যেভাবে সংস্কারকের ভূমিকা থেকে সরে কর্তৃত্ববাদী শাসক আসাদ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৯:১৯ পিএম, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ রবিবার

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়া। টানা ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে ধন-মান-ঐতিহাসিক পুরাকীর্তিতে সমৃদ্ধ দেশটি বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইতিহাসের ভয়াবহতম মানবিক সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছে দেশটিকে। দীর্ঘ এই গৃহযুদ্ধে সিরিয়ায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। উদ্বাস্তু হয়েছে দেশটির প্রায় অর্ধেক মানুষ। ইতিহাসের সবচেয়ে করুণ মানবিক সংকট শুরু হয় সিরিয়ায়।
এমন অবস্থায়, বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের অতর্কিত অভিযান ও একের পর এক শহর দখলের মুখে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ছেড়ে পালিয়েছেন দেশটির দুই যুগেরও বেশি সময়ের প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। রোববার সকালে বিদ্রোহীদের অভিযানের মুখে বাশার আল-আসাদ দামেস্ক ছাড়লেও কোথায় গেছেন, সেটা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। আর সিরিয়া থেকে বাশার আল আসাদ পালানোর সাথে সাথে দেশটিতে পতন হয়েছে আসাদ পরিবারের ঐতিহাসিক ৫৪ বছরের শাসনামল।
১৯৭০ এর দশকে সিরিয়ার ক্ষমতার কেন্দ্রতে আসে আসাদ পরিবার। একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন আরব সোশ্যালিস্ট বাথ পার্টির নেতা হাফিজ আল-আসাদ। তাকে ‘আধুনিক সিরিয়া’র রূপকার বলা হয়। ১৯৭০ সালে নিজ রাজনৈতিক গুরু ও সিরীয় নেতা সালাহ আল-জাদিদকে সরাতে অভ্যুত্থান ঘটান হাফিজ। পরের বছরই সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন তিনি।
এরপর টানা ২৯ বছর ক্ষমতায় থেকে ২০০০ সালের ১০ জুন দামেস্কে মারা যান হাফিজ। তার মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসেন তাঁর ছেলে বাশার আল-আসাদ। এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্মের শাসনের সূচনা হয়।
১৯৬৫ সালে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে বাশারের জন্ম। চোখের চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বাবার উত্তরসূরি হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন বাশার আল-আসাদ। এরপর থেকেই সিরিয়ার রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যায়।
শাসনামলের শুরুর দিকে বাশার সংস্কারের ভূমিকা রাখেন। প্রশাসনিক-রাজনৈতিক সংস্কারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক উদারীকরণের পথে হাঁটেন। তবে পরিস্থিতি ক্রমেই বদলে যায়। সংস্কারকের ভূমিকা থেকে আসাদ কর্তৃত্ববাদী শাসক হয়ে উঠতে শুরু করেন।
২০১১ সালের মার্চে সিরিয়ার দক্ষিণের শহর দেরাতে প্রথম সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ দমাতে সরকারি বাহিনীকে মাঠে নামান বাশার। ব্যাপক দমন–পীড়নের মুখে বিক্ষোভকারীরা বাশারের পদত্যাগের দাবি তোলেন। এতে বেড়ে যায় দমন–পীড়ন। সেই সঙ্গে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে পুরো সিরিয়ায়।
দীর্ঘ এ লড়াইয়ে আসাদের পাশে ছিল মিত্র ইরান ও রাশিয়া। লেবাননের হিজবুল্লাহও আসাদের বেশ ঘনিষ্ঠ। এতে পশ্চিমা শক্তিগুলোর ঘোর আপত্তি। বেসামরিক মানুষের নির্বিচার মৃত্যু, ২০১৪ সালের সাজানো নির্বাচন, বেসামরিক মানুষের ওপর রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহারসহ বিভিন্ন কারণে তুমুল বিতর্কিত ও সমালোচিত বাশার।
এমবি