২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম সাত কলেজের
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:০২ পিএম, ১৭ মে ২০২৫ শনিবার | আপডেট: ০৮:১৪ পিএম, ১৭ মে ২০২৫ শনিবার

রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের প্রজ্ঞাপনের দাবিতে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
রোববারের (১৮ মে) মধ্যে দাবি না মানলে সোমবার (১৯ মে) থেকে বিগত দিনের মতো মাঠের কঠোর কর্মসূচিরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (১৭ মে) বিকেল ৪টায় ইডেন মহিলা কলেজের ১ নম্বর গেটের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এই আল্টিমেটামসহ ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন সাত কলেজের সম্মিলিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের পক্ষে যৌথভাবে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিমের সদস্য তানজিমুল আবিদ ও জাফরিন আক্তার।
সংবাদ সম্মেলনে জাফরিন আক্তার বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষার অধিকারটুকু চাই। আমরা আর রাজপথে নামতে চাই না। আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম ছেড়ে পড়ার টেবিলে ফিরে গিয়েছি। তবে রাষ্ট্র বারবার আমাদের পড়ার টেবিল ছেড়ে রাজপথে ফিরতে বাধ্য করেছে। আগামী রোববারের মধ্যে যদি অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি না হয়, তাহলে সোমবার থেকে আমরা আবার মাঠের কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো। পরবর্তী এ কর্মসূচি কেমন হবে, সেটা পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেব। একই সঙ্গে আমরা বাকি দাবিগুলোর বিষয়েও নজর রাখব। আমাদের যদি আবার মাঠে নামতে হয়, তাহলে এবার রাজপথ থেকেই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ নিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরব।
তিনি বলেন, সাত কলেজের ঢাবি অধিভুক্তি বাতিলের পর চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ইউজিসি এ কলেজগুলো পরিচালনায় একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রস্তাব করে— যে প্রশাসন অধিভুক্তি বাতিল ও নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরুর মধ্যবর্তী সময়ে দায়িত্ব পালন করবে। তবে অন্তর্বর্তী প্রশাসন বিষয়ে ইউজিসির প্রস্তাবনার আড়াই মাস পার হলেও এখনো সেটির চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি। এতদিন আমরা শুনে এসেছি, এটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় ঝুলে আছে।
তিনি আরও বলেন, শুরু থেকে আমরা একটি শ্রেণিকে সাত কলেজকে আন্ডারেস্টিমেট করার প্রবণতা লক্ষ্য করেছি। আমাদের সবকিছুতেই যেন ইচ্ছাকৃতভাবে ঢিলেমি দেওয়া হচ্ছে। সরকার সাত কলেজের এ সমস্যা সমাধানে গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দেয়। একই সঙ্গে এ সমস্যা সমাধানে তাদের চার মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু গত ৩০ এপ্রিল এ কমিটির সময়সীমা শেষ হলেও এখনো সমস্যার সমাধান হয়নি। আমরা এমন সময়ক্ষেপণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম চূড়ান্ত হওয়ার পর স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন দেওয়ার কথা থাকলেও তা কোনো এক অদৃশ্য কারণে এখনো ঝুলে আছে। অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন ও অধ্যাদেশ জারি না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র প্রশাসনিক কাঠামো, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম, পরীক্ষাসহ সবকিছুতেই আমাদের এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আমরা মনে করি, এটা একটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে।
পরিকল্পনা উপদেষ্টার আশ্বাসের কথা তুলে ধরে তানজিমুল আবিদ বলেন, শুক্রবার রাতে সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা ও বর্তমান পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সাত কলেজের জন্য প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তী প্রশাসনের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এরপর এটি এখন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে এ প্রশাসন ঘোষণা করা হবে বলে পরিকল্পনা উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। স্যার শিক্ষা উপদেষ্টা থাকার সময় থেকেই যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে আমাদের দাবি বিবেচনা করে আসছেন। আমরা স্যারের এ আশ্বাসেও ভরসা রাখতে চাই।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সাত কলেজের বৈষম্যমুক্ত করতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার পর থেকে দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনার চূড়ান্ত মুক্তি হিসেবে আমরা এ আন্দোলন শুরু করি। শুরু থেকেই আমাদের দাবি ছিল— সাত কলেজের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্তি বাতিল করে এ কলেজগুলোর সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করাসাত কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের শিক্ষার মৌলিক অধিকারের দাবিতে বারবার রাস্তায় নেমে মার খেয়েছে, রক্ত দিয়েছে, অনেকের অঙ্গহানি হয়েছে। আমরা শিক্ষার একটি সুস্থ পরিবেশ চেয়ে আসছি। ফলে অতীত অভিজ্ঞতায় বারবার রাস্তায় নামার পরিবর্তে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমর্থনে একবারে চূড়ান্ত সমাধানের পথ বেছে নিয়েছি। একই সময়ে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরাও সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আওয়াজ তুলেছেন। এখানে দুই পক্ষের শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল একই।
সংবাদ সম্মেলন থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো-
১. আগামীকাল রোববারের মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
২. অন্তর্বর্তী প্রশাসকের নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর সেশনজট নিরসনসহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে। একই সঙ্গে ভুতুড়ে ফলের সমাধান, বিভিন্ন ইস্যুতে অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধসহ যাবতীয় অসঙ্গতিগুলো স্পষ্টভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
৩. অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের পরবর্তী দুই কার্যদিবসের মধ্যে ২০২৪-২৫ সেশনের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৪. আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা এবং লোগো/মনোগ্রাম প্রকাশ করতে হবে।
৫. আগামী এক মাসের অর্থাৎ আগামী ১৬ জুনের মধ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। একই সঙ্গে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেটে নবগঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর সরকারি সাতটি কলেজগুলো হলো- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, শহিদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ এবং সরকারি তিতুমীর কলেজ।