ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ আগস্ট ২০২৫,   ভাদ্র ৬ ১৪৩২

পাঠ্যবইয়ে ‘গণহত্যাকারী’ হিসেবে যুক্ত হচ্ছে শেখ হাসিনার নাম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:২০ পিএম, ২১ আগস্ট ২০২৫ বৃহস্পতিবার

আগামী ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস। এ বইগুলোতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম ‘গণহত্যাকারী’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।

একই সঙ্গে নতুন পাঠ্যক্রমে যোগ হচ্ছে গত চারটি বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিবরণ। বিশেষ করে উচ্চ মাধ্যমিকের পৌরনীতি ও সুশাসন বইয়ের দ্বিতীয় পত্রে ২০০৮ সালের সেনাসমর্থিত নির্বাচন, ২০১৪ সালের বিনা ভোটে বিজয়ী হওয়ার নির্বাচন, ২০১৮ সালের দিনের ভোট রাতেই ব্যালট বাক্সে ভরার ঘটনা এবং ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনের ইতিবৃত্ত সংযোজনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

এ ছাড়া শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ সংক্ষেপ আকারে পাঠ্যবইয়ে থাকছে। যদিও শুরুতে এটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব ছিল, জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসি) শেষ পর্যন্ত সেই প্রস্তাব নাকচ করে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক—উভয় স্তরের বইয়ে ভাষণটি সংক্ষিপ্তভাবে অন্তর্ভুক্ত হবে।

গত সোমবার রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। আলোচনায় প্রথমে অষ্টম ও দ্বাদশ শ্রেণির বই থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরানোর প্রস্তাব এলেও শেষে সংক্ষেপে রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, অষ্টম শ্রেণির বইয়ে আগে থেকেই বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছিল, এবারও থাকবে, তবে সংক্ষিপ্ত আকারে। একই নীতি একাদশ শ্রেণির বইয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

সভায় আরও প্রস্তাব ওঠে নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বই থেকে ‘রহমানের মা’ গল্পটি ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় এবং ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’ নাটকটি অশ্রাব্য ভাষার কারণে বাদ দেওয়ার। একই সঙ্গে জুলাই আন্দোলন নিয়ে লেখা ‘আমাদের নতুন গৌরব গাথা’ প্রবন্ধে বিকৃতি ও শেখ হাসিনার নাম গোপন করার অভিযোগ ওঠায় সেটি সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় অংশগ্রহণকারীরা অভিযোগ করেন, প্রবন্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রকৃত প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়নি। অপরাধী ও দায়ীদের আড়াল করা হয়েছে, ফলে শিক্ষার্থীরা বিকৃত ইতিহাস পাবে। তাই সংশোধনে প্রস্তাব করা হয়, আন্দোলনটি যে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। একই সঙ্গে গদ্যের ভাষায় পরিবর্তন আনার প্রস্তাবও দেওয়া হয়—‘শাসক’ বদলে ‘স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা’, ‘দুর্বৃত্তবাহিনী’র স্থলে ‘আওয়ামী লীগ’ এবং ‘আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা’র জায়গায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী’ ব্যবহার করার।

সভা সূত্র জানায়, নবম-দশম শ্রেণির বাংলা বইয়ে সবচেয়ে বেশি পরিবর্তনের প্রস্তাব এসেছে। কিছু লেখা ধর্মীয় অনুভূতি ও ভাষার কারণে বাদ দেওয়া হবে, পাশাপাশি ইতিহাস উপস্থাপনে ভারসাম্য রাখার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া সিদ্ধান্ত হয়, কোনো পাঠ্যবইয়ে একক রাজনৈতিক নেতাকে কেন্দ্র করে ইতিহাস উপস্থাপন করা যাবে না। বিশেষ করে উচ্চ মাধ্যমিকের ইতিহাস, পৌরনীতি ও সুশাসন এবং বাংলা দ্বিতীয় পত্রে ব্যাপক সংশোধন আনা হবে। প্রকাশকদের জানানো হয়েছে—ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত বিশেষণ ব্যবহার নিষিদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ নিরপেক্ষভাবে উপস্থাপন করতে হবে।

সবশেষে নতুন পাঠ্যক্রমে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার প্রসঙ্গ যুক্ত করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এএইচ