ঢাকা, সোমবার   ১২ মে ২০২৫,   বৈশাখ ২৯ ১৪৩২

নিষিদ্ধের পর হতাশায় আ’লীগের নেতাকর্মীরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৭:৪৭ পিএম, ১১ মে ২০২৫ রবিবার

বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ বর্তমানে এক গভীর সংকটের মুখে। গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরুর আগেই দলটির সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নিষেধাজ্ঞার আওতা শুধু মাঠের রাজনীতি নয়, সম্প্রসারিত হয়েছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সাইবার জগতেও আওয়ামী লীগের যে কোনো ধরনের প্রচার, সংগঠন বা কার্যক্রম কঠোরভাবে রোধ করা হবে।

এই পরিস্থিতিতে দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা পড়েছেন চরম হতাশায়। একসময় যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলীয় প্রচারে সক্রিয় ছিলেন, তারাও এখন চুপচাপ। কেউ কেউ তাদের ফেসবুক টাইমলাইন, ইউটিউব চ্যানেল বা টেলিগ্রাম গ্রুপের কনটেন্ট গোপন করেছেন বা মুছে ফেলেছেন। কারণ, সাইবার গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি কঠোর।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সাবেক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "এই নিষেধাজ্ঞা আমাদের শুধু সাংগঠনিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও দুর্বল করে দিয়েছে। আমরা বুঝে উঠতে পারছি না—এখন কোন পথে এগোবো।"

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এক তরুণ নেতা বলেন, "আমরা কোনো দিক থেকেই সংগঠিত হতে পারছি না। এমনকি নিজের মতও প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছি। কারণ এখন অনলাইনে কিছু বললেই গ্রেপ্তার বা নজরদারির শিকার হওয়ার আশঙ্কা আছে।"

আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ, যেগুলোর মাধ্যমে আগে দলীয় বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হতো, এখন অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। কয়েকটি গ্রুপ প্রশাসনিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সাইবার নিরাপত্তা সেল। দলটির সমর্থনে চালু থাকা ইউটিউব চ্যানেলগুলোর ওপরও নজরদারি চলছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, শুধু দলীয় নামেই নয়—আওয়ামী লীগের ভাবধারা বা প্রচারণামূলক কনটেন্ট ছড়ালেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, "যেহেতু বিচারাধীন মামলায় দলটি নিষিদ্ধ, তাই আইনের চোখে এখন তাদের পক্ষ নেওয়া মানে বিচারপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা।"

সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন নেতৃত্বহীনতা, সাংগঠনিক জড়তা এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার এক বিপর্যস্ত পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। মাঠে নামার সুযোগ নেই, ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মও নজরদারিতে—এর মাঝেই তাদের টিকে থাকার লড়াই শুরু হয়েছে। তবে কতদূর তারা যেতে পারবেন, তা নির্ভর করছে বিচারপ্রক্রিয়ার গতিপথ এবং আগামী দিনের রাজনীতির গতিপ্রবাহের ওপর।

এসএস//