ঢাকা, শনিবার   ১৮ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

৩০ বছরে এমন শীত অনুভূত হয়নি শাহজাদপুরে

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১০:০৮ এএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:১৭ এএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ মঙ্গলবার

মঙ্গলবার সকালে শাহজাদপুর উপজেলার খোকশাবাড়ির চিত্র

মঙ্গলবার সকালে শাহজাদপুর উপজেলার খোকশাবাড়ির চিত্র

শীত জেঁকে বসেছে সিরাজগঞ্জে। হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনপদ। বিশেষ করে জেলার শাহজাদপুর, এনায়েতপুর চৌহালীতে আজ সকালে দিনের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে ৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ী নৌবন্দর অবস্থিত আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, মঙ্গলবার সকালে দিনের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে ৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে স্থানীয়দের মত, ২৫-৩০ বছরের মধ্যে এমন শীত আগে কখনও উপলব্ধি করেনি এই অঞ্চলের মানুষ। যে কারণে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে বের হচ্ছেন না কেউ। যারা বের হচ্ছেন উপযোগী পোশাক পরে। তবুও শীতের কাছে কাহিল হয়ে পড়েছেন তারা।  

শাহজাদপুর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের বৃদ্ধ দিনমজুর আয়নাল হক, মোশারফ হোসেন জানান, প্রচণ্ড শীত বাড়ির বাহিরে বের হও দুষ্কর। ঘন কুয়াশা আর একদিকে শীতল বাতাস এই শীতকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন একবার শীত পড়েছিল গত ২৫-৩০ বছর আগে।

তিনি আরও জানান, আমাদের এলাকার দরিদ্র সাধারণ মানুষ রিকশাভ্যান চালনা, দিনমজুর ও তার শ্রমিকের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। এই শীতে একদিকে আমাদের আয় কমে সংসার পরিচালনা কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।  শীত বস্ত্রের অভাব থাকলেও কোন কম্বল সহায়তা এখনও পাননি বলে জানান তিনি।

গোপিনাথপুর গ্রামের ঐতিহ্যের তাঁত শিল্প

এদিকে জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমান শীতে দুই দফায় জেলার নয়টি উপজেলায় ৫৬ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। সচেতন মহল মনে করছে এটা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। 

অপরদিকে, জেলার যমুনার চর অঞ্চল খ্যাত দুর্গম কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার মানুষ প্রচণ্ড শীতে দুর্ভোগ বেশি পোহাচ্ছে। যমুনা নদী থেকে মাছ আহরণ ও কৃষি কাজের উপর নির্ভরতা থাকলেও এই শীতে তারা কাজে বের হতে পারছে না। এজন্য বেকার সময় কাটছে তাদের।

এছাড়া তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ জেলার বেলকুচি, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, উল্লাপাড়া ও সদর থানায় প্রচণ্ড শীত ঘন কুয়াশায় সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্পে স্থবিরতা নেমে এসেছে। উৎপাদন ব্যাহত, শ্রমিক ও মালিকেরা হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। জেলার ১৪ হাজার ৮৪৯টি ছোট-বড় কারখানার হস্ত ও ইঞ্জিন চালিত ৪ লাখ ৫ হাজার ৬৭৯ টি তাঁতে অতীতের মত শাড়ি লুঙ্গি উৎপাদন করতে পারছে না। 

এ অবস্থায় দেশের গ্রামীণ পর্যায়ের সিরাজগঞ্জ জেলার সম্ভাবনাময় এই পেশার সাথে জড়িত ২০ লাখ ৮ হাজার মানুষ চরমভাবে বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে শ্রমিকেরা দিনে কাঙ্খিত উৎপাদনে যেতে না পারায় আর্থিক সংকটে তাদের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে। প্রচণ্ড শীতের কারণে আবার অনেকেই কাজে যোগ দিচ্ছেন না। পাশাপাশি দরিদ্র এই মানুষগুলোর রয়েছে শীতবস্ত্রেরও অভাব।

এ ব্যাপারে আব্দুল কুদ্দুস, ইকবাল হোসেন, কানছু সরকার জানান, শীতে আর আগের মত কাজ করা যায় না। কুয়াশায় সুতা থানা ভিজে থাকায় কয়েকদিন তাঁত বুনানো দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পেট চালাতে কাজে আসলেও এখন অর্ধেক কাজই করা যায় না। আগে শাড়ি লুঙ্গি বুনিয়ে দিনে ৫০০ টাকা আয় করা গেলেও এখন ১৫০-২০০ টাকার উপরে কাজ করা যায় না।

এদিকে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় তাঁত মালিকদের পড়তে হয়েছে বিপাকে। 

এএইচ