ঢাকা, শনিবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ১২ ১৪৩২

সুস্থ থাকতে প্রতিদিন যা করবেন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০৭ এএম, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শনিবার

দৈনন্দিন জীবনে প্রাথমিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে নিজের যত্ন নেয়া। যথাযথ যত্ন আপনাকে শারীরিক-মানসিকভাবে ভালো রাখবে। এই ভালো থাকারই প্রকাশ ঘটবে আপনার জীবনে। সুস্থ থাকার ক্ষমতা প্রতিটি মানুষের সহজাত। আর সুস্বাস্থ্যের জন্যে প্রয়োজন বৈজ্ঞানিক খাদ্যাভ্যাস এবং সঠিক জীবনাচার অনুশীলন।

চলুন জেনে আসা যাক সুস্থ থাকতে প্রতিদিন আমাদের কী কী করা উচিত...

> সুন্দর প্রত্যাশা ও প্রত্যয় নিয়ে দিন শুরু করুন। ঘুম ভাঙতেই বলুন, শোকর আলহামদুলিল্লাহ/ থ্যাংকস গড/ হরি ওম বা প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ, একটি নতুন দিনের জন্যে।

> নিজের যত্নের পাঁচটি ধাপ−১. দম, ২. ব্যায়াম, ৩. পরিচ্ছন্নতা, ৪. আহার ও ৫. ছন্দায়ন। দৈনন্দিন জীবনে এ পাঁচটি ধাপের শুদ্ধাচার অনুসরণে আপনি লাভ করবেন সুস্বাস্থ্য ও প্রশান্তি।

> সময় পেলেই বুক ফুলিয়ে দম নিন। মেরুদণ্ড সোজা রেখে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে দম নিন। একমুহূর্ত থামুন। এরপর ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে দম ছাড়ুন। এভাবে প্রতি দফায় ১৫/২০ বার করে দিনে পাঁচ/ সাত দফা দম নিন। শরীরের ক্লান্তি-আলস্য-অবসাদ দূর হয়ে যাবে।

> নির্দিষ্ট মাপের শরীরের জন্যে জিমে যাওয়া একটি আত্মবিনাশী সংস্কৃতি, যা শরীর গঠন না করে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষয়সাধনের কারণ হতে পারে। সুস্থতা ও প্রাণশক্তি অর্জনে দিনে ৩০ মিনিট ইয়োগা করুন ও ৩০ মিনিট হাঁটুন।

> একেবারে খালি বা ভরপেটে নয়, হালকা কিছু খেয়ে অথবা পূর্ণ আহারের তিন/ চার ঘণ্টা পরে ইয়োগা করা যায়। শুরু করুন উজ্জীবন দিয়ে। তারপর বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আসন করুন। শেষ করুন শবাসনে শিথিলায়ন দিয়ে। আপনি সুস্থ ও প্রাণবন্ত থাকবেন।

> সুযোগ পেলেই সকালে খালি পায়ে ঘাসের ওপর হাঁটুন। ভোরের হাওয়া মুহূর্তে সকল ক্লান্তি-অবসাদ দূর করে।

> যখনই সময় পান, হাঁটুন। সহজেই হেঁটে যাওয়া যায় এমন দূরত্বে বাহনে উঠবেন না।

> দুই পায়ে সমান ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ান। কুঁজো হয়ে দাঁড়ালে মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে, রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।

> হেলে-দুলে বা কুঁজো হয়ে নয়, ঘাড় সোজা রেখে সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে সহজ স্বাভাবিকভাবে হাঁটুন।

> মেরুদণ্ড সোজা রেখে পা মাটিতে স্পর্শ করে চেয়ারে বসুন। ঘাড় ও মাথা সোজা রাখুন। এতে অহেতুক শারীরিক টেনশন হবে না।

> দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করতে হলে মাঝে মাঝে উঠে দাঁড়ান। সুযোগ পেলে কাজের ফাঁকে একটু হেঁটে নিন।

> দীর্ঘসময় চেয়ার বা সোফায় না বসে বঙ্গাসন (পায়ের পাতা মাটিতে লেগে থাকবে, হাঁটু ওপর দিকে ও নিতম্বের ভর গোড়ালির ওপর পড়বে) কিংবা বজ্রাসনে বসার অভ্যাস করুন। নিয়মিত বঙ্গাসন চর্চায় পায়ের পেশি মজবুত হয়, পেটের অতিরিক্ত চর্বি কমে, বিপাকক্রিয়া শক্তিশালী হয় ও রেচন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক হয়। পাশাপাশি মহিলাদের ক্ষেত্রে বঙ্গাসন চর্চা স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে সহায়ক।

> বদ্ধ ঘরে ঘুমাবেন না। পর্যাপ্ত বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখুন।

> প্রাণবন্ত চোখের জন্যে−ঘুম থেকে উঠে চোখ বন্ধ রেখে প্রথমে ঈষদুষ্ণ ও পরে ঠাণ্ডা পানি এবং রাতে শোয়ার আগে প্রথমে ঠান্ডা ও পরে ঈষদুষ্ণ পানির ঝাপটা ২০ বার করে নিন।

> চোখ বন্ধ করে ৫/১০ মিনিট কল্পনায় মনোহর প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে যান। এতে চোখের ক্লান্তি দূর হবে।

> একটানা দীর্ঘসময় স্ক্রিনের সামনে কাজ করতে হলে ২৫/৩০ মিনিট পর পর চোখকে বিশ্রাম দিন।

> প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং নির্দিষ্ট সময়ে জেগে উঠুন। ঘুমকাতুরে হলে ঘুমই আপনাকে কাতর করে দেবে।

> রাতে খাবার খেয়ে সাথে সাথে শুয়ে পড়বেন না। কমপক্ষে ১০ মিনিট বজ্রাসনে বসুন। একটু হাঁটুন।

> রাতে ঘুমানোর আগে মুখমণ্ডল-হাত-পা ধুয়ে বিছানায় যান। কিছুক্ষণ গোমুখাসন করুন। তারপর শবাসনে সুন্দর কল্পনা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে ঝরঝরে অনুভূতি নিয়ে জেগে উঠতে পারবেন।

> হেঁটে বা দৌড়ে আসার সাথে সাথেই নয়, একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর অল্প অল্প করে পানি পান করুন। দীর্ঘক্ষণ হাঁটতে হলে যথাসম্ভব নীরব থাকুন, তৃষ্ণা কম পাবে।

> অতিরিক্ত পরিশ্রমের পর পরই খাবার খাবেন না। হাত-মুখ ধুয়ে ১৫/২০ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে তারপর খান।

> প্রস্রাব-পায়খানা চেপে রাখবেন না। এ অভ্যাস শরীরের জন্যে ক্ষতিকর।

> ছোটখাটো সমস্যা হলেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না। সমাধানের পরিবর্তে ওষুধ নতুন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

> বাড়িতে ও কর্মস্থলে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম (ফার্স্ট এইড বক্স) রাখুন।

> ওষুধ, প্রসাধনী, খাবার ও পচনশীল দ্রব্য কেনার আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ ভালোভাবে দেখে নিন।

> শীতকালে ত্বকের যত্নে প্রয়োজনীয় প্রসাধনী ব্যবহার করুন। হাত-পা-ঠোঁটের ত্বক ফেটে যাওয়া শরীরের প্রতি আপনার অযত্ন-অবহেলা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রকাশ ঘটায়।

> প্রাপ্তবয়স্ক হলে বছরে দুই/ তিন বার রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্যে উপকারী। রক্তদান করার সাথে সাথে বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জা নতুন কণিকা তৈরির জন্যে উদ্দীপ্ত হয়। নিয়মিত রক্তদান হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।

> দিনে অন্তত কয়েকবার প্রাণ খুলে হাসুন। হাসি দম স্বাভাবিক করে, পেশির ব্যথা দূর করে, রক্তচাপ কমায় ও রোগ নিরাময়কে দ্রুততর করে।

> দৈনন্দিন জীবনে রুটিন অনুসরণ করুন। ব্যক্তিগত যত্নায়ন রূপান্তরিত হোক আপনার অভ্যাসে।

> সুস্থ জীবনদৃষ্টি, স্বাস্থ্যসম্মত আহার, পর্যাপ্ত পানি পান, পরিমিত ঘুম, মেডিটেশন, দমচর্চা ও কোয়ান্টাম ইয়োগা আপনাকে দেবে−সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্মব্যস্ত সুখী জীবন।

এমএম//