ঢাকা, শুক্রবার   ১৭ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১

রমজানে সদকার ফজিলত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:০৮ এএম, ২৩ মার্চ ২০২৪ শনিবার

রমজান দানশীলতার শ্রেষ্ঠ মাস, দ্বিগুণ প্রতিদান পাওয়া যায়। দান-সদকা দ্বারা সম্পদে বরকত হয়। বিপদ-আপদ দূর হয়। গরিব-দুঃখীর উপকার হয়। দান-সদকার প্রতিদান বাড়তে থাকে। 

বর্ণিত হয়েছে, যারা নিজেদের মাল আল্লাহর পথে খরচ করে তাদের খরচের উদাহরণ এমন, যেমন একটা বীজ বপন করা হলো এবং তা থেকে সাতটা ছড়া বের হলো এবং প্রতিটি ছড়ায় ১০০ করে শস্যবীজ হলো। এভাবেই আল্লাহ যার আমলকে চান বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ উদার ও মহাজ্ঞানী। (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬১)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সদকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা উঁচুতে তুলে দেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৩৫৬)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানবকুলের মধ্যে সর্বাধিক উদার ও দানশীল ছিলেন। রমজান মাসে যখন জিবরাইল আলাইহিস সালাম নিয়মিত আসতে শুরু করতেন, তখন তার দানশীলতা বহুগুণ বেড়ে যেত। (বোখারি)। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে কাউকে অধিকতর দয়ালু দেখিনি।’ (মুসলিম)। অন্য বর্ণনায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানের হাত এতটা প্রসারিত ছিল যে, সকালবেলা যদি ওহুদ পরিমাণ সম্পদও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে রাখা হয়, আমার মনে হয়, মাগরিব আসার আগেই তিনি সব দান করে শেষ করে ফেলবেন। (বোখারি ও মুসলিম)।

রমজান মাসে দানে ৭০ গুণ বেশি সওয়াব

রমজানে প্রতিটি ভালো কাজের নেকি ৭০ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এ মাসে যত বেশি দান-সদকা করা যাবে, তা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রিয় উম্মতকে রমজান মাসে বেশি পরিমাণে দান করতে উৎসাহিত করতেন। রমজান মাসে একটি নফল আমল ফরজের মর্যাদায় সিক্ত। সে হিসেবে রমজান মাসে আমাদের প্রতিটি দান-সদকাই ফরজ হিসেবে আল্লাহতায়ালার কাছে গণ্য। দান-সদকার এমন ঈর্ষণীয় ফজিলত অন্যান্য মাসে কখনোই পাওয়া যাবে না। শুধু রমজানেই এই অফার সীমাবদ্ধ।

দানকারীর তুলনা

যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের জন্য কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা স্বীয় ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা হলো একটি শস্য বীজ; তা হতে উৎপন্ন হলো সাতটি শীষ। প্রত্যেক শীষে (উৎপন্ন হলো) শত শস্য এবং আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছে করেন, বর্ধিত করে দেন। বস্তুত আল্লাহ হচ্ছেন বিপুল দাতা, মহাজ্ঞানী।’ (সুরা বাকারা : ২৬১)। তাই যারা গরিব, অসহায়-নিঃস্ব, তাদেরকে সাধ্যানুযায়ী দান করা চাই। সামর্থ্য থাকলে কোনো এক হতদরিদ্র পরিবারের এক মাসের সেহরি ও ইফতারের দায়িত্ব নিতে হবে। এতে অঢেল সওয়াব অর্জনের পাশাপাশি রমজান মাসের পবিত্র ভাব-গাম্ভীর্য চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে। ঈদে প্রতিবেশী কিংবা চেনা-জানা কোনো গরিবকে একটি নতুন জামা উপহার দেওয়া চাই। ফুটপাতে বসবাসকারী কোনো শিশুর মুখে হাসি ফোটানো কর্তব্য।

দান হবে গোপনে

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যারা গোপনে দান করবেন, মহান আল্লাহ কঠিন কেয়ামতের দিন তাদের আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন।’ (বোখারি)। কাজেই দান-সদকা ও অসহায়কে সহযোগিতা করার বিষয়টি সামর্থবান ও বিত্তশীলদের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এতিম, মিসকিন, অভাবগ্রস্ত, ভিক্ষুক, মুসাফির ও অসহায়দের প্রতিও তাদের দায়িত্ব অপরিসীম। অন্তত পবিত্র মাস রমজানে তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করা ও তাদের প্রাপ্য আদায় করা জরুরি।

দানের পুরস্কার

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বস্ত্রহীনকে কাপড় পরাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতে সবুজ রেশমি কাপড় পরিধান করাবেন। যে ব্যক্তি কোনো ক্ষুধার্তকে আহার করাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে ব্যক্তি কোনো তৃষ্ণার্তকে পানি পান করাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের পবিত্র শরাব পান করাবেন।’ (সুনানে আবি দাউদ)।

দানে রিজিকে বরকত হয়

দান-সদকা রিজিকে বরকত এনে দেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, সালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিজিক দিয়েছেন, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে, যা কখনও ধ্বংস হবে না। যাতে আল্লাহ তাদের কাজের প্রতিফল পরিপূর্ণ দেন। তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের আরও বেশি দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্রাহী।’ (সুরা ফাতির : ২৯-৩০)।

ইফতার ও সেহরি করানো

একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘ইসলামের মধ্যে উত্তম কাজ কোনটি?’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘অপরকে খাওয়ানো।’ রমজানে আমরা প্রতিবেশীদের সঙ্গে সানন্দে সেহরি-ইফতার শেয়ার করতে পারি। এতে সওয়াব যেমন হবে, তেমনি সবার মাঝে সম্প্রীতি-সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পাবে। আর অনেক গরিব-দুঃখী আছেন, যারা সেহরি ও ইফতারে সামান্য খাবারও জোগাড় করতে হিমশিম খান। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমজানে তাদের দুঃখটা খানিক বেড়ে যায়। এ ধরনের মানুষকে ইফতার ও সেহরি করানোর মাধ্যমে অজস্র সওয়াব লাভ করতে বলেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জায়েদ ইবনে খালেদ আল জুহানি (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার (রোজাদারের) অনুরূপ প্রতিদান লাভ করবে; তবে রোজাদারের প্রতিদান থেকে বিন্দুমাত্রও হ্রাস করা হবে না।’ (তিরমিজি)।

এমএম//