগণকে সহযোগিতা দিতে এমন একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদারের ওপর নির্ভর করতে পেরে আমি আনন্দিত”।

ফ্রেন্ডশিপ-এর প্রতিষ্ঠাতা রুনা খান বলেন, “লুক্সেমবার্গ সরকারের সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ-এর সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তারা আমাদের সেই সব অমূল্য সহযোগিদের মত যারা সত্যিকার অর্থে আমাদের মূল্যবোধকে প্রভাবিত করে এবং আমরা যে কমিউনিটির সাথে কাজ করি তাদের চাহিদাগুলোকে গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করে। এ ধরনের অংশীদাররা আমাদের কাজকে মূল্যবোধের ভিত্তিতে পরিচালিত এবং প্রয়োজন-ভিত্তিক কাজ করতে সক্ষম করে তোলে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং সম্মানিত যে ফ্রাঞ্জ ফায়োট ও তার প্রতিনিধিদল এখানকার বাসিন্দাদের জন্য সময় দিয়েছেন, যাদের সেবা করার জন্য আমাদের একটি যৌথ অঙ্গীকার রয়েছে।”

ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গ চেয়ারম্যান মার্ক এলভিনগার বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে আমরা লুক্সেমবার্গ সরকারের কাছ থেকে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য এবং ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা পেয়েছি। আমারা উভয় পক্ষের মধ্যে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তুলেতে সক্ষম হয়েছি। আমার কাছে এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, মন্ত্রী এবং তার দল সরাসরি আমাদের প্রকল্পগুলো দেখার সুযোগ পেয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনিও নিশ্চিত হতে পেরেছেন যে তারা আমাদের কাজের প্রতি যে আস্থা রেখেছেন তা ভুল হয়নি।”
কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার চরে সফরের সময় প্রতিনিধি দলটি লুক্সেমবার্গ সরকারের সহ-অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন ফ্রেন্ডশিপ প্রোগ্রাম পরিদর্শন করে, যার মধ্যে রয়েছে ফ্রেন্ডশিপের ত্রি-স্তরীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে একটি ভাসমান হাসপাতাল, একটি প্লিন্থ ক্লাস্টার গ্রাম, একটি সৌর গ্রাম, একটি ফ্রেন্ডশিপ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সেই সাথে কৃষি সহায়তা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক নাগরিকত্ব এবং চার থিয়েটারের জন্য প্রোগ্রাম।

সফরে লুক্সেমবার্গ মন্ত্রণালয়ের সফরকারী দলে আরও ছিলেন, লুক্সেমবার্গ মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর অব কোঅপারেশন ক্রিস্টোফে পল জোসেফ স্ক্লিটজ, বাংলাদেশে নিযুক্ত লুক্সেমবার্গ গ্র্যান্ড ডাচির রাষ্ট্রদূত পেজি ফ্রান্তজেন। এতে আরো উপস্থিত ছিলেন ফ্রেন্ডশিপ-এর প্রতিষ্ঠাতা রুনা খান এবং ফ্রেন্ডশিপ লুক্সেমবার্গের চেয়ার মার্ক এলভিনগার।
কেআই//