ঢাকা, রবিবার   ১৯ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমে অনিয়ম আর বঞ্চনা (ভিডিও)

আহম্মেদ বাবু

প্রকাশিত : ১২:২৮ পিএম, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার

ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের বঞ্চনা আর শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের নজির পদে পদে। শুধু শ্রমিকের অংশগ্রহণমূলক তহবিলের টাকা আটকে রাখাই নয়, আছে বিস্তর অনিয়ম। এক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে খাটানো, কর্মঘন্টার বিধি উপেক্ষা ছাড়াও নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগে আছে অভিযোগ। দ্বারে দ্বারে ঘুরে প্রাপ্য টাকা না পেয়ে অবশেষে মামলার আশ্রয় নিচ্ছেন শ্রমিকরা। আন্তজাতিক শ্রম অধিকার সংগঠনগুলোকেও পাশে চান তারা।

নাটরের গুরুদাসপুরের কান্দাইল গ্রামের এমদাদুল হক। অনেক স্বপ্ন নিয়ে ২০০৫ সালে ড. ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকমে স্টোর লেবার পদে যোগদান করেন। চার বছর কাজ করার পর ২০০৯ সালে গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশনে তাকে হস্তান্তর করে গ্রামীণ টেলিকম।

এমদাদুল হক বলেন, “তারা আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে।”

সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করায় পিঠের হাড়ে সমস্যা হলে ২০১৫ সালে গ্রামীণ টেলিকমের চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর গ্রামে ফিরে আরেক জীবন যুদ্ধ। ঋণ নিয়ে ছোট একটা ব্যবসা শুরু করেন এমদাদুল। কিন্তু ঋণের জাল থেকে মুক্ত হতে পারছেন না তিনি।

এমদাদুল বলেন, গ্রামীণ টেলিকম থেকে ন্যায্য পাওনা পেলে হয়ত মা-বাবাসহ পরিবারে সদস্যরা একটু ভালভাবে চলতে পারতেন।

তার মতো একই প্রতিষ্ঠানের অনেকেই কষ্টে জীবন যাপন করছেন। গ্রামীণ টেলিকম বঞ্চনা করেছে বলে অভিযোগ তাদের।

আরেকজন জানান, প্রায় ১৩ বছর হলো চাকরি ছেড়েছি, এতোদিন হলো আমাদের টাকা দেয়নি। টাকাটা যদি দিতো তাহলে আমরা কিছু করে খেতে পারতাম। কষ্ট বা অভাবের মধ্যে আমাদের চলতে হতোনা।

গ্রামীণ টেলিকম ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ২৮ ধারায় নিবন্ধিত একটি কোম্পানি। শ্রম আইন অনুযায়ী প্রত্যেক কোম্পানিকে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল এবং কল্যাণ তহবিল স্থাপন বাধ্যতামূলক। কোম্পানির মুনাফার ৫ শতাংশ এসব তহবিলে জমা করার বিধান রয়েছে। 

শ্রমিকরা বলছেন, গ্রামীণ টেলিকমের নিরীক্ষাতেও আছে স্বজনপ্রীতি। এসি.এন.এ.বি.আই.এন নামে একটি অডিট ফার্ম শ্রমিক অংশগ্রহণমূলক তহবিল নিয়ে কোম্পানির সঙ্গে দ্বিমত করে আর নিরীক্ষা করেনি। পরে অন্য ফার্ম ডেকে নিরীক্ষা করানো হয়। 

বাদী পক্ষের আইনজীবী মোকাররামুছ সাকলান বলেন, “বড় বড় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট ফার্ম অডিট করেছে, তারা বিভিন্ন সময়ে অডিট আপত্তি দিয়েছে। বলেছে, আপনাদের এই মুনাফাটা শ্রম আইন অনুযায়ী বন্টন করা প্রয়োজন। সেসব কোম্পানিগুলোকে গ্রামীণ টেলিকম অডিট কার্যক্রমের মধ্যে আর রাখা হয়নি।”

গ্রামীণ টেলিকম গ্রামীণ ফোনে ৩৪ শতাংশ শেয়ারের বিপরীতে মুনাফা অর্জন করলেও তার সুবিধা শ্রমিকদের দেয়া হয়নি উল্লেখ করে গত ২৮ আগস্ট পৃথকভাবে শ্রম আদালতে মামলা করেন ১৮ জন শ্রমিক। বাদী পক্ষের আইনজীবী বলছেন, গ্রামীণ টেলিকম থেকে বলা হচ্ছে এই শ্রমিকরা শিল্প সংক্রান্ত বিষয়ে জড়িত নয়। শ্রম আইনে এক্ষেত্রে শিল্প-অশিল্প ভেদাভেদ নাই বলে জানান আইনজীবী।

আইনজীবী মোকাররামুছ সাকলান বলেন, “মুনাফাটা না দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি করে এই শ্রমিকদেরকে ওই সব কোম্পানিতে স্থানান্তর করে দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে তাদেরকে কোনো নিয়োগপত্র দেয়া হচ্ছে না, অল্প বেতনে বিভিন্নভাবে সেখানে কাজ করিয়ে নেয়া হচ্ছে।”

তবে এরই মধ্যে ১৭৬ জন শ্রমিক ১০৬টি মামলা দায়ের করলে আইনিভাবে আপসরফা করে গ্রামীণ টেলিকম। ৪০০ কোটি টাকা প্রদান করা হয় শ্রমিকদের। গেল ৯ মে ড. ইউনূসের সভাপতিত্বে গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সভায় শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিলের টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়। 

১৮ শ্রমিকের ক্ষেত্রে মুনাফা না দেয়ার জন্য বিভিন্ন সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে কাজ করিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে বলেও জানান বাদী পক্ষের আইনজীবী।

মোকাররামুছ সাকলান বলেন, “গ্রামীণ টেলিকমের মেমোরেন্ডামে দেখলাম যে, তারা মুনাফার ভিত্তিতে বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে এবং মুনাফার ক্ষেত্রে তাদের উল্লেখযোগ্য গ্রামীণ টেলিফোনে বিনিয়োগ আছে। এখান থেকে তারা মুনাফা পেয়ে থাকে। এই মুনাফা শ্রমিকদের না দেয়ার প্রেক্ষিতে মামলাগুলোর উৎপত্তি।”

শুধু ১৮ জন নয়। সুবিধাবঞ্চিত শ্রমিকের সংখ্যা আরও বেশি। তবে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আইনে মামলা নিয়ে বিশ্বনেতাদের বিবৃতিতে শঙ্কিত এই শ্রমিকরা। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনগুলোকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা। 

এএইচ