ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ১৬ ১৪৩২

‘১৫ বছর পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছিল’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৪১ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ মঙ্গলবার | আপডেট: ০১:৪৩ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ মঙ্গলবার

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিগত ১৫ বছর পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছিল। অবৈধ আদেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশ বাহিনী জনরোষের শিকার হয়, যার কারণে অনেক সৎ অফিসারকেও মাশুল দিতে হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে, পুলিশ এই স্বপ্ন পূরণের মূল শক্তি। এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো স্বৈরাচার আমলে পুলিশ জনগণের মধ্যে যে দূরত্ব সৃষ্টি করা হয়েছিল তা কমিয়ে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা, মানুষ ও পুলিশের মধ্যে দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলা, যাতে মানুষ পুলিশকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে

সুষ্ঠু নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের আগের সময়টা অনেকটা কঠিন। তাই পুলিশকে সজাগ থাকতে হবে পরাজিত শক্তি যেন কোনভাবেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে।

তিনি বলেন, সর্বস্তরের মানুষের অধিকার, মর্যাদা, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে কোনো বৈষম্য থাকবে না যুগ যুগ ধরে এটি ছিল মানুষের আকাঙ্ক্ষা। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণে জোর ভূমিকা রাখতে হবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

দেশের আইনশৃঙ্খলা এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, স্বৈরাচার পতনের পর পুলিশ বাহিনী ভেঙে পড়েছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশকে উজ্জীবিত করতে। পুলিশের কাজের সহায়ক পরিস্থিতি যাতে তৈরি হয়, সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

পুলিশ সপ্তাহে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গত আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করে সে সময় এ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভঙ্গুর অবস্থায় ছিল। পুলিশের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। সরকার পরিস্থিতি উন্নতির জন্য যা কিছু প্রয়োজন সব রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। 

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সর্বোচ্চ সংবেদনশীল হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নিরাপত্তার দিক থেকে দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। নারী ও শিশু নিরাপত্তা পেলেই দেশ আরও এগিয়ে যাবে। সব স্তরের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় পুলিশকে ভূমিকা পালন করতে হবে।
 
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নায্যতার ভিত্তিতে গঠিত বৈষম্যমুক্ত দেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছি। আমরা দ্বিতীয় বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন দেখছি, জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে। এই সুযোগ যেন আমরা না হারাই। এবার ব্যর্থ হলে ভবিষ্যৎ প্রজম্মের কাছে চিরজীবনের জন্য দায়ী থাকবো।

তিনি বলেন, ‘আমরা একটা যুদ্ধাবস্থায় আছি। অশুভ শক্তি আমাদের স্বপ্ন ও ঐক্য ভেঙে দিতে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে চেষ্টা করছে। একে প্রতিহত করতে পুলিশকে সজাগ থাকতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়, সেজন্য পুলিশের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রতি সমান আচরণ ও ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা পুলিশের দায়িত্ব।

‘ভবিষ্যতে যাতে পুলিশ বাহিনীকে দলীয় বাহিনী ও অন্যায় কাজে ব্যবহার করা না যায় সেজন্য সুষ্ঠু নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচনের আগের সময়টা অনেকটা কঠিন, পুলিশকে সজাগ থাকতে হবে পরাজিত শক্তি যেন কোনভাবেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে,’ যোগ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, আইজিপিসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এএইচ