ঢাকা, রবিবার   ০৪ মে ২০২৫,   বৈশাখ ২১ ১৪৩২

নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে জাবিতে তোলপাড়

সাভার প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০২:০৭ পিএম, ৪ মে ২০২৫ রবিবার

জাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন ঘিরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ইতিমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বহিরাগতদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে । এমনকি তথ্য সংগ্রহে সাংবাদিকদের প্রবেশেও দেওয়া হয়েছে বাধা। 

নির্বাচন ও নিরাপত্তার বিষয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়হীনতার কথা বলছে। 

এ নিয়ে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র আলোচনায় আসন্ন নির্বাচনে শঙ্কার কথাও জানিয়েছে। এ ব্যাপারে নিরাপত্ত্বার দায়িত্বে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বললে তারা একে অপরের উপর দায়সারা বক্তব্য দিচ্ছেন।
 
এ নিয়ে সরেজমিনে প্রতিবেদন করতে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।

শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় শনিবার হতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ নিয়ে শনিবার হতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে নিরাপত্তা কর্মীদের বিভিন্ন ফটকে বহিরাগতসহ সাবেক শিক্ষার্থীদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি প্রতিবেদন করতে গেলে কর্তৃপক্ষের কথা তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেটে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয় সাংবাদিকদেরও।

কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মী মোঃ শরীফ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মতে বহিরাগতসহ সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধ করা হয়েছে। প্রবেশ করতে হলে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে অনুমতি নিতে হবে। 

কর্তৃপক্ষ কে? এমন প্রশ্নে তিনি নিরাপত্তা কর্মকর্তা আবু সলিম জিন্নাহর কথা উল্লেখ করেন।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবু সলিম জিন্নাহর সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে নিরাপত্তা কর্মীকে নির্দেশের কথা স্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে মুঠোফোনে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রাশিদুল আলমের সাথে, তিনি বলেন সাংবাদিকের প্রবেশে এ ধরনের কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। কথা বলেন নিরাপত্তা কর্মী মোঃ শরীফের সাথে। পরে খাতায় এন্ট্রি করে অভ্যন্তরে প্রবেশ করানো হয়।

এ ব্যাপারে পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ৫২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী অনন্যা রহমান প্রিয়ন্তী একে চোর-পুলিশ খেলার মতো আখ্যা দিয়ে বলেন, এটা এভাবে না করে একটি নিয়মতান্ত্রিক শৃঙ্খলার মধ্যে করা উচিত। 

নিয়মতান্ত্রিক নির্দিষ্ট নিয়মনীতির কথা বলেন ৫৩ ব্যাচের ল’এর শিক্ষার্থী শাফায়েত জামিল ভুইয়া ও মার্কেটিং বিভাগের ৫২তম ব্যাচের সাইফ আহমেদ রাফি। তারা প্রশাসনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনেরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
 
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জাবি শাখার সংগঠক সজিব আহমেদ জেনিক্স বলেন, গঠনতন্ত্রের সমালোচনা করে জাকসু নির্বাচনের শঙ্কার কথা জানান। তড়িঘড়ি করে জাকসু নির্বাচনের তফসিল বর্তমান সংশ্লিষ্টদের ক্ষমতার অপব্যবহারের সংশয় ও শঙ্কা করেন তিনি। জাকসুর অজুহাতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সমালোচনাও করেন তিনি।

জাবি সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ফাইজা মেহজাবিন প্রিয়ন্তী বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় পাবলিক বিশ্ববিদ‍্যালয় হিসেবে কতটুকু যুক্তিযুক্ত সে ব্যাপরটিও বিবেচনায় রাখতে হবে প্রশাসনকে। প্রশাসন জাকসু নির্বাচনের কথা বলছে মুখে তবে পদক্ষেপের ব্যাপারে আদৌ কতটুকু আন্তরিক তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। 

জাবি ছাত্রদল সভাপতি জহির উদ্দিন মোঃ বাবর অভিযোগ করে বলেন, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত অধিকাংশ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও ফ‍্যাসিস্টদের দোসর। তারা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় না করে নানরকম বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। 

এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সাথে এমন আচরণের সমালোচনা করেন এবং অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান। 

এ ব্যাপারে ক্যামেরার সামনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা (ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাবি) আবু সলিম জিন্নাহকে প্রশ্ন করা হলে তিনি একেক সময় একেক কথা বলেন। 

তবে সকল সংশয় শঙ্কা কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনদের সাথে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের পথ তৈরি হোক ও আগামী ৩১ জুলাই গণতান্ত্রিক ধারায় জাকসু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক এমনটি প্রত্যাশা সকলের।

এএইচ