ঢাকা, শুক্রবার   ১৫ আগস্ট ২০২৫,   শ্রাবণ ৩১ ১৪৩২

বন্যার আশঙ্কায় দেশের ১২ জেলা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১১ এএম, ১৫ আগস্ট ২০২৫ শুক্রবার | আপডেট: ১১:০৬ এএম, ১৫ আগস্ট ২০২৫ শুক্রবার

বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা, পদ্মা ও যমুনার পানি বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি বা এর উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে অন্তত ১২ জেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলায় ডুবে গেছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও চরাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বুধবার সর্বশেষ বুলেটিনে বলেছে-লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তলিয়ে গেছে আমন ধান ও সবজির খেত। ঘরের ভেতরে পানি ঢোকায় দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ।

এদিকে সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের মাত্রা আরও বাড়তে পারে, যা বন্যা পরিস্থিতিকে জটিল করতে পারে।

পাউবো জানিয়েছে, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বৃহস্পতিবার দুপুরে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকেলে কিছুটা কমে ১৫ সেন্টিমিটার দাঁড়ায়। 

এর আগে গত বুধবার সকালে পানি প্রথমে বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার ওপরে ওঠে, পরে কমে আবার বেড়ে যায়। ফলে হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। এ পরিস্থিতিতে নদীপাড়ের মানুষ বাড়িঘর, গবাদি পশু ও ফসল রক্ষায় ব্যস্ত। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাচ্ছেন। আবার কেউ মাচা তুলে কিংবা নৌকায় ভাসমান দিন কাটাচ্ছেন। ডুবেছে সবজি, পাটক্ষেত ও রোপা আমনের বিস্তীর্ণ জমি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উজানে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজ খুলে দিলে প্রতি বছর এমন বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। কলেজ শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, ত্রাণ দিয়ে নয়, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া আমাদের স্থায়ী সমাধান নেই।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার ৮০০ পরিবারকে সরকারি সহায়তা হিসেবে ২৩০ টন চাল ও ৭০০ টন শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলায় রান্না করা খিচুড়ি বিতরণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

উজানে ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের দুধকুমার নদীর পানি বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্রসহ জেলার সব নদনদীর পানি বাড়ছে। রাজারহাট, উলিপুর ও সদর উপজেলার নদীপাড়ে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

পাউবো কুড়িগ্রাম জানিয়েছে, ভাঙনকবলিত ৩০টি পয়েন্টের মধ্যে ২০টিতে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, আগামী দুদিন ভারী বর্ষণ ও ঢল অব্যাহত থাকলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা দেখা দিতে পারে।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চরাঞ্চলের চকরাজাপুর ইউনিয়নের দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় আট দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, গ্রাম ও বিদ্যালয়ের চারপাশে পানি জমে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ব্যাহত হচ্ছে। শতাধিক হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে। পাউবো জানিয়েছে, তিন দিনের মধ্যে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। যদিও এখনও বিপৎসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার নিচে আছে, তবে চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৪৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি। তলিয়ে গেছে অধিকাংশ রাস্তাঘাট ও এক হাজার হেক্টর ফসলি জমি। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী জানিয়েছেন, খাদ্য সহায়তা বিতরণ শুরু হয়েছে।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় সড়ক সেতুর পশ্চিম তীরে বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার এলাকা ধসে পড়েছে। বাঁধে প্রায় ৭০ ফুট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে লালমনিরহাট-রংপুর আঞ্চলিক সড়কসহ আশপাশের তিন গ্রামের হাজারো পরিবার।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, তিস্তা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও পদ্মার পানি বাড়ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে  তিস্তা ব্যারাজের  ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।

এসএস//