শেখ হাসিনা-কামালকে আত্মসমর্পণে নির্দেশ দিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞপ্তি
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৩:৫০ পিএম, ১৭ জুন ২০২৫ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৩:৫১ পিএম, ১৭ জুন ২০২৫ মঙ্গলবার

জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আগামী ২৪ জুন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) এ নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেন ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার। আগামী ৭ দিনের মধ্যে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চলবে।
এ সংক্রান্ত নোটিশ ইতোমধ্যে পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছে।
পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর নির্দেশক্রমে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার এ.এস.এম. রুহুল ইমরান স্বাক্ষরিত এই নোটিশটি আজ মঙ্গলবার একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশ করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, ‘শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি সত্ত্বেও তাহারা পলাতক রহিয়াছেন বা গ্রেফতার এড়াইবার জন্য আত্মগোপন করিয়াছেন। সেহেতু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ কার্যপ্রণালি বিধি অনুসারে তাহাদেরকে আগামী ২৪ জুন ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করিবার নির্দেশ দেওয়া গেল। অন্যথায়, তাহাদের অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য সম্পন্ন হইবে।’
এই মামলায় গ্রেফতার হওয়া আরেক আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন। তবে মামলার অপর দুই আসামি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক থাকায় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।
এ অবস্থায় ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর ৩১ নম্বর বিধির আওতায় পরবর্তী নির্দেশনার আবেদন করেন।
আবেদনের পর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ নির্দেশ দেয়, পলাতক দুই আসামিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে হবে। এজন্য একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেওয়া হয়।
সেই সঙ্গে মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য ২৪ জুন দিন ধার্য করা হয়েছে।
জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) গ্রহণ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
গত ১ জুন ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযোগ আমলে নেন। একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধেও ফরমাল চার্জ আমলে নেওয়া হয়।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে তিনজনের বিরুদ্ধেই মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
চার্জ গঠনের ওই দিনের শুনানি বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরের সকল গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসন সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে।
জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।
এএইচ