ঢাকা, শুক্রবার   ০৮ আগস্ট ২০২৫,   শ্রাবণ ২৪ ১৪৩২

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন 

কলকাতায় আওয়ামী লীগের গোপন ‘পার্টি অফিস’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:২৯ এএম, ৮ আগস্ট ২০২৫ শুক্রবার | আপডেট: ০৯:২০ এএম, ৮ আগস্ট ২০২৫ শুক্রবার

কলকাতার একটি ব্যস্ত বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সের আট তলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একটি ‘পার্টি অফিস’ রয়েছে, যা দেখতে সম্পূর্ণ সাধারণ বাণিজ্যিক অফিসের মতো, বাইরে কোনো সাইনবোর্ড বা নেতাদের ছবি নেই। সেখান থেকে সংগঠিত ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে দলটি। দেশের ভেতরে থাকা নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু করা হয়েছে এখান থেকে।

মাস ছয়েক আগে আওয়ামী লীগের সূত্রগুলি জানিয়েছিল, গত এক বছর ধরে ভারতে অবস্থানরত দলের শীর্ষ ও মধ্যম পর্যায়ের অন্তত ৮০ জন সংসদ সদস্য, জেলা সভাপতি-সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়রসহ প্রায় ২০০ নেতাকর্মী অবস্থান করছে। এছাড়া এর বাইরে বিভিন্ন পেশাজীবী, সরকারি কর্মচারী, পুলিশ কর্মকর্তা এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারাও চলে এসেছেন ভারতে।

জানা গেছে, এদের বেশিরভাগই নিয়মিত এই অফিসে যাতায়াত করছেন। 

২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে অবস্থান নেওয়ার পর দলটির নেতারা নিজেদের বাসায় ছোটখাট বৈঠক করলেও বড় মিটিংয়ের জন্য রেস্টুরেন্ট বা ব্যাঙ্কয়েট হলে আয়োজন করতে হতো, তাই নির্দিষ্ট একটি অফিস প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। এই পার্টি অফিসে দলীয় ফাইল না থাকলেও বৈঠক ও আলোচনা চলে এবং বড় বৈঠকগুলো ব্যাঙ্কয়েট হলে করা হয়।

এমন তথ্যই জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা। শুক্রবার (৮ আগস্ট) বিবিসি বাংলার অনলাইন সংস্করনে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে উঠে আসে, কলকাতায় আওয়ামী লীগের অফিস, ভারতে অবস্থানরত নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশে থাকা মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ, দলের অর্থায়ন ও নেতাদের বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য। এছাড়া প্রতিবেদনে আরও প্রকাশ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের বর্তমান অবস্থান।  

বিবিসি বাংলা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ‘গোপন ওই পার্টি  অফিসে’ কোনো সাইন বোর্ড নেই, ঘরটির বাইরে বা ভেতরে শেখ হাসিনা অথবা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো ছবি কোথাও নেই।

 আওয়ামী লীগের এক নেতার বরাতে বিবিসি জনিয়েছে, বঙ্গবন্ধু বা নেত্রীর কোনো ছবি, সাইনবোর্ড কোনো কিছুই আমরা রাখি নি খুবই সচেতন ভাবে। আমরা চাইনি যে এই ঘরটার পরিচিতি প্রকাশ করতে। এমনকি একটা দলীয় দফতরে যেসব ফাইল ইত্যাদি থাকে, সেসবও এখানে রাখা হয় না। নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ, বৈঠক ইত্যাদির জন্য একটা ঘর দরকার ছিল, এটা পাওয়া গেছে। এটাকে আমরা পার্টি অফিসই বলি, কিন্তু আদতে এটা একটা বাণিজ্যিক অফিস। আগে যে সংস্থা কাজ করত এখানে, তাদেরই ছেড়ে যাওয়া চেয়ার, টেবিল এসবই আমরা ব্যবহার করি।

তিনি আরও জানান, ৩০-৩৫ জনের বৈঠক এই দফতরেই হয়ে যায়, কিন্তু একটু চাপাচাপি করে বসতে হয়। ছোটখাটো বৈঠক বিভিন্ন নেতাদের বাসাবাড়িতে এখনও হয়। তবে বড় বৈঠকগুলি, যেখানে শ দুয়েক নেতা-কর্মী হাজির হওয়ার কথা, সেরকম বৈঠকের জন্য কোনো ব্যাঙ্কয়েট হল বা কোনো রেস্তরাঁর একটি অংশ ভাড়া নিয়ে নেওয়া হয়।

বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে আরও জানায়, ভারতে দলের প্রধান নেত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি ও কলকাতা সংলগ্ন মাঝামাছি একটি এলাকায় অবস্থান করছেন এবং ভারতে থাকা নেতারা নিয়মিত তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেন। দলের অন্যান্য কাজ ভার্চুয়াল মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেখানে হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম গ্রুপ ও লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও নির্দেশনা দেয়া হয়। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে দলটির সাবেক এমপি পঙ্কজ দেবনাথ জানিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন উঠলেও কেন শীর্ষ নেতারা ভারতে অবস্থান করছেন, সে প্রসঙ্গে পঙ্কজ দেবনাথ বিবিসিকে বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকার গঠন ছিল প্রয়োজনীয়, তেমনি বর্তমানে দল পরিচালনা করে দেশে ফিরে সংগঠন শক্তিশালী করার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশে থাকলে হয়তো নেতারা জেলে যেতেন বা নির্যাতিত হতেন, তাই ভারতে অবস্থান জরুরি।

দলটির অর্থায়নের বিষয়েও ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নেতারা বিবিসিকে জানান, দেশে ও বিদেশে থাকা শুভাকাঙ্খীরা তাদের খরচ চালাচ্ছেন। 

সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদের বলেন, গত বছর অগাস্টের পর থেকে বিপর্যয়ের সময় থেকে নেতাকর্মীরা এগিয়ে এসে অর্থ সাহায্য করেছেন। ভারতে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেছে নেতারা, এক ফ্ল্যাটে একাধিক নেতারা থাকছেন, যেখানে আগে অনেকেই গাড়ি চালাতেন এখন গণপরিবহন ব্যবহার করছেন। 

এখন পর্যন্ত কতদিন ভারতে থাকতে হবে তা নির্দিষ্ট নয়, তবে ওবায়েদুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক লড়াই চলতেই থাকবে এবং এর বিকল্প নেই। ভারতে থাকা নেতারা দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দেশের কর্মীদের জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন, যা ভার্চুয়াল মাধ্যমের মাধ্যমে নিয়মিত চলছে। এই ‘অদৃশ্য’ পার্টি অফিস থেকে বাংলাদেশের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা গড়ে উঠছে এবং দলীয় সংগঠন চালানো হচ্ছে।

এদিকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা। বিবিসি বাংলাকে সাদ্দাম হোসেন বলেন, দেশে ছাত্রলীগ কর্মীরা ক্যাম্পাসে যেতে পারছে না, তাদের শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু ছাত্রলীগ নয়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ওপর চলছে নির্যাতন, দমন পীড়ন। 

এসএস//