ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ আগস্ট ২০২৫,   ভাদ্র ১১ ১৪৩২

মাথায় গুলি নিয়েই না ফেরার দেশে জুলাই আন্দোলনে আহত হৃদয়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪৮ এএম, ৫ এপ্রিল ২০২৫ শনিবার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে দীর্ঘদিন যন্ত্রণায় ভোগার পর মারা গেলেন মো. আশিকুর রহমান হৃদয় (১৭)। গতকাল শুক্রবার (৪ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

নিহত হৃদয় পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার পশ্চিম যৌতা গ্রামের রিকশাচালক আনসার হাওলাদারের ছেলে। পেশায় শ্রমিক ছিলেন তিনি এবং রাজধানী ঢাকায় কাজ করতেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন হৃদয়। মাথায় লাগে তিনটি গুলি। ঘটনার পর ভয়ে আত্মগোপনে থেকে গোপনে চিকিৎসা নেন তিনি। পরে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা দুটি গুলি অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ করতে পারলেও, তৃতীয়টি বের করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি।

হৃদয়ের পরিবারের দাবি, গুলির আঘাতে হৃদয়ের মাথায় প্রায়শই তীব্র ব্যথা হতো, হঠাৎ জ্বর আসত এবং তিনি মানসিকভাবে অস্থির থাকতেন। গত বুধবার আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে শুক্রবার দুপুরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তবে অবস্থার অবনতি হওয়ায় বরিশালে পাঠানোর পরামর্শ দিলেও সময়মতো নেওয়া সম্ভব হয়নি। বিকেল ৩টার দিকে তিনি মারা যান।

হৃদয়ের বাবা আনসার হাওলাদার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “অর্থাভাবে ছেলের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারিনি। একমাত্র সম্বল রিকশা আর একটা গরু বিক্রি করে চিকিৎসার চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিদেশে নিতে পারিনি বলে আমার ছেলে মারা গেছে। নতুন সরকার আসার পরও কেউ খোঁজ নেয়নি।”

হৃদয়ের বড় ভাই মো. সোহাগ ইসলাম আনিস বলেন, “ভাইয়ের মাথায় থাকা গুলির কারণে দীর্ঘদিন ধরে কষ্ট পাচ্ছিল। উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো তাকে বাঁচানো যেত। কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেনি।”

এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আ. রউফ বলেন, “হৃদয়কে দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। তার অবস্থা গুরুতর ছিল। বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু পরিবার যথাসময়ে নিতে পারেনি। বিকেল ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।”

এসএস//