ডাকসুতে বাজিমাতের স্বপ্ন দেখছে ছাত্রদল
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১১:৩৯ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২৫ সোমবার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ। সোমবার (২৫ আগস্ট) মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে শেষ হলো প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার আনুষ্ঠানিকতা। এবার শুরু হচ্ছে সরব প্রচারণার পালা। নতুন করে ডাকসু নির্বাচনের পথে যখন এগোচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তখন ছাত্রদলের অতীত অংশগ্রহণ ও সাফল্যের প্রসঙ্গ আবারও আলোচনায় এসেছে ক্যাম্পাসজুড়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ইতিহাসে মাত্র দুইবার অংশ নিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সেটি ছিল ১৯৯০ ও ২০১৯ সালে। প্রথম অংশগ্রহণেই বিপুল জয় পেলেও দীর্ঘ বিরতির পর ২০১৯ সালের নির্বাচনে তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি সংগঠনটি। ১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে ব্যাপক ব্যবধানে জয় লাভ করেছিল ছাত্রদল। ওই নির্বাচনে ছাত্রদল থেকে ভিপি পদে আমান উল্লাহ আমান, জিএস পদে খাইরুল কবীর খোকন, এজিএস পদে তাকদীর মোহাম্মদ জসিম মনোনীত হয়েছিলেন। নির্বাচনে ছাত্রদল থেকে মোট তিনটি প্যানেল অংশ নেয়। প্যানেল তিনটি হলো ‘দুদু-রিপন’, ‘রিপন-আমান’ এবং ‘আমান-খোকন’। নির্বাচনে ৭ হাজার ৩৮৯ ভোট পেয়ে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন আমান উল্লাহ আমান, ৭ হাজার ১৯১ ভোট পেয়ে জিএস পদে খাইরুল কবীর খোকন এবং ৭ হাজার ৮১ ভোট পেয়ে এজিএস পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন নাজিম উদ্দিন আলম।
১৯৯০ সালের ডাকসু নির্বাচনে জয় লাভ করলেও ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেনি ছাত্রদল। ভোট পাওয়ার হারও ছিল একেবারেই নগণ্য। ডাকসুতে শীর্ষ ৩টি পদে ছাত্রদলের প্রার্থীরা পেয়েছিলেন সর্বসাকুল্যে ১ হাজার এক ভোট। ছাত্রদল থেকে মনোনীত ভিপি প্রার্থী গাজী নাজমুল হোসাইন আলমগীর পেয়েছিলেন ২৪৫, জিএস প্রার্থী সাইফ মাহমুদ জুয়েল পেয়েছিলেন ৪৬২ ভোট এবং এজিএস প্রার্থী মো. রাকিবুল ইসলাম পেয়েছিলেন ২৯৪ ভোট। সর্বশেষ ২০১৯ সালের এই ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন নুরুল হক নুর, জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন ছাত্রলীগের গোলাম রাব্বানী এবং এজিএস পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন সাদ্দাম হোসেন। ডাকসু নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত নির্বাচনও ছিল ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন। নির্বাচনে পেশিশক্তির ব্যবহার, ভোট দিতে বাধাদান, ভোট কারচুপির অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি এবারের ডাকসু নির্বাচন প্যানেল ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। প্যানেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আবিদুল ইসলাম খানকে সহসভাপতি (ভিপি), কবি জসীম উদ্দীন হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শেখ তানভীর বারী হামিমকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তানভীর আল হাদী মায়েদকে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী করা হয়েছে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, তারা বিশ্বাস করেন, সাহসী, মেধাবী ও বিচক্ষণ শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়ে ছাত্রদলের প্যানেলকে জয়ী করবেন। ছাত্রসমাজের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও দীর্ঘদিন ধরে যারা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করেছেন, তাদেরই প্যানেলে মনোনীত করা হয়েছে।
ডাকসু নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল প্যানেল থেকে ভিপি পদে দাঁড়িয়েছেন আবিদুল ইসলাম খান। তিনি ঢাবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। জুলাই আন্দোলনের সম্মুখ সারির নেতাদের মধ্যে অন্যতম আবিদ। আন্দোলনের সময় তার ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যায়েন না’ আকুতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সরকার পতনের পর জুলাই আন্দোলনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল’ নামে একটি বই লিখেছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাবি ক্যাম্পাসে ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে তার।
ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান জানান, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অভ্যন্তরীণ ভোটাভুটির মাধ্যমে ছাত্রদলের প্রার্থী নির্বাচন করা হয়েছে। তার দাবি, এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে বিরল এক দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি প্যানেল করেছি যেখানে ক্রীড়াবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, আদিবাসী শিক্ষার্থী, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী ও নারী প্রতিনিধিরা আছেন। যোগ্যতার ভিত্তিতেই সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
ছাত্রদলের নেতাদের দাবি, ঐতিহাসিক ৫ আগস্টের পর সারা দেশে ছাত্রদলের সাংগঠনিক কার্যক্রম বেড়েছে, জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এবার নব্বইয়ের ডাকসু নির্বাচনের মতো ছাত্রদলের জয়ের পুনরাবৃত্তি হবে, রচিত হবে নতুন ইতিহাস।
এসএস//