ঢাকা, সোমবার   ২৮ জুলাই ২০২৫,   শ্রাবণ ১৩ ১৪৩২

বিমানবাহিনীর প্রাথমিক প্রতিবেদন

বিধ্বস্ত হওয়ার আগে সাত মিনিট উড়েছিল যুদ্ধবিমান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:২৪ এএম, ২৮ জুলাই ২০২৫ সোমবার

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হওয়ার আগে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানটি মাত্র সাত মিনিট উড়েছিল। ২১ জুলাই বেলা ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়নের পর যুদ্ধবিমানটি ১টা ১৩ মিনিটে উত্তরার দিয়াবাড়িতে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি একাডেমিক ভবনে আছড়ে পড়ে।

ওই দুর্ঘটনার পরদিন (২২ জুলাই) বিমানবাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো প্রাথমিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগমুহূর্তে পাইলটকে বারবার বিমান থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বের হয়ে (ইজেক্ট) যেতে কল দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়ার চেষ্টার মধ্যেই বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। আঘাতের পর মারাত্মক জখমের কারণে মৃত্যু হয় পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব জানা গেছে।

ওই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গতকাল রোববার পর্যন্ত মারা গেছেন পাইলট তৌকিরসহ ৩৪ জন। নিহতদের অধিকাংশই শিশু। তারা মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থী।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানবাহিনীর ৩৫ স্কোয়াড্রনের ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করা এফটি/৭ বিজিওয়ান মডেলের প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমানটি নিয়ে তৌকিরের সলো মিশন ছিল সর্বোচ্চ ২০ মিনিটের। কিন্তু উড্ডয়নের মাত্র সাত মিনিটেই ঘটে বিপর্যয়।

বিমানবাহিনীর সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা যায়, রানওয়ে থেকে উড্ডয়নের পর যুদ্ধবিমানটির তিনটি চক্কর দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় রাউন্ড শেষে তৃতীয় রাউন্ডে রানওয়ে-১৪-এর দিকে ঘুরে আসার সময় পাইলটের অবস্থানে অস্বাভাবিকতা লক্ষ করেন তাঁর কমান্ডিং অফিসার। বিমান হঠাৎ নিচে নেমে আসতে থাকে। ওই সময় থেকে বারবার উচ্চতা খেয়াল রাখতে বলা হলেও পাইলট কোনো জবাব দেননি। অবস্থা বেগতিক দেখে কমান্ডিং অফিসার একাধিকবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বের হয়ে (ইজেক্ট) আসতে কল দেন; কিন্তু কোনো জবাব আসেনি। এরপরই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

উদ্ধারকারীরা জানান, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার এক ঘণ্টা পর পাইলট তৌকিরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তিনি তখনো জীবিত ছিলেন। তবে প্যারাস্যুট খোলার আগেই নিচে পড়ায় দেহে গুরুতর অভ্যন্তরীণ আঘাত পান। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বিমানবাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, পাইলট ‘ইজেক্ট’ করার চেষ্টা করছিলেন এবং বিমানটি জনবহুল এলাকা এড়িয়ে নিরাপদ স্থানে নামানোর সর্বাত্মক চেষ্টায় ছিলেন।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট মো. মকবুল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, পাইলটকে উদ্ধার করে কলেজের মেডিকেল কক্ষে নেওয়া হয়। তাঁর নাড়ির গতি ও রক্তচাপ পাওয়া গিয়েছিল। মুখে রক্ত ছিল। তবে বাইরের দিকে কোনো বড় আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি।

২২ জুলাই পর্যন্ত বিমানবাহিনীর প্রাথমিক হিসাবে ওই দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত এবং ১৭১ জন আহত হওয়ার তথ্য জানানো হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, গতকাল পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১৭ জন, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১৪ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন, উত্তরার লুবানা জেনারেল হাসপাতালে একজন ও ইউনাইটেড হাসপাতালে একজন মারা যায়। লুবানা হাসপাতালে মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিচয় তখনো জানা যায়নি।

বিমানবাহিনীর সাবেক সহকারী প্রধান ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এম সানাউল হক একটি গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘পাইলটের জবাব না দেওয়া অস্বাভাবিক নয়। তিনি হয়তো ব্যস্ত ছিলেন বিমান নিয়ন্ত্রণে। আমার নিজের সঙ্গেও এমন ঘটনা ঘটেছে। প্লেন যখন ক্র্যাশের মুখে, তখন পাইলটের প্রধান কাজ হয় সেটি স্থিতিশীল করা, জবাব দেওয়া নয়। এই দুর্ঘটনায় আমি কোনো গাফিলতি দেখি না।’ তিনি মনে করেন, যান্ত্রিক ত্রুটিই এই দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ। অনেকে যান্ত্রিক ত্রুটি এবং বিমানটির বয়স নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তদন্তের আগপর্যন্ত নির্দিষ্ট করে কিছু বলার সুযোগ নেই।

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ সাহিল ফারাবি আয়ান (১৪) নামে আরও এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাত পৌনে ২টায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ওই নারীর নাম হোটেলের রেজিস্ট্রারে লেখা ছিল মুন্না সরকার, ঠিকানা দেওয়া ছিল ঢাকার ধানমন্ডি। তবে মৃত্যুর খবর পেয়ে চট্টগ্রাম থেকে ছুটে আসা স্বজনেরা জানিয়েছেন, ওই নারীর প্রকৃত নাম মুন্না আক্তার। তিনি চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা।

মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের অকালে ঝরে পড়া ফুলগুলোর সংখ্যা অন্তত ২৬-এ উঠল। ২১ জুলাইয়ের মর্মান্তিক বিপর্যয়ে শিক্ষক, অভিভাবক আর যুদ্ধবিমানের পাইলট মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা গতকাল রোববার পর্যন্ত ৩৪।

কাইতাড়া গ্রামের বাসিন্দা মামুন হায়দার বলেন, এই সড়ক নির্মাণের পর আর সংস্কার হয়নি। তবুও চলাচলের যোগ্য ছিল। কিন্তু গত ৮ থেকে ১০ বছর স্থানীয় একাধিক বালু ব্যবসায়ীর ট্রাক চলাচল করতে গিয়ে সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। যে কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়।

এসএস//