ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৯ মে ২০২৫,   জ্যৈষ্ঠ ১৫ ১৪৩২

সেদিন স্ত্রীসহ বাথরুমে ৫ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলেন ওবায়দুল কাদের, কথোপকথন ভাইরাল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৩৩ পিএম, ২৬ মে ২০২৫ সোমবার | আপডেট: ০৮:০৩ পিএম, ২৬ মে ২০২৫ সোমবার

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে পতন হয় আওয়ামী সরকারের। গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালান ক্ষমাতচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা। কেউ কেউ দেশও ছেড়েছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। 

সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ওয়ালের এক্সিকিউটিভ এডিটর অমল সরকারকে দেওয়া ওবায়দুল কাদেরের এক সাক্ষাৎকার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।

সাক্ষাৎকারে ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ওই দিন তার বাঁচার কথা ছিল না। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিন ৫ ঘণ্টা এক বাথরুমে স্ত্রীসহ লুকিয়ে ছিলেন তিনি। সেদিন বেঁচে থাকাটা পরম সৌভাগ্যের বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

ওই ভিডিওতে দেখা যায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি খুবই ভাগ্যবান, সেদিন আমার বেঁচে থাকার কথা ছিল না। মৃত্যু থেকে অনেক কাছে ছিলাম। আমারই সংসদ এলাকার আমার নিজের বাসাকে এড়িয়ে পার্শ্ববর্তী আরেকটা বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলাম। তখন চারদিক থেকে মিছিল আসছিল। এটা আসলে ছিল প্রধানমন্ত্রীর (সাবেক) গণভবন কেন্দ্রিক।’

তিনি বলেন, ‘আমি যে বাসাটায় ছিলাম, তারা সে বাসাতেও হামলা করে। তারা জানত না, যে সেখানে আমি আছি। আমার বাসা তারা ‘লুটপাট’ করেছে, কিন্তু যে বাসায় আমি গিয়ে আশ্রয় নিলাম, সেখানে হামলা করবে আমি ভাবতে পারিনি। দেখলাম অনেক লোকজন ঢুকে পড়েছে। তারা ভাঙচুর ও ‘লুটপাট’ করতে থাকে। আমি আমার স্ত্রীসহ বাথরুমে লুকিয়ে ছিলাম। অনেকক্ষণ ছিলাম, প্রায় ৫ ঘণ্টা।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমার স্ত্রী তখন বাথরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বারবার বলছিলেন যে আমি অসুস্থ, যাতে করে তাদের প্রবেশ ঠেকানো যায়। কিন্তু তারা জোরপূর্বক ভেতরে ঢোকার হুমকি দিতে থাকে, বাথরুমে কী আছে তা লুট করতে চায়। এই অবস্থায় আমার স্ত্রী আমাকে জিজ্ঞাসা করে, কী করব? আমি বললাম, দরজা খুলে দাও।’

‘এরপর ৭-৮ জন যুবক ভেতরে ঢোকে এবং তারা অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে আচরণ করতে থাকে। হঠাৎ তারা আমার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘নেত্রী তো চলে গেলেন, আপনি যাননি কেন?’ আমি তখন কিছু বলতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু এর মাঝেই তারা আচরণ পাল্টে ফেলে। কেউ একজন বলে, ‘আপনার ছবি তুলব’, তারপর শুরু হয় ছবি তোলা, কেউ কেউ সেলফিও নেয়। ধারণা করি, এদের মধ্যে অনেকেই আমাকে চিনতো।’

তিনি জানান, ‘ঠিক কী কারণে প্রথমে তাদের মধ্যে এত আক্রমণাত্মক মনোভাব ছিল, আর কেন হঠাৎ করে সেই আচরণ শীতল হয়ে গেল- তা তিনি বুঝে উঠতে পারেননি। আচমকাই তারা ঠান্ডা মাথায় কথা বলা শুরু করে। তাদের মধ্যেই একটা গ্রুপ তখন চাইছিল তাকে রাস্তায় নামিয়ে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে, আবার কেউ কেউ চেয়েছিল জনতার হাতে তুলে দিতে। এই পরিস্থিতি তার মনে গভীর চাপ ও মানসিক ভাঙন সৃষ্টি করে। এরপর তারা তাকে একটি শার্ট, লাল পতাকাসংবলিত ব্যাজ এবং মুখে কালো মাস্ক পরিয়ে সংসদ এলাকা থেকে গণভবন অভিমুখী বড় রাস্তায় হাঁটিয়ে নিয়ে যায়। হঠাৎ কোথা থেকে একটি খালি ট্যাক্সি বা ইজি বাইক এসে হাজির হয়- সেই মুহূর্তে রাস্তায় কোনো গাড়ি ছিল না। তিনি মনে করেন, এটি হয়তো তার ভাগ্যের বিষয় ছিল।’

এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাদের মধ্যে দু’জন তাকে ও তার স্ত্রীকে সেই গাড়িতে তোলে এবং পথে যেতে যেতে চারপাশের চেকপোস্ট ও লোকজনকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘চাচা-চাচি অসুস্থ, হাসপাতালে নিচ্ছি, বিরক্ত করবেন না।’ এইভাবেই তারা তাকে অনেক দূরের একটি জায়গায় নিয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘ভাবতেও পারিনি যে যারা কয়েক মিনিট আগে বাথরুমে জোর করে ঢুকেছিল, তারাই আমাদের এভাবে রক্ষা করবে। সেদিন বেঁচে যাওয়া ছিল একেবারে অপ্রত্যাশিত। এটা ছিল পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

ওবায়দুল কাদেরের সাক্ষাৎকারের সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

এএইচ