ঢাকা, রবিবার   ১৯ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

পলিথিন নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই শুরু হচ্ছে যৌথ অভিযান

ফারজানা শোভা

প্রকাশিত : ০৩:২১ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ শুক্রবার

অবৈধ পলিথিনের যথেচ্ছ ব্যবহারে মারাত্মক ঝুঁকিতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। যে কারণে অবৈধ পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। বর্তমান সরকারের ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ত্রিমাত্রিক দূষণের কারিগর পলিথিন ব্যবহার বন্ধ না করায় ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে ভুগছে মানুষ। 

২ টাকা থেকে ২ কোটি টাকার যেকোন পণ্যই বাসাবাড়িতে পৌঁছাতে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন। বিনা পয়সায় মিলছে বাহারি রঙের ব্যাগ। আর মাত্র একবার ব্যবহারের পরই তা ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে।  

রাজধানীর ইসলামবাগের নামাপাড়া। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই অবৈধ পলিথিন কারখানা। তবে ক্যামেরায় কথা বলতে রাজি নয় কেউ। এছাড়া লালবাগ, চকবাজার, সূত্রাপুর, হাজারীবাগ, আরমানিটোলা, চানখাঁরপুল, কামরাঙ্গীর চরসহ সারা দেশে ছোট-বড় তিন হাজার পলিথিন কারখানায় দিনে ১ কোটি ৪০ লাখ পলিথিন ব্যাগ তৈরি হয়। 

দোকান থেকে বাড়ি বা প্রতিষ্ঠান হয়ে এই পলিথিনের একটি অংশ ব্যবহার হয় পুনরুৎপাদনে। আর বেশির ভাগটাই চলে যায় ডোবা-নালা নয়তো মাটিতে। 

পলিথিন আধুনিক ব্যস্ততম জীবনের অন্যতম অনুসঙ্গ। গবেষণা বলছে বাংলাদেশে প্রতিদিন প্রত্যেকটি পরিবার কমপক্ষে গড়ে ৪টি পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করে। আধুনিক জীবন সহজ করেছে এই পলিথিন কিন্তু বিপরীতে ভাবতে আপনার এবং আপনার পরবর্তী প্রজন্মের জীবনের অস্তিত্বকে হুমকির সম্মুখীন করছে এই পলিথিন ব্যাগ।

যেখানে সেখানে ফেলার কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ড্রেনের মুখ। নদী, নালা, খালের অধিকাংশ ভরাট করে ফেলেছে এই অপচনশীল যৌগ। ৪৫ বছরে মাটির বিভিন্ন স্তরে জায়গা করে নিয়েছে এই দানব। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্লাস্টিক বর্জ্য ৪০০ বছর পর্যন্ত জীব ও প্রকৃতির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

ক্যাপস প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড.আহমদ কামরুজ্জমান বলেন, “প্লাস্টিক ব্যবহার করে যখন এটি ফেলে দেই তখন সবার আগে নালা-নর্দমায় যায়। প্লাস্টিক দ্বিতীয় পর্যায়ে পানিকে দূষণ করছে এবং সেই দূষণ মানুষের শরীরে আসছে। তৃতীয়ত প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনার কথা চিন্তা করে এগুলো একত্রিত আমরা পুড়িয়ে দিচ্ছি তাতে দূষিত হচ্ছে বায়ু।”

বিশ্বব্যাংকের জরিপ বলছে , দেশের তিন প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনায় দিনে জমা হচ্ছে ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক ও পলিথিন।  প্লাস্টিকের নানা বিষাক্ত রাসায়নিক প্রবেশ করেছে খাদ্য শৃঙ্খলে। সহজেই ঢুকে পড়ছে মানুষের শরীরে। ছড়াচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো রোগ।

পরিবেশ মন্ত্রী বলছেন, পরিবেশ বিধ্বংসী প্লাস্টিক অপসারণ করা না হলে মাটি ও পানি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যাবে। কঠিন হয়ে পড়বে ফসল ফলানো ও মাছ চাষ। 

বন ও পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “প্লাস্টিক বর্জ্য এবং এটার ব্যবস্থাপনা শুধু পরিবেশের বিষয় নয় এটার সঙ্গে জনস্বাস্থ্য জড়িত। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে যে ২০২৬ সালের মধ্যে একবার ব্যবহারের প্লাস্টিকে চাহিদা ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনা যায়।”

সরকারের ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে পলিথিন নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই শুরু হচ্ছে যৌথ অভিযান। 

এএইচ