ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৩ জুলাই ২০২৫,   আষাঢ় ১৮ ১৪৩২

শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের রূপরেখা দিল এনসিপি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:২০ পিএম, ২ জুলাই ২০২৫ বুধবার

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের রূপরেখা উপস্থাপন করেছে। বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের অষ্টম দিনের সংলাপে এই প্রস্তাব তুলে ধরে এনসিপি নেতারা।

দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, ‘বাংলাদেশে যখনই ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় হয়, তখন সরকারি দল, বিরোধী দল ও অন্যান্য দলের মধ্যে একটা সংঘাতপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এ কারণে আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে এবং ঐকমত্য কমিশনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের সুস্পষ্ট রূপরেখা দিয়েছি।’

দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য জাবেদ রাসিম বলেন, ‘ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল, সেখানে বিচারালয়কে টেনে এনে বিচারালয়কে রাজনীতিকরণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, আমরা এটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। আমরা বলেছি, রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমেই এই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার প্রশ্নের সমাধান করতে হবে।’

তাঁর প্রস্তাব অনুযায়ী, সংসদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ নিয়ে একটি ১১ সদস্যের সংসদীয় সর্বদলীয় কমিটি গঠন হবে। এই কমিটি সরকারি দল, বিরোধী দল ও অন্যান্য সংসদ সদস্যদের তিনজন করে নাম প্রস্তাব করতে বলবে, যারা প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন।

প্রস্তাবিত নয়জনের নাম জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে। সর্বদলীয় কমিটির ১১ জন সদস্য এই নয়জনের মধ্য থেকে ভোট দিয়ে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নেবেন। আট-তিন ভোটে যিনি নির্বাচিত হবেন, তিনিই হবেন প্রধান উপদেষ্টা।

এই পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত না হলে আনুপাতিক ভোট পদ্ধতিতে গঠিত সংসদের উচ্চকক্ষে ‘র‍্যাংক চয়েজ’ ভোটের মাধ্যমে একজনকে নির্বাচিত করার প্রস্তাবও দেয় দলটি।

জাবেদ রাসিম বলেন, ‘আমরা একটা পদ্ধতি দাঁড় করাতে চাই, শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের একটা প্রক্রিয়া আমরা ঠিক করতে চাই। ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় যে যুদ্ধাবস্থা, গৃহযুদ্ধের মত অবস্থা সৃষ্টি হয়, সেই অবস্থা যেন বিরাজ না করে সেই প্রস্তাব আমরা দিয়েছি। তারা (ঐকমত্য কমিশন) বিবেচনা করবে বলেছেন।’

সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে এনসিপির প্রস্তাবে বলা হয়, একটি স্বাধীন সীমানা পুনর্নির্ধারণ কমিশন গঠন করতে হবে। তবে ঐকমত্যের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি বিশেষায়িত কমিটির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে।

এ বিষয়ে আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, ‘সকল দলই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে একমত হয়েছে।’

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বৈঠকের সূচনায় বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে আশার পাশাপাশি হতাশাও রয়েছে। তবে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে একটা সনদের জায়গায় পৌঁছানো সম্ভব হতে পারে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই সনদ নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করার অভিযোগ তোলে। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কোনো একটি পক্ষ যদি দলীয় স্বার্থে ঐকমত্য প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে তাহলে সরকারের উচিত ভয় না করে অন্য সকল পক্ষ ও সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে এ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করা।’

আলি রীয়াজ বলেন, ‘কখনো কখনো আমরা অগ্রসর হই। কখনো কখনো আমরা যতটা অগ্রসর হতে চাই, ততটা না পারায় খানিকটা হতাশ হই। কিন্তু তারপরেও আমরা চেষ্টা করলে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে হয়ত একটা সনদের জায়গায় যেতে পারব। এটা আপনাদের সকলের প্রচেষ্টা, সকলের আন্তরিক সহযোগিতাটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস।’

জুলাই সনদ হবে রাজনৈতিক দলগুলোর এক ধরনের অঙ্গীকারনামা, যেখানে ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, অভ্যুত্থান পরবর্তী জনআকাঙ্ক্ষার বয়ান এবং রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে একমত হওয়া গেলে তার প্রতিশ্রুতি থাকবে।গত অক্টোবরে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ জমা পড়ে ফেব্রুয়ারিতে। এসব সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফেব্রুয়ারিতে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের ওপর ৩৩টি দলের মতামতের ভিত্তিতে ৪৫টি অধিবেশনের মাধ্যমে প্রথম পর্বের সংলাপ হয় ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত।

এসএস//