ঢাকা, শুক্রবার   ০৪ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ১৮ ১৪৩১

বিশ্ব রক্তদাতা দিবস পালিত হচ্ছে ১৪ জুন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০১ পিএম, ১৩ জুন ২০২৪ বৃহস্পতিবার

নিরাপদ রক্ত নিশ্চিতকরণ ও স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের উৎসাহ দিতেই গত ২০ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। নোবেলবিজয়ী জীববিজ্ঞানী ও চিকিৎসক কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার ১৯০০ সালে প্রথম রক্তের গ্রুপ আবিষ্কার করেন। এটি চিকিৎসাশাস্ত্রে অনন্য একটি আবিষ্কার। তার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার জন্মদিন ১৪ জুনকে এ দিবস পালনের জন্যে বেছে নেয়। 

ডব্লিউএইচও এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, ১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। ডব্লিউএইচও এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, 20 years of celebrating giving: thank you blood donors!সহজ বাংলা করলে দাঁড়ায়- ‘দিবস উদযাপনের ২০ বছর : ধন্যবাদ হে রক্তদাতা!’।

আন্তর্জাতিকভাবে এ বছর বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজক দেশ ইতালি। স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের উদ্বুদ্ধ করতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে উদযাপিত হচ্ছে দিনটি। 

আমাদের দেশে দিবস পালনে সরকারি বেসরকারি নানা উদ্যোগের পাশাপাশি এবারও এগিয়ে আসছে পাঁচ লক্ষাধিক সুসংগঠিত ডোনার পুল নিয়ে গঠিত কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। জুনের শুরু থেকেই মোবাইল ক্যাম্প, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রক্তদান কর্মসূচি আয়োজনসহ নেয়া হয়েছে নানাবিধ উদ্বুদ্ধকরণ উদ্যোগ। দিবসটি ঘিরে তিন দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠন। ১২ জুন বিকেল থেকে রাজধানীর কাকরাইলের আইডিইবি ভবনে স্বেচ্ছা রক্তদাতা ও রক্তগ্রহীতার মিলনমেলা এবং বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে। ১৩ জুন আয়োজন করা হচ্ছে যারা স্বেচ্ছাসেবী অর্থাৎ রক্তদানে মানুষকে যারা উদ্বুদ্ধ করেন এবং বিভিন্ন স্থানে ব্লাড ক্যাম্প আয়োজন করেন তাদের নিয়ে বিশেষ উদ্বুদ্ধকরণ অনুষ্ঠান। এছাড়া ১৪ জুন রক্তদাতা দিবসে কোয়ান্টাম ল্যাবে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলবে বিশেষ রক্তদাতা উৎসব। ল্যাবে গিয়ে রক্তদান করলে রক্তকে একাধিক উপাদানে ভাগ করে একাধিক রোগীকে সেবা দেয়া যায়। তাই ল্যাবে গিয়ে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করতেই এমন আয়োজন করা হয়।  

সাধারণত থ্যালাসেমিয়া ছাড়াও রক্তস্বল্পতা, প্রসূতির রক্তক্ষরণ, অগ্নিদগ্ধ রোগী, বড় অপারেশন, দুর্ঘটনা ইত্যাদি নানা কারণে রক্তের প্রয়োজন হয়। রক্তের কোনো বিকল্প নেই। রক্তের প্রয়োজনে রক্তই দিতে হয়। শারীরিক মানসিকভাবে আপাত সুস্থ ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী যেকোনো সক্ষম ব্যক্তি প্রতি চার মাস পরপর রক্ত দিতে পারেন। নিয়মিত রক্তদানে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণেরও বেশি কমে যায়। এমনকি আত্মিক-আধ্যাত্মিকভাবেও এর উপকার লাভ করেন দাতা। 

আমাদের দেশে পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের উপর নির্ভরতা দিন দিন কমছে, স্বজনদের দানের পরিমাণও বেড়েছে। তবে প্রয়োজনীয় রক্তের চাহিদা আমরা এখনও মেটাতে পারছি না। অথচ রক্তদানের জন্যে ঐকান্তিক ইচ্ছাই যথেষ্ট। ধর্মীয়ভাবেও এ দান অত্যন্ত পূণ্যের কাজ। আর সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে রক্তচাহিদা পূরণে সঙ্ঘবদ্ধ সচেতনতাকে সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন। একটি জনগোষ্ঠীর অল্প কিছু অংশ সামর্থ্যবান মানুষ যদি নিয়মিত রক্তদান করেন তাহলেই রক্তের অভাবে কোনো মানুষের মৃত্যু হয় না। নিয়মিত ছোট্ট এই দান নতুন করে হাসি ফোটাতে পারে লাখো মানুষের জীবনে।
আমাদের দেশে বছরে রক্তের চাহিদা আনুমানিক ৮-১০ লাখ ইউনিট। অথচ বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় রক্তের এ চাহিদা একেবারেই নগণ্য। তা হলেও এখনও আমরা স্বেচ্ছা রক্তদানে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। রক্তের প্রয়োজন মেটাতে যেহেতু কেবল রক্তই দিতে হয়; সেহেতু ব্যাপক জনসচেতনতার মাধ্যমে স্বেচ্ছা রক্তদাতা বৃদ্ধিই রক্তের এ চাহিদা মেটানো সম্ভব।

রক্তদানের নানা উপকার 
রক্তদানে নানা উপকার পেতে পারেন দাতা। রক্ত দিলে শারীরিকভাবে মেরুমজ্জার রিজুভিনেশান বা স্টিমুলেশান, হৃদরোগ/স্ট্রোকের ঝুঁকি কমবে দিগুনেরও বেশি, ক্ষতিকর কোলেস্টরেল কমা, বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়া থমকে যাওয়া ইত্যাদি লাভ পেতে পারেন একজন রক্তদাতা। সামাজিকভাবে পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের উপর নির্ভরশীলতা কমানো, রক্ত নিয়ে ব্যবসা কমানো, সমাজে ঘাতক রোগের বিস্তার কমানোসহ, সামাজিক সম্প্রীতির বন্ধন বৃদ্ধি করতে রক্তদানের ভূমিকা রয়েছে। রক্তদানের মাধ্যমে বিনা খরচে ‘ভালো আছি’ তৃপ্তিবোধ করতে পারা এবং অপার আনন্দের অনুভূতি উপভোগ করা যায়। 

যারা রক্ত দিতে পারবেন না
সাধারণত ৫ টিটিআই বাহক, থ্যালাসেমিয়ার রোগী, লিউকেমিয়ার রোগী, হাইপোপ¬¬াস্টিক এনিমিয়া, হিমোফিলিয়া, হৃদরোগ, ¯œায়ুবিক রোগ, থাইরোটকসিকোসিস, এমফাইসেমা, ইনসুলিন নির্ভর (টাইপ-১) ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তদান করতে পারবেন না। 

এক ব্যাগ রক্তে চাহিদা মিটতে পারে একাধিক রোগীর
রোগভেদে একেক রোগীর জন্যে রক্তের একেক উপাদান লাগে। রক্তদানের পরপরই উন্নত প্রযুক্তির মেশিনে রক্ত উপাদানগুলো যথাযথভাবে পৃথক করা গেলে এটি সম্ভব। এক্ষেত্রে রক্তদাতাকে সরাসরি ল্যাবে গিয়ে রক্তদান করতে হবে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মতো উন্নত ল্যাবে নিরাপদ ও দ্রুত সেবাদানের নিমিত্তে আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে একব্যাগ রক্তকে ৮টি উপাদানে আলাদা করার ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন- ১. প্লাটিলেট কনসেনট্রেট ২. ফ্রেশ প্লাজমা ৩. ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা ৪. প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা ৫. প্লাটিলেট পুওর প্লাজমা ৬. প্রোটিন সলিউশন ৭. রেড সেল কনসেনট্রেট এবং ৮. ক্রায়ো-প্রিসিপিটেট। তার মানে এক ব্যাগ রক্তকে একইসাথে কাজে লাগানো যাচ্ছে  কয়েকজনের প্রয়োজনে।

ধর্মীয়ভাবে রক্তদান অত্যন্ত পুণ্যের 
সকল ধর্মেই মানব কল্যাণ একটি বড় এবাদত। রক্তদান উত্তম কাজ। এটি স্রষ্টার সস্তুষ্টি এবং হক্কুল ইবাদ। এটি অর্জন সম্ভব রক্তদানের মাধ্যমে। পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘যখন কেউ নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল। আর যখন কেউ কোনো মানুষের জীবন রক্ষা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতির জীবন রক্ষা করল।’ বাইবেলে বলা হয়েছে, সৎকাজ সম্পর্কে জানার পরও তা থেকে বিরত থাকা পাপ। (যাকোব ৪:১৭)। ঋগবেদে বলা হয়েছে, নিঃশর্ত দানের জন্যে রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব। সব ধর্মেই দানকে উৎসাহিত করা হয়েছে। আমরা বলতে পারি যত ধরনের দান আছে তার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ দান।

কেআই//