ঢাকা, বুধবার   ২২ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত, সংকটের মুখে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো

মুহাম্মদ নূরন নবী

প্রকাশিত : ১২:২৯ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:৩৪ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ বৃহস্পতিবার

ইসরায়েল যদি ইরানের ভূ-খণ্ডে পাল্টা হামলা চালায় তাহলে পরিস্থিতি জটিল হবার শঙ্কা মধ্যপ্রাচ্যে। পূর্ণমাত্রায় ধ্বংসাত্মক সংঘাতের মুখোমুখি একটি অঞ্চল আরও সংকটে পড়বে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের পরামর্শ খাদের কিনারা থেকে ফিরিয়ে এনে সংযত রাখার এখনই সময়। সংকট উত্তরণে সব পরাশক্তি ও বিশ্ব সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার কোন বিকল্পও দেখছেন না তারা। 

ইসরায়েলি বাহিনীর লাগামহীন সামরিক তৎপরতার জবাব দিল ইরান। হয়তো, তেহরানের এ সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সরাসরি আক্রমণের বৈধতার সুযোগ পেলো ইসরায়েল। যদিও যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অন্যান্য পশ্চিমা মিত্রদের এতে সায় মেলেনি। 

পাল্টা হামলা হলে শক্ত জবারের ঘোষণা ইরানের। এক দশকের ছায়াযুদ্ধের পর এই প্রকাশ্যে মুখোমুখি অবস্থান ভীত করছে বিশ্বকে। 

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং তার যে দক্ষিণপন্থী সরকার তাদের অস্তিত্বের প্রয়োজনেই একটা সংকট সৃষ্টি বা নতুন করে যুদ্ধ বাঁধাবার চেষ্টা তারা করতে পারে। তাহলে গাজা থেকে দৃষ্টিটা অন্যদিকে সরিয়ে নেয়া হবে।”

নেতিবাচক কিছু হলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন নতুন সংকটের আঁচ ছড়িয়ে পড়বে পুরো বিশ্বে। তখন যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা বিশ্বের পিছিয়ে থাকার বিকল্প থাকবে না। অপাতত: অস্থিরতা কমানোর পরামর্শ বিশ্লেষকদের।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদ হোসেন বলেন, “ক্রিয়ার একটা প্রতিক্রিয়া এই সার্কেলটা যখন চলমান থাকবে তখন আসলে যুদ্ধের ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে। দু’পক্ষকেই সংযম প্রদর্শন করে চলার অনুরোধ রয়েছে। এখন দেখার বিষয় হলো তারা এই অনুরোধগুলোকে কতটুকু সমীহ করে।”

হুমায়ূন কবির বলেন, “এই মুহূর্তে রেডলাইন আর নাই। এখন যদি ইসরায়েল পাল্টা আক্রমণ চালায় ইরানের উপর, ধরে নেয়া যায় ইরানও পাল্টা আক্রমণ করবে। তখন কিন্তু এখানে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার বিরাট আশঙ্কা থাকে। কারণ মার্কিন রাষ্ট্র বা পাশ্চাত্য জগত চায়না ইসরায়েলের নিরাপত্তা ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হোক। এরকম ঘটনা ঘটলে পাশ্চাত্য রাজনীতিবিদদের উপর প্রচণ্ড অভ্যন্তরীণ চাপ সৃষ্টি হতে পারে।”

সংঘাত নিয়ন্ত্রণ না হলে সমূহ যুদ্ধের সবচেয়ে বেশি মাশুল গুনতে হবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে। তেলের দাম বাড়বে, নিত্যপণ্যের দামও বাড়বে। বিদেশী শ্রম বাজার ও রেমিটেন্স আসা বন্ধ হবার উপক্রম তৈরি হবে। 

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবির বলেন, “ভূমধ্যসাগরের সুয়েজ ক্যানেলে যাতায়াত বন্ধ হবে ও লোহিতসাগরে জটিলতা তৈরি হবে। এটা আমাদের মতো দেশগুলোর জন্য মহাবিপদের একটা আশঙ্কা।”

অধ্যাপক তৌহিদ হোসেন বলেন, “ওপেকভুক্ত রাষ্ট্রগুলো তারা অনেকেই হয়তো তেলের উৎপাদন কিছুটা কমিয়ে দিচ্ছে বা দিতে যাচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়বে।”

সব ব্লকের পরাশক্তিদের সংহাত নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা যেমন থাকতে হবে তেমনি বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ-সংহাত বিরোধী অবস্থানের কন্ঠ আরও জোড়ালো করার পরামর্শ বিশ্লেষকদের। 

এএইচ