ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৪ আগস্ট ২০২৫,   শ্রাবণ ২৯ ১৪৩২

রোহিঙ্গাদের সিম দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:২৬ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০২৫ বুধবার

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখতে বৈধভাবে মোবাইল সিম দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। নতুন সিম বিতরণের পর রোহিঙ্গাদের কাছে থাকা সব অবৈধ সিম বন্ধ করে দেয়া হবে। 

আগামী ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময়ের মধ্যে বিশেষ সিরিজের ১০ হাজার সিম বরাদ্দ দেয়া হতে পারে। প্রোগ্রেস আইডির বিপরীতে ১৮ বছর বা তার ঊর্ধ্বে থাকা রোহিঙ্গারা এই সিম পাবেন। 

মিয়ানমারে অত্যাচারের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। দেশে এখন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের সিম ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে সেখানে অবৈধভাবে দুই দেশেরই সিম ব্যবহার হচ্ছে। রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরকেন্দ্রিক বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী অবৈধভাবে দেশি অপারেটরের সিম ব্যবহার করে এবং মিয়ানমারের সিম ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বৈধভাবে সিম পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে তাদের অনেকের কাছেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিভিন্ন মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সিম রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা প্রশ্নে উদ্বেগ রয়েছে সরকারের। এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বৈধভাবে সিম ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, এই নিয়ে মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে এরমধ্যে দুই দফা বৈঠক হয়েছে। বিটিআরসি ও অপারেটর সূত্র বলছে, রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা নম্বর সিরিজ রাখা হবে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন নম্বরের ভিত্তিতে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের সিম দেয়া হবে। 

প্রতিটি সিমের খরচ দেবে ইউএনএইচসিআর বা সরকার। অপারেটররা তিন ধরনের প্যাকেজ অফার করবে। 

সরকারের সঙ্গে চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনএইচসিআরের এই ডেটাবেজ সংরক্ষিত থাকবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) ডেটা সেন্টারে। কিন্তু এই ডেটাবেজ বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শেষ হতে আগামী নভেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। 

সূত্র বলছে, যেহেতু সরকারের লক্ষ্য চলতি মাস, তাই সরকারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের অধীনে রোহিঙ্গাদের পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথম ধাপে ২৫ আগস্টের মধ্যে ১০ হাজার নম্বর বরাদ্দ দেওয়ার আলোচনা হয়েছে।

নতুন সিম দেওয়ার পর বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে যেসব অবৈধভাবে সিম চলছে, সেগুলো বন্ধ করে দেবে সরকার।

তবে এসবই আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী। 

এদিকে রোহিঙ্গাদের সিম দেওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানান গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার (সিসিএও) তানভীর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বৈধভাবে সিম বিক্রয়ের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই, যা বহু মানুষকে বৈধ উপায়ে সিম ক্রয়ের সুযোগ করে দেবে।’

তবে রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি কর্মকর্তা সাহেদ আলম বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘বর্তমানের সচল সিমগুলো প্রোগ্রেস আইডির বিপরীতে নতুন করে শুধু নিবন্ধন করা যেতে পারে।’

রোহিঙ্গাদের জন্য সিমের নিবন্ধনের প্রক্রিয়াটি সহজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স তাইমুর রহমান। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের সুযোগ প্রদান সুস্থ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করবে।

রোহিঙ্গা শিবিরকে একটি বিশেষায়িত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে প্রযুক্তি নীতিমালা পরামর্শক আবু নাজম মো. তানভীর হোসেন বলেন, এখানে মিয়ানমারের নেটওয়ার্কও সক্রিয়। নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারকে বাইরের দেশের নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণভাবে বন্ধের উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন সিম দেওয়ার আগে আগেরগুলো জব্দ ও নথিভুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

এএইচ