দেশে গরু বেড়েছে কমেছে ছাগল
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৮:১৬ এএম, ২৬ মে ২০২৫ সোমবার

বছর ঘুরে আবার কুরবানির ঈদ চলে এসেছে একেবারে দোরগোড়ায়। আসন্ন ঈদে দেশে কুরবানিযোগ্য পশুর কোনো ঘাটতি হবে না। কারণ এ বছর কুরবানিযোগ্য পশুর মজুদ রয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি। গত বছর দেশে কুরবানি দেওয়া হয়েছিল ১ কোটি ৪ লাখ পশু। এবারও কুরবানির লক্ষ্যমাত্রা এর কাছাকাছি। সুতরাং চাহিদার চেয়ে কুরবানির পশু বেশিই আছে দেশে। প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অন্যদিকে গত এক বছরে দেশে গরুর সংখ্যা বাড়লেও কমেছে ছাগলের সংখ্যা। এক বছরের ব্যবধানে গরুর সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৪৪টি। আর এক বছরের ব্যবধানে ছাগলের সংখ্যা কমেছে ৭ লাখ ৬৮ হাজার ৬৭১টি।
তথ্যে আরও জানা যায়, বর্তমানে রাজশাহী বিভাগে কুরবানিযোগ্য গরু ও ছাগলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কারণ গত এক বছরে এই বিভাগে গরু-ছাগলের সংখ্যা অন্য বিভাগের চেয়ে বেশি বেড়েছে। রাজশাহী বিভাগে কুরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬টি। এই বিভাগে গত বছর গরুর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ২২ হাজার ৪০১টি। অর্থাৎ এক বছরে রাজশাহী বিভাগে গরুর সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৬০৫টি। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে এ বছর কুরবানিযোগ্য ছাগলের সংখ্যা ২৫ লাখ ৮৭ হাজার ৯৭৫টি। গত বছর ছিল ২৫ লাখ ১১ হাজার ৩৯৩টি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে রাজশাহী বিভাগে কুরবানিযোগ্য ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে ৭৬ হাজার ৫৬৪টি।
অন্যান্য বিভাগের মধ্যে গত বছরের মধ্যে কুরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা ঢাকায় বেড়েছে ৭২ হাজার ৭৫৯টি। ঢাকায় এবার কুরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা ৭ লাখ ৮ হাজার ৯৬৪টি। গত বছর ছিল ৬ লাখ ৩৬ হাজার ২০৫টি। রংপুর বিভাগে এবার গরুর সংখ্যা বেড়েছে ২৯ হাজার ৯৮৮টি। এই বিভাগে এবার কুরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা ৭ লাখ ৭৫ হাজার ২৮৬টি, গত বছর ছিল ৭ লাখ ৪৫ হাজার ২৯৮টি। ময়মনসিংহ বিভাগে এক বছরে গরু বেড়েছে ১২ হাজার ৩০টি। এ বছর এই বিভাগে কুরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা ২ লাখ ৮০ হাজার ৫১২টি, গত বছর ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার ২০৩টি। বরিশাল বিভাগে এক বছরে গরুর সংখ্যা বেড়েছে ৭ হাজার ২৪০টি। এ বছর এ বিভাগে কুরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা ৩ লাখ ২৩ হাজার ৮৬৩টি, গত বছর ছিল ৩ লাখ ১৬ হাজার ৬২৩টি। আর চট্টগ্রাম বিভাগে এক বছরের ব্যবধানে গরুর সংখ্যা বেড়েছে ৭ হাজার ৯৮টি। এ বছর এই বিভাগে কুরবানিযোগ্য গরু রয়েছে ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৫০টি, গত বছর ছিল ১২ লাখ ২৬ হাজার ৯৫২টি।
তবে এক বছরের মধ্যে খুলনা বিভাগে কুরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা কমেছে ২৩ হাজার ৯১৩টি। গত বছর এই বিভাগে গরু ছিল ৫ লাখ ৬২ হাজার ৩৪৪টি, এ বছর রয়েছে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৪৩১টি। এ ছাড়া এক বছরের ব্যবধানে সিলেট বিভাগে কুরবানিযোগ্য গরুর সংখ্যা কমেছে ২০ হাজার ১৪২টি। গত বছর বিভাগটিতে কুরবানিযোগ্য গরু ছিল ২ লাখ ২০ হাজার ৬৫৮টি, এবার রয়েছে ২ লাখ ৫১৬টি।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর দেশে কুরবানিযোগ্য পশুর মজুদ রয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি। গত বছর ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে দেশে কুরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা কমেছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৩০টি। এর মূল কারণ এক বছরে দেশে কুরবানিযোগ্য ছাগলের সংখ্যা কমেছে ৭ লাখ ৬৮ হাজার ৬৭১টি। গত বছর কুরবানিযোগ্য ছাগল ছিল ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ৫৮টি, এবার রয়েছে ৬০ লাখ ৮১ হাজার ৩৮৭টি।
অবশ্য এক বছরে দেশে কুরবানিযোগ্য মহিষের সংখ্যা বাড়লেও ভেড়ার সংখ্যা কমেছে। গত বছর কুরবানিযোগ্য মহিষের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ৩২টি, এবার আছে ২ লাখ ৮ হাজার ২৭৭টি। অর্থাৎ এক বছরে দেশে কুরবানিযোগ্য মহিষের সংখ্যা বেড়েছে ৪৮ হাজার ২৪৫টি।
এ ছাড়া গত এক বছরের ব্যবধানে দেশে কুরবানিযোগ্য ভেড়ার সংখ্যা কমেছে ১০ হাজার ২১০টি। গত বছর দেশে কুরবানিযোগ্য ভেড়ার সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৭৪৩টি, এবার রয়েছে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৩৩টি।
অন্যদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, আসন্ন কুরবানির ঈদে কুরবানিযোগ্য পশুর কোনো সংকট হবে না। অভ্যন্তরীণ পশু দিয়েই কুরবানির শতভাগ চাহিদা মেটানো যাবে। তাই এবার কুরবানি দেওয়ার জন্য বাইরের দেশ থেকে পশু আমদানির কোনো দরকার পড়বে না।
কর্মকর্তারা বলছেন, আমদানি বন্ধ থাকায় সারা দেশে গবাদিপশুর ফার্ম গড়ে উঠেছে প্রচুর। ছোট-মাঝারি-বড় সব ধরনের উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে দেশের ডেইরি খাতে। বর্তমানে দেশে ১৭ লাখেরও বেশি ডেইরি ফার্ম রয়েছে। এ ছাড়া ছাগল-ভেড়া ও গাড়লের ফার্মের সংখ্যাও বেড়েছে। এর ফলে গবাদিপশুর উৎপাদন বিগত কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে।
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ফার্ম) মো. শরিফুল হক সময়ের আলোকে বলেন, দেশে ডেইরি খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণ শ্রেণি এবং প্রবাস ফেরত তরুণরা ডেইরি খাতের প্রতি বেশি ঝুঁকেছেন। বেশ কয়েক বছর ধরে কুরবানির পশু আমদানি বন্ধ থাকায় দেশে গরু-ছাগল পালনও বেশ লাভজনক এখন। এতে করে তরুণ শ্রেণি আরও বেশি আকৃষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি গৃহস্থ পর্যায়ে এবং অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠানও এ খাতে বড় বিনিয়োগ করেছে। সবমিলিয়ে দেশে গবাদিপশুর খামার বেড়েছে, এ কারণেই গবাদিপশুর সংখ্যাও বেড়েছে। এর সুফল মিলছে কুরবানির সময়। দেশ এখন গবাদিপশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কুরবানির সময় পশুর কোনো সংকট হবে না, বরং কুরবানি দেওয়ার পরও ২৫ থেকে ২৭ লাখ পশু উদ্বৃত্ত থাকতে পারে।
গত বছর কুরবানির পরও উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা ছিল ২৪ লাখেরও বেশি। সুতরাং এবারের ঈদেও কুরবানির পশুর সংকট হওয়ার বিন্দুমাত্র আশঙ্কা নেই। তা হলে এত পশু থাকার পরও কুরবানির পশুর দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায় কেন বা সামর্থ্যরে মধ্যে কুরবানির পশু কেনা যায় না কেন।
খামারিরা বলছেন, গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় পশু পালনের ব্যয় বেড়েছে খামারিদের। এর প্রভাব কুরবানির পশুর ওপরও পড়ে। গো-খাদ্যের দাম এত বৃদ্ধি না পেলে হয়তো আরও কিছুটা কম দামে কুরবানির পশু কিনতে পারতেন ক্রেতারা। তবে এবার যেহেতু দেশে কুরবানিযোগ্য পশুর জোগান অনেক বেশি হবে, তাই আসন্ন ঈদে পশুর দাম ক্রেতার নাগালের মধ্যেই থাকবে বলে আমি মনে করি।
ডেইরি খাতের বিকাশের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক (উৎপাদন) ড. এবিএম খালেদুজ্জামান সময়ের আলোকে বলেন, ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হওয়া আমাদের জন্য, এ খাতের জন্য, বড় উপকার হয়েছে। একটা সময় দেখা যেত কুরবানির ঈদের সময় এলে সীমান্ত পথ দিয়ে দলে দলে গরু আসত দেশে। এখন আর সে দৃশ্য দেখা যায় না। কারণ ভারত সরকার বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ করেছে। এ সিদ্ধান্তের পর দেশের আনাচে-কানাচে যেমন ক্ষুদ্র মাঝারি খামারি গড়ে উঠেছে, তেমনই অনেক বড় বড় উদ্যোক্তা শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন এ খাতে। গত এক দশকে দেশে অসংখ্য গরু-ছাগলের খামার গড়ে উঠেছে। তার সুফল আমরা এখন পাচ্ছি। আমরা এখন গবাদিপশুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠেছি।
এসএস//