ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৬ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩১

পৃথিবীর ছাদ অভিযানে দুই বাংলাদেশি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:১৭ পিএম, ২৮ জুলাই ২০২৩ শুক্রবার

“পৃথিবীর ছাদ” হিসেবে পরিচিত পামির মালভূমিতে মর্যাদাপূর্ণ  “স্নো লেপার্ড চ্যালেঞ্জ” পূরণের লক্ষ্যে ঐতিহাসিক অভিযানে যাচ্ছেন বাংলাদেশের দুই তরুণ পর্বতারোহী সালেহীন আরশাদী ও ইমরান খান।
“স্নো লেপার্ড চ্যালেঞ্জ” পর্বতারোহণের একটি মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতা। মধ্য এশিয়ার পামির এবং তিয়েন শান পর্বতশ্রেণির সর্বোচ্চ পাঁচটি শৃঙ্গ সাফল্যের সঙ্গে আরোহণ করতে পারলেই কেবল এই চ্যালেঞ্জে জয়ী হওয়া যায়।

পাঁচটি শৃঙ্গের সবগুলোর উচ্চতাই ৭,০০০ মিটার বা ২৩,০০০ ফুটের বেশি। মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত এই দানবীয় শৃঙ্গগুলো তাদের দুর্গমতা এবং চরম আবহাওয়ার জন্য পরিচিত। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর মাত্র ৬৯৩ জন এই মর্যাদাপূর্ণ চ্যালেঞ্জ শেষ করতে পেরেছেন। 

এই পাঁচটি শিখর হলো-

ইসমাইল সোমনি- ২৪,৫৯০ ফুট বা ৭,৫০০ মিটার 
জেঙ্গিশ চোকুসু- ২৪,৪০৬ ফুট বা ৭,৪৩৯ মিটার
ইবনে সিনা পিক বা পিক লেনিন- ২৩,৪০৬ ফুট বা ৭,১৩৪ মিটার 
কর্জেনেভস্কায়া-  ২৩,৩১০ ফুট বা ৭,১০০ মিটার
খান তেংরি- ২২,৯৯৯ ফুট বা ৭,০১০ মিটার 

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি কোনো পর্বতারোহী এই কঠিন চ্যালেঞ্জটি জয়ের লক্ষ্যে নামছেন। সফল হলে, শুধু বাংলাদেশি হিসেবেই নয়, দক্ষিণ এশিয়া থেকে তারাই প্রথম এই চ্যালেঞ্জটি শেষ করার গৌরব অর্জন করবেন। এই পাঁচটি চূড়া আরোহণের জন্য দুই অভিযাত্রী তিনটি পৃথক অভিযানে নামবেন। 

প্রথম অভিযানে তারা সমূদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৩,৮০৬ ফুট উচ্চতার ইবনে সিনা বা পিক লেনিন আরোহণ করবেন। এটি পামির মালভূমির ট্রান্স আলতাই পর্বতশ্রেণির অন্তর্গত, যাকে ‘‘পৃথিবী ছাদ'' হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। পৃথিবীর ছাদে এটিই হবে বাংলাদেশের প্রথম কোনো পর্বতাভিযান। 

এই পর্বতারোহী জুটি আগামী ২৭ জুলাই কিরগিজস্থানের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। সব ঠিক থাকলে তারা আগামী ৫ আগস্ট পিক লেনিনের বেসক্যাম্পে পৌঁছাবেন। অতি উচ্চতা ও আবহাওয়ার সাথে প্রয়োজনীয় খাপ খাইয়ে নেওয়ার পর তারা ২২ অগাস্ট নাগাদ চূড়ার শীর্ষে আরোহণ করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। 

আসন্ন অভিযান সম্পর্কে পর্বতারোহী সালেহীন আরশাদী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, “এই অভিযাত্রা  আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা দেখাতে চাই বাংলাদেশের মানুষ যত কঠিনই হোক না কেন, দৃঢ় সংকল্প ও নিষ্ঠার সাথে যেকোনো চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করতে পারে।”

আরেক অভিযাত্রী ইমরান খানের কথা, “এই চ্যালেঞ্জটি শেষ করার চেষ্টাকারী প্রথম বাংলাদেশি দল হতে পেরে আমরা রোমাঞ্চিত এবং সম্মানিত। আশা করি আমরা স্নো লেপার্ড ট্রফিটি দেশে এনে সবাইকে গর্বিত করতে পারব।”

এই দুই আরোহী স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং বিশুদ্ধ আলপাইন স্টাইলে চ্যালেঞ্জটি সম্পন্ন  করার পরিকল্পনা করছেন। অর্থাৎ, এই অভিযানে কোনো ধরনের গাইড ও পোর্টার তারা ব্যবহার করছেন না। 

সালেহীন আরশাদী এবং ইমরান খান বাংলাদেশের দুই প্রতিভাবান পর্বতারোহী। গত বছর এই উদ্যমী জুটি মাত্র ১০ দিনের মধ্যে হিমালয়ের চারটি শিখর আরোহণ করেছিলেন, যা এখন পর্যন্ত একটি জাতীয় রেকর্ড। এখন তারা মর্যাদাপূর্ণ স্নো লেপার্ড চ্যালেঞ্জ সম্পূর্ণ করে প্রথম বাংলাদেশি দল হিসেবে ইতিহাস গড়তে প্রস্তুত।

এই পর্বতারোহণ প্রকল্পটির আয়োজন করছে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অদ্রি। তারা বাংলাদেশে বিগত সাত বছর ধরে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের প্রচারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া দ্যা কোয়েস্ট, ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ (টিওবি), ক্লাইম্ব ফর আর্থ, পিক সিক্সটি নাইন, বায়ো এরিকা, মঈন ফাউন্ডেশন এবং এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও প্রথম আলো এই অভিযানে সহযোগিতা করছে। অভিযানের মিডিয়া পার্টনার হিসেবে আছে দ্য ডেইলি স্টার এবং যমুনা টেলিভিশন।