টাকার অভাবে আড়াই ফুট গর্তেই চলছে গোপালের চিকিৎসা
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৫৬ এএম, ২০ জুন ২০২৫ শুক্রবার

চোখে মুখে হাসির ঝলক, যেন প্রস্ফুটিত কোনো ফুল। কিন্তু সাড়ে তিন বছরের গোপাল সাঁওতালের শরীর তার সেই হাসির সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না। বসতে চায়, কিন্তু শরীর সোজা হয় না। বসালে ভাঁজ হয়ে পড়ে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার সীমান্তবর্তী মুড়াইছড়া চা-বাগানের ছোট শিশু গোপালের জীবন প্রতিদিনই এক নতুন লড়াই।
গোপাল জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। ওর বাবা অনিল সাঁওতাল চা-বাগানে দৈনিক ১৭৮ টাকা মজুরিতে কাজ করেন। পরিবারে আর কেউ নেই—ছোট্ট গোপালই তাদের একমাত্র সন্তান, একমাত্র স্বপ্ন।
সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক বলেছেন, গোপালের নিয়মিত ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন। কিন্তু শহরে নেওয়ার মতো গাড়িভাড়া, থেরাপির খরচ—সবই অনিলের সামর্থ্যের বাইরে। তাই ঘরের এক কোনে আড়াই ফুট গর্ত করে, সেই গর্তেই সনাতন পদ্ধতিতে তেল মালিশ আর লোকজ থেরাপি দিচ্ছেন বাবা-মা। এটাই গোপালের ‘চিকিৎসা কেন্দ্র’।
চা শ্রমিক ইউনিয়নের স্থানীয় এক নেতা জানালেন, “শুধু গোপাল নয়, চা-বাগান এলাকায় এ রকম শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু বহু। প্রতি ১০০ শিশুর মধ্যে প্রায় ১০-১৫ জন জন্ম নেয় কোনো না কোনো প্রতিবন্ধতা নিয়ে। চিকিৎসা তো দূরের কথা, অভিভাবকদের অনেক সময় এটিই জানা থাকে না যে, এই সমস্যার চিকিৎসাও আছে।”
আশার কথা, কুলাউড়া উপজেলা সমাজসেবা অফিস জানিয়েছে—গোপালকে দ্রুত সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনা হবে। কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন, শুধু ভাতা নয়, প্রয়োজন গোপালের পেছনে চিকিৎসা সহায়তা, নিয়মিত থেরাপি, ভালো খাবার এবং ভালোবাসার যত্ন।
গোপাল হাসছে—এই হাঁসি দেখে যেকোনো মানুষের মন গলে যাবে। কিন্তু সে হাসছে তার ভবিষ্যতের ভয় না বুঝে, তার শরীরের প্রতিবন্ধকতাকে জানার আগেই। সে জানে না, সমাজ তার মতো শিশুদের কীভাবে অবহেলার গর্তে ফেলে রাখে।
গোপালের মতো শিশুরা যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা পায়, তাহলে তাদের হাসি শুধু একটা ফুল নয়—একটা সম্ভাবনার বাগান হয়ে উঠতে পারে। আর তার জন্য দরকার সরকারি ও বেসরকারি সম্মিলিত সহায়তা, দায়িত্বশীলতা ও ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
এসএস//