ঢাকা, শুক্রবার   ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪,   অগ্রাহায়ণ ২২ ১৪৩১

বাংলা সংস্কৃতি বলয় শীর্ষক বইয়ের ৩য় সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৫৩ এএম, ২ জুন ২০২৪ রবিবার

তারকাঁটার বেড়ায় ভূখণ্ড আলাদা হয়েছে। ইচ্ছে করলেই হয়তো একে অন্যের চেহারা দেখতে পারছি না। কিন্তু বাংলা ভাষা আমাদের একীভূত করেছে। অন্যের উপলব্ধীকে ধারণ করতে শিখেছি এ ভাষার মধ্য দিয়ে। এর অন্যতম কারণ আমাদের সংস্কৃতি এক, আমাদের জানা-বোঝার পরিমণ্ডল অভিন্ন। সুতরাং বেড়া দিয়ে বাংলা আলাদা হলেও সংস্কৃতির খন্ডন হয়নি। এপার আর ওপার বাংলার নৈকট্য প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে এসব বলেন সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক নাট্যজন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। 

শুক্রবার ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিকেল থেকে গভীর অব্দি চলে আলোচনা ও সঙ্গীত অনুষ্ঠান। যার বিষয়বস্তু ছিল দুই বাংলার সাংস্কৃতিক বলয় গঠন। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা সংসদের প্রথম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন। বাংলা সংস্কৃতি বলয়ের এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের গুণী অভিনেতা একুশে টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, একাত্তর সাল আমাদের মানুষ চিনিয়েছে। যেমন বাংলা চিনেছে পশ্চিম বাংলাকে। এপারের মানুষ জেনেছে ওপারের নৈকট্যকে। মুক্তিযুদ্ধকালীর ওপার বাংলা ধারণ করেছিল আমাদেরকে। তারা শরনার্থীদের বোঝা মনে না করে সমভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধে সামিল হয়েছেন। 

বাংলা সংস্কৃতি বলয় বিশ্বকমিটির সদস্য শাহিদুল হাসান খোকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পুরো আনুষ্ঠানিকতা ছিল দুটি ভাগে বিভক্ত। যেটির দ্বিতীয় পর্বে বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার দাবি ওঠে সমস্বরে। ভারত ও বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি শিল্পী-সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিপ্রেমিদের এই সংগঠনের সম্মেলন থেকে যুথবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। 

সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে ছিল বাংলা সংস্কৃতি বলয়ের মুখপত্র বাসব’র মোড়ক উন্মোচন। সংগঠনের ঢাকা সংসদের সভাপতি শাহিদুল হাসান খোকন বলেন, এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দুই বাংলায় নতুন করে সংস্কৃতি চর্চা শুরু হবে। চলমান ক্রান্তিকালে বাংলা বলয়ের খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। কারণ চারপাশে বাংলাকে কলঙ্কিত করার নতুন ষড়যন্ত্র চলছে। তাই সজাগ হতেই এমন উদ্যোগ। 

মোড়ক উন্মোচন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম, মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি, একুশে টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রিয় নেতা ড. অখিল পোদ্দার, বাংলা সংস্কৃতি বলয়ের বিশ্ব কমিটির সভাপতি সেবক ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহতাব সুমনসহ বিশিষ্টজনরা। 

আলোক প্রজ্বলন করে সম্মেলনের প্রথমপর্ব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। এ সময় প্রখ্যাত বাউলশিল্পী কাজল দেওয়ানসহ দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনরাও উপস্থিত ছিলেন। নাট্যজন লেখক ও আবৃত্তিশিল্পী পীযূষ আরও বলেন, এক সময় এদেশে রবীন্দ্রনাথ নিষিদ্ধ ছিল। রবীন্দ্র চর্চার ওপর এক ধরণের কালিমা লেপনের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু মানুষের আন্দোলনের ফলে সে অপচেষ্টা বন্ধ হয়েছে। কারণ নজরুল কিংবা রবীন্দ্রনাথ কাঁটাতারে আবদ্ধ নয়। এটি বাঙালির আবহমান চেতনা। এক ছাদের নিচে সাংস্কৃতিক বলয় গঠনের প্রতিপাদ্য তুলে ধরেন তিনি। বলেন-সাপ্তাহিক সাংস্কৃতি হাটের ফলে বাংলা আরও ঋদ্ধ হবে, সমৃদ্ধ হবে এপার ওপার। 

 দ্বিতীয় পর্বে মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, জাতিসংঘে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি-অন্যান্য দেশের ভাষার তুলনায় আমাদের বাংলা অনেক সমৃদ্ধ। এ ভাষার শিল্প, সাহিত্য ও সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। আমরাই একমাত্র জাতি যারা নিজেদের ভাষার অধিকারের জন্য জীবন দিয়েছি। আমরা বাংলাকে জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানাচ্ছি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যরাও বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার দাবি জানান।