টিনের ঘর থেকে চার কক্ষের ভবন: রিয়াদের রহস্যময় উত্থান
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১০:৩৮ এএম, ২৮ জুলাই ২০২৫ সোমবার

এক সময় যাদের জীবন কাটতো টিনের চালার ঘরে। আজ সেই ঘরের জায়গায় দাঁড়িয়ে চার কক্ষের দোতলা ভবন। নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার মানুষের মুখে মুখে এখন এই নিয়ে আলোচনা। যার নামে এই ভবন নির্মাণ হচ্ছে, সে ঢাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগে সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রিয়াদ। সে ছিলেন রিকশাচালকের ছেলে, অভাবী সংসারের সন্তান।
গত শনিবার (২৬ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে সাবেক এক সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন রিয়াদ। এরপরই আলোচনায় আসে তার হঠাৎ উত্থান ও গ্রামের বাড়িতে পাকা ভবন নির্মাণ।
জানা গেছে, রিয়াদের বাবা আবু রায়হান ও বড় ভাইও কিছুদিন আগেও রিকশা চালাতেন। এখন আর চালান না। তাদের জীবনযাত্রায় এসেছে নাটকীয় পরিবর্তন।
স্থানীয়রা জানান, আড়াই মাস আগে শুরু হওয়া এই নির্মাণকাজে গত সপ্তাহেই ঢালাই দেওয়া হয়েছে। বাড়ির ভিতর রয়েছে চারটি কক্ষ। যারা একসময় নুন আনতে পান্তা ফুরাতেন, তাদের এই উত্থান নিয়ে গ্রামে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কেউ বলছেন ‘জমানো টাকা আর ঋণ’, কেউ বলছেন ‘অনুদান’, আবার কেউ সরাসরি সন্দেহ করছেন এই বাড়ির অর্থের উৎস নিয়ে।
রিয়াদের স্কুল জীবনের এক সহপাঠী জানান, রিয়াদ ছাত্রজীবনে মেধাবী ছিলেন এবং অনেক স্থানীয় বিত্তবান তার পড়াশোনায় সাহায্য করতেন। সে মজিব কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু গত তিন মাস ধরে সে এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত করছে এবং বাড়ির নির্মাণকাজ তদারক করছে।
স্থানীয় এক ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তি বলেন, “শুনেছি ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির ঘটনায় রিয়াদ ধরা পড়েছে। এই টাকার উৎস কী, আর কীভাবে এত অল্প সময়ের মধ্যে এত উন্নতি হলো, তা নিয়ে আমরা খুব অবাক।”
স্থানীয়রা আরও জানান, রিয়াদের পোশাক-পরিচ্ছদেও পরিবর্তন এসেছে। গত কয়েক মাসে দামি মোটরসাইকেলে তাকে এলাকায় ঘুরতে দেখা গেছে। কারো কারো মতে, সে ঢাকায় ‘উঁচু পর্যায়ের’ রাজনীতিকদের সঙ্গে উঠাবসা করেন। এমনকি তার হাতে থাকা কিছু লিফলেট আর কিছু ছবি থেকেও মিলছে এমন ইঙ্গিত।
সেনবাগ থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, “৫ আগস্টের পর রিয়াদ এলাকায় এসেছিল বলে শুনেছি। সে এলাকায় লিফলেটও বিতরণ করেছে। বিভিন্ন প্রভাবশালী লোকের সঙ্গে তার ছবি রয়েছে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।”
এই পুরো ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সাধারণ মানুষ যেমন বিভ্রান্ত, তেমনি প্রশাসনের কেউ কেউ বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। হঠাৎ উত্থান, রাজনীতির ছত্রছায়া, আর প্রভাবশালীদের সান্নিধ্য—এই তিন উপাদান মিলে রিয়াদ যেন হয়ে উঠেছেন এক রহস্যময় চরিত্র।
তবে রিয়াদের পরিবার এখনও বলছে, “আমরা কষ্ট করে টাকা জমিয়েছি, কেউ কেউ সাহায্য করেছেন, আর কিছু ঋণ নিয়ে বাড়ি করছি।” কিন্তু এলাকার মানুষ এই কথায় সন্তুষ্ট নন।
এসএস//