ঢাকা, সোমবার   ১৪ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২৮ ১৪৩১

সততার বীজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪৯ পিএম, ১৪ মে ২০২৪ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:৫৪ পিএম, ১৪ মে ২০২৪ মঙ্গলবার

ষাটোর্ধ একজন সিইও অবসর নেয়ার আগে তার স্বনামধন্য কোম্পানীর উত্তোরাধিকার হিসেবে একজন সৎ ও যোগ্য সিইও নির্বাচন করতে চাইলেন। তবে চিরায়ত নিয়মে তিনি তার পরিচালক পর্ষদ বা ছেলেমেয়েদের মধ্য থেকে কাউকে উত্তরাধিকার না করে ভিন্নধর্মী কিছু করার চিন্তা করলেন। তাই একদিন সকল এক্সিকিউটিভদের বললেন “আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপনাদের মধ্য থেকে একজন পরবর্তী সিইও নিয়োগ করবো। ”শুনে তো সবাই হতবাক! তবে আবার খুশীও হল। সিইও হওয়ার স্বপ্নে তাদের মন উৎফল্লিত হলো। তিনি বলে চললেন “আমি আপনাদের প্রত্যেককে একটি করে ‘বীজ’ দেব। এই বীজ আপনারা টবে রোপণ করবেন, পানি দিবেন, যত্ন করবেন আর ঠিক এক বছর পর তা আমার নিকট নিয়ে আসবেন। আমি তখন সেই বীজ থেকে বেড়ে ওঠা চারাগাছ দেখে বিচার করবো কে হবে পরবর্তী সিইও।”

সেইখানে অলিভার নামে একজন ছিল যে আর সবার মতই বীজ নিয়ে বাসায় ফিরলো। তার স্ত্রী একটি টব, মাটি ও সার জোগাড় করলো এবং সেই টবে অলিভার বীজটি রোপণ করলো। প্রতিদিন সে বীজটির খুব যত্ন করতে লাগল। নিয়মিত পানি দিল। সপ্তাহ তিনেক পর তার সহকর্মীরা এক অন্যের সাথে তাদের বীজ থেকে বেড়ে ওঠা চারাগাছ সম্পর্কে বলাবলি করতে লাগল। কিন্তু হায় অলিভারের বীজ থেকে তো কিছুই জন্মাচ্ছে না। এভাবে তিন সপ্তাহ, চার সপ্তাহ করে পাঁচ সপ্তাহ পার হয়ে গেল। সে নিজেকে ব্যর্থ ভাবতে শুরু করলো।

নিজের মনেই বলল “আমি বোধ হয় রোপণের সময় বীজটি নষ্টই করে ফেলেছি।” সে তার সহকর্মীদের সাথে লজ্জায় এ বিষয়ে কোন কথাও বললো না। অবশেষে একটি বছর পার হলো। কোম্পানীর সব এক্সিকিউটিগণ তাদের বড় হয়ে যাওয়া চারা গাছটি তাদের সিইও এর নিকট নিয়ে এলো। এই খালি টব নিয়ে অলিভারের পক্ষে অফিস যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু স্ত্রী তাকে যা ঘটেছে সে বিষয়ে সৎ থাকার পরামর্শ দিল এবং বললো যা সত্য তাই তোমার সিইও কে বলবে। সে আজ খুবই বিব্রত হবে – এই দুশ্চিন্তায় অলিভার অসুস্থ বোধ করতে থাকলো। কিন্তু সে এও জানে তার স্ত্রী ঠিক কথাই বলেছে। সে তার খালি টব নিয়ে বোর্ডরুমে ঢুকে দেখলো সকলের টবে কী সুন্দর সুন্দর গাছ! অলিভার তার টবটি রুমের মেঝেতে রাখল। অনেকেই হাসাহাসি করল, কেউ কেউ আবার দুঃখ প্রকাশও করলো।

সিইও রুমে এসে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পুরো রুম পরিদর্শন করলেন। “ও মাই গড, আপনারা কী সুন্দর চারাগাছ ও ফুল জন্মিয়েছেন!” হঠাৎ তার চোখ গিয়ে পড়লো অলিভারের দিকে। অলিভার লজ্জায় পেছনে কোথাও লুকানোর চেষ্টা করলো। সিইও তাকে সামনে আসতে বললেন। অলিভার খুব ভীত হয়ে পড়লো। নির্ঘাৎ সে আজ তার চাকরী হারাবে। সিইও জিজ্ঞেস করলেন “কি ব্যাপার অলিভার, আপনার বীজের কী হয়েছে?” অলিভার তাকে সব খুলে বললেন। সিইও সবাইকে বসতে বললেন, শুধু অলিভারকে বললেন দাড়িয়ে থাকতে। তিনি অলিভারের দিকে তাকিয়ে বললেন সবাই আমাদের নতুন সিইও কে ভালো করে দেখুন, তার নাম অলিভার! অলিভার নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না! সে তো কোন চারাগাছের জন্মই দিতে পারেনি! সবাই বলাবলি করলো “সে কিভাবে সিইও হলো?”

সিইও বললেন “এক বছর আগে আমি প্রত্যেককে যে বীজ দিয়েছিলাম তা সবই ছিল মৃত। কারণ সেগুলো ছিল সিদ্ধ করা। তাই কোন চারা অঙ্কুরিত না হতে দেখে হতাশ হয়ে আপনারা আমার দেয়া বীজটি ফেলে দিয়ে নতুন বীজ লাগিয়েছেন, শুধুমাত্র অলিভার সাহস ও সততার সাথে খালি টব নিয়ে এসেছে যে টবে আমার দেয়া বীজটিই রয়েছে। সবাই করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দিত করুন।”

“যদি সততা রোপণ করেন, তবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করবেন” “যদি সৎগুণ রোপণ করেন, তবে ভালো বন্ধুত্ব অর্জন করবেন” “যদি কঠোর শ্রম রোপণ করেন, তবে সাফল্য অর্জন করবেন” “যদি সুবিবেচনা রোপণ করেন, তবে আপনি যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করবেন” তাই কী রোপণ করছেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন, তা নির্ধারণ করে দিবে ভবিষ্যতে আপনি কী অর্জন করবেন। জীবনকে আপনি যা দিবেন, জীবন আপনাকে তাই ফেরত দিবে।

সূত্র-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নেয়া। 

কেআই//