ঢাকা, শনিবার   ২৮ জুন ২০২৫,   আষাঢ় ১৩ ১৪৩২

আন্দোলনের মধ্যেই শৃঙ্খলা রক্ষায় এনবিআরের কড়াকড়ি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫৫ পিএম, ২৭ জুন ২০২৫ শুক্রবার

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চলমান অচলাবস্থার মধ্যেই কর্মস্থলে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সংস্থাটি। দপ্তরে অনুপস্থিতি, দেরিতে পৌঁছানো বা বিনা অনুমতিতে অফিস ত্যাগ, এসব আচরণকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে সতর্ক বার্তা দিয়েছে এনবিআর।

শুক্রবার (২৭ জুন) এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আল-আমিন শেখ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মাঠ পর্যায়ের দপ্তরে সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। আন্দোলনের কারণে জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে দপ্তরে সশরীরে উপস্থিত না থাকলে সরকারি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এনবিআর জানিয়েছে, বছরের শেষ তিন কার্যদিবসে রাজস্ব আদায় ও আমদানি-রপ্তানি সচল রাখার লক্ষ্যে সব কাস্টমস হাউস, কর কমিশনারেট এবং ভ্যাট কমিশনারেটকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস ত্যাগ করতে হলে দপ্তর প্রধানের অনুমতি ও রেজিস্টারে এন্ট্রি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

একই সময়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে চলমান আন্দোলন নতুন মোড় নিচ্ছে। আগামীকাল শনিবার (২৮ জুন) ‘মার্চ টু এনবিআর’ ও ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করতে যাচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যেই এনবিআর থেকে শৃঙ্খলা বজায় রাখার এই নির্দেশনা এলো।

চলমান অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে এনবিআর সংস্কার ইস্যুতে অর্থ মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) জরুরি বৈঠক করেছে। বৈঠকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে:
১. আন্দোলন প্রত্যাহার,
২. বদলির দুটি আদেশ পুনর্বিবেচনা এবং
৩. আগামী ১ জুলাই (মঙ্গলবার) বিকেলে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, অর্থসচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবসহ ১৬ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বলা হয়, চলমান সংকট নিরসনে আলোচনার মাধ্যমে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ‘রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ সংশোধন সম্ভব হবে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার বলেন, “এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। আমরা সংস্কারের পক্ষে, তবে তা হতে হবে সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে। নিপীড়নমূলক বদলি বাতিল করতে হবে।”

১২ মে জারিকৃত এক অধ্যাদেশে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে দুটি আলাদা বিভাগ—রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা—গঠনের ঘোষণা দেয় সরকার। এর পেছনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ শর্ত অন্যতম কারণ।

এনবিআরের কর্মকর্তারা অবশ্য আলাদা বিভাগ গঠনের বিরুদ্ধে নন, তবে পদায়নে নিজেদের অগ্রাধিকার চান। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য পদ সংরক্ষণ করতে গিয়ে রাজস্ব খাতের দক্ষ জনবলকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন ও সংকট সৃষ্টির অভিযোগও তুলেছেন তারা।

সরকার মনে করছে, এনবিআরের চলমান কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটলে দেশের রাজস্ব সংগ্রহ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই দ্রুত সমঝোতার মাধ্যমে সংকট নিরসনে জোর দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এনবিআর’। সেই কর্মসূচির আগেই কর্মস্থলে উপস্থিত না থাকলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি এনবিআর যে কৌশলগত চাপ প্রয়োগ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।


এমবি//