দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান, নির্বাসিত জীবন শেষে মাতৃভূমিতে জোবাইদা রহমান
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০২:২৬ পিএম, ৬ মে ২০২৫ মঙ্গলবার | আপডেট: ০২:২৯ পিএম, ৬ মে ২০২৫ মঙ্গলবার

ডা. জোবাইদা রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারেক রহমানের সঙ্গে ঢাকা ছেড়েছিলেন জোবাইদা রহমান। এরপর আর দেশে ফেরা হয়নি তার। দীর্ঘ বছর স্বামীর সঙ্গে পরবাসেই থাকতে হয়েছে তাকে। তবে, সেই নির্বাসিত জীবনের অবসান হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই পুত্রবধূর।
আজ মঙ্গলবার লন্ডন থেকে দুই পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান ও প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথিকে নিয়ে দেশে ফিরেছেন খালেদা জিয়া। এরই সঙ্গে শেষ হলো লন্ডনে জোবাইদা রহমানের ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন।
এর আগে বেলা ১০টা ৪০ মিনিটে কাতারের আমিরের পাঠানো একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। পরে ১১টার দিকে বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজার পথে রওয়ানা হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। শাশুড়ির সঙ্গে বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে করে রওনা হন জোবাইদা। এ সময় খালেদা জিয়াকে গাড়ির সামনের সিটে বসে থাকতে দেখা যায়। আর পেছনের সিটে হাসিমুখে বসা ছিলেন দুই পুত্রবধূ জোবাইদা ও শর্মিলা।
আর এর মাধ্যমে লন্ডনে ১৭ বছর নির্বাসনের জীবন শেষে দেশে ফেরার সুযোগ হয়েছে জোবাইদা রহমানের।
জানা গেছে, ধানমন্ডিতে বাবার বাড়ি মাহবুব ভবনে উঠবেন জোবাইদা। মাহবুব ভবন তার প্রয়াত বাবা সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের বাসভবন। পৈতৃক বাড়িতে জোবাইদাকে স্বাগত জানানোতে সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। দেশে ফিরে তিনি নিজের অসুস্থ মায়ের সঙ্গে থাকবেন।
এর আগে, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুম্মান ইউএনবিকে বলেন, বাসভবনটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রস্তুতি ও সংস্কার কাজ চলছে। তিনি বলেন, জোবাইদা রহমান যেহেতু বাসায় থাকার জন্য আসছেন, তাই তিনি যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারেন সেজন্য আমরা সাজসজ্জা, সিসিটিভি স্থাপনসহ সকল ব্যবস্থা করছি।
রুম্মান বলেন, জোবাইদার আগমনের আগেই সবকিছু প্রস্তুত হয়ে যাবে। তাকে বরণ করে নিতে "মাহবুব ভবন পুরোপুরি প্রস্তুত থাকবে।
মাহবুব ভবনে বর্তমানে জোবাইদার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু এবং তার বড় বোন শাহিনা জামানের পরিবার রয়েছে। সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুকে সম্প্রতি ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রুম্মান বলেন, বাসভবনের দেওয়ালের চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং পুলিশ ও বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (সিএসএফ) মোতায়েনসহ ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাড়িটি আগে থেকেই ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। তবে, জোবাইদা রহমানের ফিরে আসার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আমরা বাড়তি ব্যবস্থা করেছি।
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেন প্রতিবেশীদের অসুবিধার কারণ না হয়। তিনি বলেন, আমাদের স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আশপাশের বাসিন্দাদের যেন কোনো অশান্তি না হয়। চেয়ারম্যান চান সবকিছু সতর্কতা ও সম্মানের সঙ্গে হোক।
রুম্মান বলেন, মাহবুব ভবনের সামনের দিকে একটি ফুলের বাগান এবং নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট গার্ড রুম রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানকালে ডা. জোবাইদার জন্য আলাদা গাড়ি ও একটি নিরাপত্তা টিমের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জোবাইদা ও তাদের মেয়ে জাইমা রহমান ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন। ১৭ বছরের মধ্যে এটাই জোবাইদার প্রথম বাংলাদেশে ফেরা।
১/১১-এর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি আইনি জটিলতার মুখোমুখি হন।
২০০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কাফরুল থানায় তারেক রহমান, জোবাইদা রহমান ও তার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
পরে জোবাইদাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন ঢাকার একটি আদালত। ২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই সাজা ও জরিমানা স্থগিত করা হয়।
১৯৭২ সালের ১৮ মে সিলেটে জন্ম নেওয়া জোবাইদা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করার পর বাবা-মায়ের আগ্রহে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন।
জোবাইদা ১৯৯৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
তিনি সর্বোচ্চ মেধার সঙ্গে এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৯৫ সালে বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। জোবাইদা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস-স্বাস্থ্য) পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।
২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটিতে লন্ডনে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার সরকার তাকে তার পদ থেকে বরখাস্ত করে।
লন্ডনে যাওয়ার পর জোবাইদা ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
এমবি//