ঢাকা, বুধবার   ০৯ জুলাই ২০২৫,   আষাঢ় ২৪ ১৪৩২

ভারতীয়দের অবৈধ কারবার: বিজনেস ভিসায় সকালে এসে বিকালে ফেরত

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১০:৪৯ এএম, ৮ জুলাই ২০২৫ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:২১ এএম, ৮ জুলাই ২০২৫ মঙ্গলবার

বাংলাদেশিরা মেডিকেল ভিসা ছাড়া কোন ভিসা পাচ্ছেন না। তাও সবার ভাগ্যে মেডিকেল ভিসাও মিলছে না। তবে প্রতিদিন শত শত ভারতীয় বিজনেস ভিসায় বেনাপোলে আসছেন, আবার বিকালে ফিরে যাচ্ছেন। যাদেরকে ‘লাগেজ পার্টি’ নামে সবাই জানে।

বাংলাদেশিদের ট্যুরিস্ট, বিজনেস ভিসা ভারত সরকার বন্ধ করে দিলেও শত শত ভারতীয়দের বিজনেস ভিসা দিচ্ছে কলকাতাস্থ বাংলাদেশি উপ হাইকমিশনার। বাংলাদেশি পাসপোর্টযাত্রীরা মেডিকেল ভিসা ছাড়া ভারতে প্রবেশ করতে না পারলেও প্রতিদিনি শত শত ভারতীয় বিজনেস ভিসা পাচ্ছেন।

কি কারণে প্রতিদিন শত শত ভারতীয় পাসপোর্টযাত্রীরা সকালে বেনাপোল আসছেন আবার সন্ধ্যার মধ্যে নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন এটা নিয়ে কেউ কোন কথা বলতে চাচ্ছে না। 

তবে সরেজমিনে চেকপোস্টে গিয়ে দেখা যায়, এসব ভারতীয় যাত্রীরা বিজনেস ভিসায় ভারতীয় কম্বল, মোবাইল ফোন, বিদেশী মদ, বিয়ার, শাড়ি, থ্রিপিস, চকলেট, ফুচকা, তৈরী পোষাক এবং কসমেটিক্স সামগ্রী মালামাল নিয়ে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে আসছেন এবং চেকপোস্টের বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে নগদ টাকা নিয়ে ভারতে ফিরে যাচ্ছেন। যাদেরকে ‘লাগেজ পার্টি’ নামে সবাই চিনে।

আর এসব মালামাল কিনতে যশোর খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার শত শত মহিলা-পুরুষরা বেনাপোল চেকপোস্টে আসে। উভয় দেশের প্রশাসনের সহযোগিতায় চলছে এ ব্যবসা। 

বিনা শুল্কে অবৈধ পণ্য দেশে প্রবেশ করায় মারাত্মক হুমকির মুখে দেশীয় শিল্প। এতে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। তবে বিজিবি বলছে, সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে তারা দিন-রাত নিরালসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

চেকপোস্ট সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ভিসা প্রদান না করায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার যাত্রীর সংখ্যা অনেকাংশে কমলেও ভারত থেকে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ ভারতীয় নাগরিক পাসপোর্টের মাধ্যমে বিজনেস ভিসায় বেনাপোল সীমান্তে প্রবেশ করছে। এদের ভিসা দিচ্ছে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন। যারা শতভাগ চোরাচালানী ব্যবসার সাথে জড়িত। 

বেনাপোল সীমান্তের ওপারে ভারতের বনগাঁ, অশোকনগর, হাবড়া, হরিদাসপুর, জয়ন্তীপুর ও পেট্রাপোলে সক্রিয় রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ভারতীয় বিজনেস ভিসাধারী যাত্রীরা প্রতিদিন একেকজন ৩/৪টি ব্যাগ ভর্তি মালামাল নিয়ে এসে বাংলাদেশের বেনাপোল চেকপোস্টে বিভিন্ন দোকানে বেঁচে দেয়। এক ঘন্টার মধ্যে তারা আবার নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে। 

বিজনেস ভিসা থাকায় এদের যাতায়াতে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এ কাজে সক্রিয় সহযোগিতা দিচ্ছে ভারতীয় ও বাংলাদেশ কাস্টমসসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।

ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে (১ মে থেকে ৩১ মে) ২৫ হাজার ৬৭৮ জন ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রী ভিসায় বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দু‘দেশের মধ্যে যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে ভারত থেকে এসেছেন ১২ হাজার ১১২ জন ও ভারতে ফিরে গেছেন ১৩ হাজার ৫৬৬ জন। ২৫ হাজার ৬৭৮ জন যাত্রীর মধ্যে বিজনেস ভিসায় চোরাচালানী মালামাল নিয়ে এসেছেন প্রায় ২৪ হাজার ভারতীয় পাসপোর্টযাত্রী।

ভারত সরকার ট্যুরিস্ট, বিজনেস ভিসা বন্ধ করে দেওয়ায় আন্তর্জাতিক বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপার ক্রমেই কমে আসছে। তবে মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসায় যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে। ভারতীয় দূতাবাস বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আরোপ করায় যাত্রী পারাপার কমে অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। 

এ ব্যাপারে কাস্টমসের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা সজাগ আছি। পাসপোর্টযাত্রীরা কোন হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। ‘লাগেজ পার্টি’ বন্ধে আমরা প্রতিনিয়ত চেকপোস্টে মালামাল ডিএমের মাধ্যমে আটক করছি। সেটা পরে যাত্রীরা কাস্টমস হাউজ থেকে শুল্ক দিয়ে ছাড় করে নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী জানান, সীমান্তে চোরাচালনা বন্ধে বিজিবি দিন-রাত নিরালশভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার অবৈধ পণ্য আটক করা হচ্ছে। এছাড়াও ট্রাস্কফোর্সের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

বিজিবি অধিনায়ক আরও জানান, চোরাকারবারী কর্তৃক মালামাল শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ভারত হতে বাংলাদেশে পাচার করায় জব্দ করা হয়। এভাবে ভারতীয় দ্রব্য সামগ্রী চোরাচালানের কারণে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবার পাশাপাশি দেশ উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

এএইচ