ঢাকা, সোমবার   ০৯ জুন ২০২৫,   জ্যৈষ্ঠ ২৬ ১৪৩২

‘জরুরি অবস্থা’ মোকাবেলায় জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলন শুরু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:১৫ পিএম, ৯ জুন ২০২৫ সোমবার

বিশ্ব মহাসাগরের ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে ফ্রান্সে শুরু হয়েছে জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলন। এই সম্মেলনে বটম ট্রলিং নামক সমুদ্রতলের মাছ ধরার ধ্বংসাত্মক পদ্ধতি নিষিদ্ধ করা এবং বিশ্বের অতিমাত্রায় ব্যবহৃত সামুদ্রিক অঞ্চলগুলোর সুরক্ষা জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সোমবার থেকে ফ্রান্সের নিসে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ খবর জানায় এএফপি।

জাতিসংঘের মহাসাগর সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিশ্ব নেতাদের কাছে আয়োজকরা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও অর্থ চেয়েছেন। আয়োজকদের ভাষায়, ‘উপেক্ষিত সমুদ্র এখন বৈশ্বিক ‘জরুরি অবস্থা’র মুখে। এই সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজন বাস্তব উদ্যোগ।’

এই ঐক্যের আহ্বান এমন এক সময়ে এসেছে, যখন দেশগুলো একটি বৈশ্বিক প্লাস্টিক দূষণ চুক্তি নিয়ে বিবাদ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র গভীর সমুদ্র খনন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে।

সম্মেলনের প্রাক্কালে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা বলেছেন, ‘নেতাদের এখনই কাজ করতে হবে, ‘বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ পৃথিবী আর মানতে পারছে না।’

সোমবার সম্মেলনে অনেক নতুন প্রতিশ্রুতি আসার কথা রয়েছে। এখানে প্রায় ৬০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা হাজার হাজার ব্যবসায়ী নেতা, বিজ্ঞানী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগ দেবেন।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রোববার নেতাদের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক নৈশভোজের আয়োজন করার আগে বলেছেন, ‘সমুদ্রের জন্য মানব ইতিহাসে কখনো এত মানুষ একত্রিত হয়নি।’

ট্রলিং নিষিদ্ধের দাবি

যুক্তরাজ্য তাদের সমুদ্রের সংরক্ষিত এলাকার অর্ধেক অংশে বটম ট্রলিং করাকে আংশিকভাবে নিষিদ্ধের ঘোষণা দিতে পারে। মাছ ধরার এই ধ্বংসাত্মক পদ্ধতিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সম্মেলনের মূল আলোচনার কেন্দ্র থাকবে।

গ্রিনপিস যুক্তরাজ্যের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এটি অনেক দেরি হয়ে গেছে।’

ব্রিটিশ প্রকৃতিবিদ ডেভিড অ্যাটেনবারো সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্রে ভয়ঙ্করভাবে তুলে ধরেছেন কীভাবে বটম ট্রলিংয়ের মাধ্যমে সাগরের তলদেশ জুড়ে বিশাল মাছ ধরার জাল টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। 

শনিবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ জানিয়েছেন, দেশের কিছু সংরক্ষিত সামুদ্রিক এলাকায় ট্রলিংয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। তবে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এই পদক্ষেপকে অপর্যাপ্ত মনে করে সমালোচনা করেছে।

ফরাসি পরিবেশ মন্ত্রী অ্যাগনেস প্যানিয়ে-রুনাশের রোববার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘অন্যান্য দেশগুলো নতুন সামুদ্রিক সংরক্ষিত অঞ্চল তৈরির বিষয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা’ দেবে।’

সামোয়া গত সপ্তাহে ভালো খবর দিয়েছে, তারা তাদের জাতীয় জলসীমার ৩০ শতাংশকে সংরক্ষিত ঘোষণা করেছে এবং নয়টি নতুন সামুদ্রিক পার্ক গড়ে তুলেছে।

২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ সামুদ্রিক এলাকাকে সংরক্ষণের বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এখন সংরক্ষিত রয়েছে মাত্র আট শতাংশ।

তবে মাত্র তিন শতাংশ অঞ্চলকে সত্যিকারের সুরক্ষিত বলে মনে করা হয়। কারণ কিছু দেশ সামুদ্রিক অঞ্চলে নিষিদ্ধ কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না অথবা নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করার জন্য তাদের অর্থের অভাব রয়েছে।

কথাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া

জাতিসংঘের ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের মধ্যে ‘সমুদ্র সুরক্ষা’ সবচেয়ে কম অর্থায়ন প্রাপ্ত। তাই দেশগুলোর ওপর সমুদ্র সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে চাপ পড়বে।

ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অনেকেই সম্মেলনে অংশ নেবেন। তারা সমুদ্রস্তর বৃদ্ধি, প্লাস্টিক দূষণ আর অতিরিক্ত মাছ শিকার রোধের জন্য অর্থ ও রাজনৈতিক সহায়তা চাইবে।

জলবায়ু সম্মেলনের মতো এই সম্মেলন কোনো আইনত বাধ্যবাধকতা সম্পন্ন চুক্তি তৈরি করবে না।

তবে কূটনীতিক ও পর্যবেক্ষকদের মতে, নেতারা যদি এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেন তবে বিশ্ব সমুদ্র সংরক্ষণে এটি একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

সমুদ্র সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘প্রিস্টিন সিজ’-এর প্রতিষ্ঠাতা এনরিক সালা বলেছেন, ‘জাতিসংঘের মহাসাগর সম্মেলন আমাদের জন্য এক দারুণ সুযোগ কথায় নয়, এবার কাজ দেখানোর সময় এসেছে। ’

সম্মেলনের আরেকটি অগ্রাধিকার হবে ক্ষতিকারক মাছ ধরার ভর্তুকি সংক্রান্ত একটি বৈশ্বিক চুক্তি এবং জাতীয় জলসীমার বাইরের গভীর সমুদ্র সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

এদিকে, আসন্ন জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষের বৈঠকের আগে, গভীর সমুদ্রে খনন কার্যক্রমে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে ফ্রান্স।

এএইচ