ঢাকা, সোমবার   ১৯ মে ২০২৫,   জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩২

ফারিয়ার গ্রেপ্তার নিয়ে জুলাই আন্দোলনের তারকাদেরও প্রতিক্রিয়া 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:৪৮ পিএম, ১৯ মে ২০২৫ সোমবার

ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা নুসরাত ফারিয়ার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এমন ঘটনায় শোবিজ তারকারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। প্রতিক্রিয়া জানানো অনেকেই জুলাই আন্দোলনের সময় সোচ্চার হয়েছিলেন। এসব তারকা ও কলাকুশলীরা ফারিয়াকে গ্রেফতারে করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।  

গ্রেপ্তার ফারিয়া প্রসঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। জুলাই আন্দোলনে সরব ছিলেন এই অভিনেত্রী। তিনি ফারিয়ার ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘কি এক লজ্জা। ফ্যাসিস্ট সরকার যা করেছে, সেখানে এই মেয়েটির কিছুই করার ছিল না। আমি এমন পরিস্থিতি এবং সিস্টেম সম্পর্কে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা এমন একটি দেশে বাস করি, যেখানে ন্যায্য অধিকার শব্দটা সাধারণ নয়। কিন্তু সত্যিকার ভাবেই এটা অগ্রহণযোগ্য।’

ছোট পর্দার অভিনেতা খায়রুল বাসার শিল্পী হিসেবে ফেসবুক সচেতন হয়ে নিজের মতামত দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘তিনি অভিনেত্রী। তাঁর কাজ অভিনয় করা। কোনো গল্পে যে চরিত্রটা পাবেন, সে চরিত্রের যথাযথ প্রকাশ সে করবেন; এই তাঁর কাজ। আমার ধারণা, তিনি রাজনীতি সচেতনও না। এমনকি তিনি কোন রাজনীতিও করেন না। এমনকি বিটিভিতে গিয়ে মায়া কান্নাও করেন নাই। তাহলে একটা সিনেমায় অভিনয় করাকে কেন্দ্র করে কেন এই হেনস্তা? সেখানে কেউ রাজনীতি করতে যাননি।’

বর্তমান সরকারের আয়োজনে কোনো অভিনয়শিল্পী অংশ নিলে তাদের ভবিষ্যৎ বা করণীয় কী হবে—এমন প্রশ্ন তুলে খায়রুল বাসার আরও লিখেছেন, ‘অভিনেত্রী হিসেবে একটা সিনেমায় অভিনয় করা কোনো ক্রাইম না। যদি তাই হয়, তবে নুসরাত ফারিয়ার সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। বর্তমান সরকার যদি শিল্পীদের কোন রাষ্ট্রীয় আয়োজনে ডাকেন এ ক্ষেত্রে শিল্পীদের করণীয় কী হবে, এই সরকার পরবর্তীতে অন্য সরকার তাদের হেনস্তা করবে, এই মেনে হুকুমের দাস হবে? নাকি শিল্পীরা কখনোই কোনো সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় আয়োজনের অংশ হবে না?’

পরিচালক শিহাব শাহীন লিখেছেন, ‘অবিশ্বাস্য এক আজগুবি মামলায় নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার হয়রানিমূলক।’ সেখানে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘স্বৈরাচারের দোসরদের মধ্যে অন্যতম একজন নুসরাত ফারিয়া।’ তার উত্তরে এই পরিচালক লিখেছেন, ‘একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দোসর হয়ে গেল।’

তরুণ র‍্যাপার মাহমুদ হাসান তাবীব লিখেছেন, ‘নুসরাত ফারিয়া কোনো সহিংসতা চালাননি, তিনি কোনো মিছিলেও ছিলেন না। তিনি বলেছিলেন, “প্রত্যেক মেয়ের ভেতরেই একেকজন হাসিনা আছেন।” যেহেতু তিনি শেখ হাসিনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তাই আবেগে বলেছেন। তিনি বুঝতে পারেননি শিল্পীদের কোনো রাজনীতিতে ঘেঁষতে নেই। তাঁর এই মন্তব্য শুনে কেউ হেসেছে, কেউ প্রশংসা করেছে। কিন্তু যদি সেই কথার জন্য তাকে হত্যাকারী বানানো হয়, তবে তা অসুস্থ বিচারব্যবস্থার উদাহরণ।’

কোনো শিল্পীকে সরকার কাজে ডাকলে তিনি কী করবেন, এমন প্রশ্নও তুলেছেন অভিনেতা ও পরিচালক শরাফ আহমেদ জীবন। তিনি লিখেছেন, ‘নুসরাত ফারিয়া একজন শিল্পী। সে “মুজিব”সিনেমায় অভিনয় করেছে। আরও অনেক শিল্পীই অভিনয় করেছে। অনেক শিল্পী অডিশন দিয়েছে। বাদ পড়েছে। অনেকে নানাভাবে সংশ্লিষ্ট ছিল। তাহলে তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে? আমি, ভাবছি আমার কথা! নুসরাত ফারিয়ার জায়গায় আমিও থাকতে পারতাম! আমাকে ডাকলে আমিও যেতাম। কারণ, শিল্পীর কাজ হলো যেকোনো শিল্পমাধ্যমে নিজেকে যুক্ত করা।’ তিনি এটাও লিখেছেন, ‘এমন অনেক শিল্পী আছে, যারা অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। আমার ধারণা, সাধারণ মানুষ এতে খুশি হয়েছে। কারণ, এরা আসলে প্রকৃতি শিল্পী ছিল না! এরা ছিল শিল্পীর মুখোশধারী ক্ষমতালোভী! নুসরাত ফারিয়াকে আমার অন্তত এদের দলের মনে হয়নি।’

পরিচালক আশফাক নিপুণকে সব সময় শিল্পীদের পাশে থাকতে দেখা গেছে। কোনো অন্যায় হলেই সোচ্চার হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এবারও সেভাবেই তিনি ফারিয়ার হয়ে লিখেছেন, ‘এভাবেই দিনে দিনে প্রকৃত খুনি ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা দুর্বল করতে অন্যদের সফট টার্গেট করা হয়ে আসছিল এবং করা হচ্ছে। এটাকে আর যাই হোক, সংস্কার বলে না সরকার। হত্যাচেষ্টার যে মামলা করা হলো এবং যে হত্যার সময় তিনি দেশেই ছিলেন না, সেই অভিনেতা নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেপ্তার এবং কারাগারে প্রেরণ দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই ইঙ্গিতই দেয়। আমরা জুলাই গণহত্যার সুষ্ঠু বিচার চাইছিলাম। কোনো রকম প্রহসন চাই নাই, এখনো চাই না। চিহ্নিত অপরাধীদের পালিয়ে যাওয়া বা পালাতে দেওয়া এবং ঢালাও গায়েবি মামলাবাজির নাটক বন্ধ করেন।’


এমবি//