যা যা আছে ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলোতে
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৬:০৯ পিএম, ২২ জুন ২০২৫ রবিবার | আপডেট: ০৮:২৮ পিএম, ২২ জুন ২০২৫ রবিবার

ইরানের পরামানু কেন্ত্রগুলোতে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সফল হামলার দাবি করলেও, ক্ষতি হবার তেমন কিছুই হয়নি বলে দাবি করছে তেহরান। তবে সারাবিশ্বের মানুষের এখন জিজ্ঞাসা কি কি রয়েছে ইরানের পরমানু কেন্দ্রগুলোতে? জেনে নেয়া যাক কতটা শক্তিশালী ছিল ইরানের এই কেন্দ্রগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংগঠন নিউক্লিয়ার থ্রেট ইনিশিয়েটিভ-এনটিআই এর তথ্য অনুযায়ী, নাতাঞ্জে ৬টি ভূ–উপরিস্থ ভবন এবং ৩টি ভূগর্ভস্থ স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে ২টি স্থাপনায় ৫০ হাজার সেন্ট্রিফিউজ রাখার ক্ষমতা রয়েছে। ইসরাইলের প্রথম হামলায় এই পারমাণবিক কেন্দ্রটি লক্ষ্যবস্তু ছিল। স্যাটেলাইট ছবি ও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নাতাঞ্জের ‘পাইলট ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট’ এর উপরিভাগ ধ্বংস হয়ে গেছে।
এই কেন্দ্র ২০০৩ সাল থেকে চালু রয়েছে। ইরান এখানে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছিল বলে, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা-আইএইএ জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, অস্ত্র তৈরির উপযোগী ইউরেনিয়ামকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত সমৃদ্ধ করতে হয়।
ইসরায়েলের হামলার সময় ২ মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ওই হামলায় নিচের স্তরে যেখানে সেন্ট্রিফিউজ রাখা হয়, সেখানকার বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যেহেতু স্থাপনাগুলোর বড় অংশই ভূগর্ভে, তাই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করাই সেখানে কার্যকর হামলার প্রধান কৌশল ছিল।
ফোর্দো স্থাপনাটি সম্পর্কে এখনো অনেক তথ্য অজানা। এটি কওম নামের একটি শহরের কাছাকাছি অবস্থিত। পাহাড়ের গভীরে নির্মিত একটি সুরক্ষিত ও গোপন স্থাপনা আছে এখানে। ইসরাইলি গোয়েন্দারা কয়েক বছর আগে ইরান থেকে যেসব গোপন নথি চুরি করেছিল, তার মাধ্যমেই মূলত এই সাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা যায়।
মূল কক্ষগুলো মাটির ৮০ থেকে ৯০ মিটার গভীরে অবস্থিত। বিমান হামলা করে একে ধ্বংস করা খুবই কঠিন। আগের বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই এত গভীরে আঘাত হানার মতো বোমা রয়েছে। যদিও বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, সেগুলো দিয়ে এই সাইট ধ্বংস না–ও হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আরেক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি-আইএসআইএস বলেছে, ‘ফোর্দো ফুয়েল এনরিচমেন্ট প্ল্যান্ট’ এ ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়ামকে, ২৩৩ কেজি অস্ত্র-মানের ইউরেনিয়ামে রূপান্তর করতে ইরানের মাত্র ৩ সপ্তাহ লাগতে পারে। এটি দিয়ে ৯টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি সম্ভব।
আএইএ’র সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফোর্দোতেও ইরান ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে। এখানে বর্তমানে প্রায় ২ হাজার ৭০০টি সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে।
ইস্ফাহান ইরানের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত। এটিই দেশটির সবচেয়ে বড় পারমাণবিক গবেষণা কমপ্লেক্স। এনটিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই স্থাপনা চীনের সহায়তায় নির্মাণ করা হয়। আর এটি চালু হয় ১৯৮৪ সালে। এনটিআই জানায়, ইস্পাহানে প্রায় ৩ হাজার বিজ্ঞানী কাজ করেন। একে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ‘কেন্দ্রস্থল’ বলে ধারণা করা হয়।
এই কেন্দ্রে চীনের সরবরাহ করা ৩টি ছোট গবেষণা চুল্লি চালু রয়েছে। সেই সঙ্গে এখানে একটি কনভার্সন ফ্যাসিলিটি, একটি জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্র, একটি জিরকোনিয়াম ক্ল্যাডিং কারখানা এবং আরও কিছু প্রযুক্তি স্থাপনা ও গবেষণাগার রয়েছে বলে জানিয়েছে এনটিআই।
এসএস//