ঢাকা, মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

পাকিস্তানে আবার গ্রেফতারের আশংকায় ইমরান খান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৩৫ পিএম, ২২ মে ২০২৩ সোমবার

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আশংকা করছেন এ সপ্তাহে তাকে হয়তো আবার গ্রেফতার করা হবে এবং অক্টোবরে হয়তো দেশটিতে নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচন হবে না।

বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমরান খান আবারও বলেছেন, তিনি তার জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন। তবে তার চেয়ে বড় আশংকা তিনি করেন পাকিস্তানে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

পাকিস্তানে ইমরান খানের দল পিটিআই এর হাজার হাজার সমর্থক এখনো পুলিশের হাতে বন্দী। মি. খানকে একটি দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতারের পর এরা ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তখন সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় আক্রমণ থেকে শুরু করে অনেক সহিংসতা হয়েছিল।

ইমরান খানের গ্রেফতারকে পরে সুপ্রিম কোর্ট অবৈধ ঘোষণা করলে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

পাকিস্তানে এই চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে গত প্রায় দশদিন ধরে। এর পাশাপাশি দেশটিতে চলছে চরম অর্থনৈতিক সংকট। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন তলানিতে, যা দিয়ে আর মাত্র এক মাসের আমদানি খরচ মেটানো যাবে।

পাকিস্তানে খুবই ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এখন প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে, যা দেশটিতে এক বিরল ঘটনা।

ইমরান খান সেনাবাহিনীর জেনারেলদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যাচ্ছেন যে, তাকে ব্যক্তিগতভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। অন্যদিকে জেনারেলরা হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন যে মি. খান দেশকে গৃহযুদ্ধের হুমকিতে ঠেলে দিচ্ছেন।

আর সরকার বলছে, ইমরান খান দুর্নীতির মামলার মুখোমুখি হয়ে এখন দেশটির বিচার এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেই উল্টে দিতে চাইছেন। পাকিস্তানে নতুন নির্বাচন হওয়ার কথা অক্টোবরে।

ইমরান খান তার লাহোরের বাড়ি থেকে বিবিসির মিশাল হোসেনকে এই সাক্ষাৎকার দেন।

তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, এই সংকটের সমাধান কীভাবে হবে?

জবাবে ইমরান খান বলেন, এই সংকট সমাধানের উপায় একটাই। একটি অবাধ এবং মুক্ত নির্বাচন। এই নির্বাচন পাকিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আসবে।

আর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারলেই কেবল অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

আর এখন এই রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কেউই আসলে জানে না, দেশ এখন কোনদিকে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “মানুষ আসলে মোটেই নিশ্চিত নয়, নির্বাচন অক্টোবরে হবে কিনা। এখন তো আমার মনে হচ্ছে, তারা অক্টোবরেও নির্বাচন করবে না।”

মি. খান অভিযোগ করেন যে মে মাসের ৯ তারিখে তাকে যেভাবে আটক করা হয়, সেটি ছিল আসলে একটি 'অবৈধ অপহরণ'।

“আমাকে আসলে অবৈধভাবে অপহরণ করা হয়েছিল। পরে সুপ্রিম কোর্টও রায় দিয়েছে যে, এটি অবৈধ ছিল। আমাকে সেনাবাহিনী অপহরণ করেছিল। আমার সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়েছে, যেন আমি একজন সন্ত্রাসবাদী। যখন মানুষ এসব ছবি দেখেছে, তখন তার একটা প্রতিক্রিয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, তার দলের দশ হাজার সমর্থক এখন জেলখানায়। সন্ত্রাসের মিথ্যে অজুহাতে তাদের জেলে ভরা হয়েছে।

ইমরান খান আশংকা প্রকাশ করেন যে, সামনের সপ্তাহে তাকে আবার গ্রেফতার করা হতে পারে।

“আমি আগামীকাল মঙ্গলবার ইসলামাবাদে যাচ্ছি। আমার আশংকা হচ্ছে তারা আমাকে গ্রেফতার করবে। আশি শতাংশ সম্ভাবনা আছে যে তারা আমাকে আবার গ্রেফতার করবে।

তারা এখন আমার সমর্থকদের সামরিক আদালতে বিচার করার কথা বলছে। এটা তো পাকিস্তানের সংবিধানেরও বিরোধী।”

পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বজওয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার পর ইমরান খানের সরকারের পতন ঘটে। 

১৯৫০ সালের পর হতে দেশটিতে এমন নজির আজ পর্যন্ত নেই যে সেনাবাহিনীর সমর্থন ছাড়া কেউ ক্ষমতায় থাকতে পেরেছে।

বিবিসির মিশাল হোসেন প্রশ্ন রেখেছিলেন, “এখন তো মনে হচ্ছে আপনার সঙ্গে সেনাবাহিনী প্রধানের রীতিমত ব্যক্তিগত লড়াই শুরু হয়ে গেছে। এখন কী ধরণের আপসরফা হতে পারে ? আপনি কি আসলে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করতে চাইছেন?”

জবাবে ইমরান খান বলেন, “আমি পাকিস্তানকে বুঝি। এই দেশে সেনাবাহিনীর ভূমিকা বাদ দেয়ার কোন উপায় নেই। কারণ এটি পাকিস্তানের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে।

আমি যে সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় ছিলাম, আমি তো সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছি, আমরা ভালোভাবেই কাজ করেছি। আমাদের ভালোই বোঝাপড়া ছিল, কেবল শেষ ছয় মাস ছাড়া।

হঠাৎ সেনা প্রধানের মনে হয়েছিল, আমি দেশের জন্য কল্যাণকর নই। অথচ আমাদের অর্থনীতি ভালো করছিল। তা সত্ত্বেও আমাদের সরকারকে সরিয়ে দেয়া হলো।”

ইমরান খান বলেন, “আমাদের দেশের বর্তমান শাসন পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর হাতে। অথচ সেনাবাহিনীর হাতে রয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ সব ক্ষমতা। কাজেই আমি বলেছিলাম, এখানে একটা নতুন ভারসাম্য আনতে হবে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমি সেনাবাহিনীর ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করেছি।”

ক্ষমতায় ফিরে যাওয়ার জন্য তার কি বর্তমান সেনাপ্রধানের সঙ্গে একটা সমঝোতায় আসা দরকার নয়?

এ প্রশ্নের উত্তরে ইমরান খান বলেন, “আমি বারবার বলেছি আমি আলোচনায় রাজী। আলোচনার জন্য তো দুজন মানুষ লাগে। এখন পর্যন্ত তো সামরিক বাহিনী বা সেনাপ্রধানের দিকে থেকে সেরকম সাড়া আমি পাইনি। কোন সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে আমার কোন ক্ষোভ নেই।”

নিজের জীবন নিয়ে তিনি আশংকায় আছেন কিনা, এ প্রশ্নের উত্তরে ইমরান খান বলেন, “হ্যাঁ, এরকম আশংকা আমার আছে। ওরা ভয় পায় যে, আমি যদি জেলেও থাকি, তারপরও আমার দলই নির্বাচনে জিতবে।"

"এজন্যেই আসলে আমার জীবন এখন ঝুঁকিতে। দুবার আমাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তার চেয়েও বড় বিপদ এখন আমাদের গণতন্ত্রের জন্য।"

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এসবি/