ঢাকা, শুক্রবার   ১০ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২৭ ১৪৩১

এক মাস ধরে পণ্যবোঝাই ভারতীয় ট্রাক বেনাপোলে, কৌতূহল বন্দরে

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১২:৩৩ পিএম, ২০ মার্চ ২০২৪ বুধবার

বেনাপোল বন্দরে এক মাসের বেশি সময় ধরে পড়ে থাকা ভারতীয় পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এত নিরাপত্তা থাকার পরও সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে ট্রাকটি বন্দরে ঢুকলো। 

ট্রাকটির মধ্যে কি পণ্য আছে তাও কেউ জানে না। এর মালিকানাই বা কারা, এত দিনেও তা নিশ্চিত হতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। ট্রাকটিতে ৫১১ কার্টন আইপিএস, ইউপিএস ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত কেউ পণ্য চালানটির মালিকানা দাবি করেনি ও ঘোষণা মতে পণ্য আছে কিনা তাও জানা যায়নি।

যে কারণে ঘোষণা দেওয়া পণ্যের মালিকানা দাবিদার ঠিক আছেন কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে কাস্টম কর্তৃপক্ষ। পণ্য খালাসে আমদানিকারকের পক্ষে কোন সিএন্ডএফ এজেন্ট এখনও কাগজপত্র কাস্টমসে দাখিল করেননি। 

বর্তমানে ভারতীয় ট্রাকটি বন্দরের ৩৬ নম্বর শেডের সামনে সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা কর্মীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ট্রাকটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কাস্টমসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ট্রাকটি বন্দরের ৩৬ নম্বর পণ্যাগারের সামনে সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তাকর্মীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। অনেকের ধারণা, বড় ধরনের অনিয়ম বা শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছিল একটি মহল।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, ভারত থেকে যেসব পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে সাধারণত একজন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিনিধি ট্রাকটি গ্রহণ করে কাস্টমস কার্গো শাখায় তার তথ্য এন্ট্রি করে। পরে বন্দরের রেজিস্ট্রারে পণ্যাগারের নাম উল্লেখ করে সেই পণ্যাগারে পণ্য খালাস করা হয়ে থাকে। 

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে (ডব্লিউবি- ১১-বি- ৬৩৬৬) নম্বরের ট্রাকটি নিয়ম না মেনে বন্দরের ৩৬ নম্বর পণ্যাগারের সামনে অবস্থান করে। এর মধ্যে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে খবর যায়, ট্রাকটি আমদানি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বা বড় ধরনের অনিয়ম করার চেষ্টা করছে। এরপর থেকে ট্রাকটি সিসি ক্যামেরা ও বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীদের নজরদারিতে রাখা হয়।

তবে এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত পণ্য চালানটি কেউ মালিকানা দাবি করেনি। এদিকে ট্রাকটিতে কী আছে, তা এখন পর্যন্ত কোনো সংস্থা খুলে না দেখায় এ নিয়ে বন্দরে কাজ করা সাধারণ শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে কৌতূহল ও ভীতি বিরাজ করছে।

আমদানিকারক সাজেদ রহমান বলেন, ট্রাকটিতে কি আছে আর কেন এত দিন এটি বন্দরে পড়ে আছে, তা নিয়ে কৌতূহল ও ভীতি বিরাজ করছে। এখন পর্যন্ত কেউ ট্রাকটির মধ্যে থাকা পণ্যের মালিকানা দাবি করছে না। ধারণা করা হচ্ছে, শুল্ক ফাঁকির উদ্দেশ্যে ট্রাকটি নিয়ম না মেনে বন্দরে ঢুকেছে। এ ধরনের নানা অনিয়মের কারণে ২০১১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা ১২ বছর রাজস্ব ঘাটতি যাচ্ছে বেনাপোল কাস্টমস হাউসে।

বেনাপোল কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা নাজমুল সিরাজী বলেন, পণ্যবাহী ট্রাকটির আমদানিকারক ঢাকার টিআর অটোমোবাইলস। ট্রাকটিতে ৫১১ কার্টন আইপিএস, ইউপিএস ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ পণ্য চালানটির মালিকানা দাবি করেনি। ট্রাকটি পরবর্তী পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত খালাস বা সরিয়ে না নেয় এজন্য বন্দরের সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তাকর্মীদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ট্রাকটি বন্দরে কোথাও এন্ট্রি না করে প্রবেশ করে। ট্রাকটিতে কী আছে এখন পর্যন্ত খুলে দেখা হয়নি। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দরে হেফাজতে ট্রাকটি রেখেছে। ট্রাকটির বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য কাস্টমসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বন্দরের নিয়ম অনুযায়ী, এক মাসের মধ্যে পণ্যের চালান বন্দর থেকে খালাস না হলে তা নিলামের তালিকায় তোলা হয়। তখন বন্দর কর্তৃপক্ষ তালিকা দিলে কাস্টমস সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

এএইচ