ঢাকা, শনিবার   ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫,   ভাদ্র ২১ ১৪৩২

জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে বিএনপির মতামত  

সাংবিধানিক সংস্কার নির্বাচনের আগে নয়, পরবর্তী সরকারই করবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:৫৩ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শুক্রবার

‘নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থার প্রবর্তন ‘বিপ্লব নয়, ক্যু হিসেবে গণ্য হবে’ বলে মতামত দিয়েছে বিএনপি। দলটি বলেছে, নির্বাচনের আগে সাংবিধানিক সংস্কার করা যাবে না। আগামী সংসদে গঠিত সরকার পরবর্তী দুই বছরে সংবিধান সংস্কার করবে। জুলাই সনদে সব দল এই অঙ্গীকার করবে। বিএনপি মনে করে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন করার বিপজ্জনক চেষ্টা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাস্তবসম্মত নয়।

জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য কমিশনকে দেওয়া চিঠিতে এমন মতামত দিয়েছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার দলটি এই মতামত জানায়। 

এর আগে জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামা নিয়েও আপত্তি জানিয়েছিল বিএনপিসহ কয়েকটি দল, যার প্রেক্ষিতে চূড়ান্ত খসড়ায় অঙ্গীকারনামা অংশে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। 

গত ১৬ আগস্ট প্রণীত হয় জুলাই জাতীয় সনদের সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়া। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। দলগুলো এরই মধ্যে মতামত পাঠিয়েছে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবারও কমিশনের সভায় তা চূড়ান্ত হয়নি। আগামী রোববার আইন উপদেষ্টা, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাস্তবায়ন পদ্ধতি যা-ই হোক, সনদ বাস্তবায়নের আইনি বাধ্যবাধকতা রাখা হবে।

ঐকমত্য কমিশনকে দেয়া চিঠিতে বিএনপি বলেছে, যেসব সংস্কারের জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন নেই, অন্তর্বর্তী সরকার সেগুলো অধ্যাদেশ, প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে নির্বাচনের আগেই করতে পারে। 

বিএনপি বলছে, সাংবিধানিক সংস্কার পরবর্তী সরকারই করবে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “সংবিধান সংশোধন সংসদেই হতে হবে। বিএনপির প্রস্তাব, সরকার গঠনের দুই বছরের মধ্যে সাংবিধানিক সংস্কার বাস্তবায়নে সব দল অঙ্গীকার করবে।”

তবে ‘এর বাইরে বৈধ কোনো আইনি পথ থাকলে বিএনপি সে বিষয়ে আলোচনা করতে রাজি আছে’ বলেও জানান তিনি।  

বিএনপির এই মতামতের সার কথা এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যেও এসেছিল। কমিশনের কাছে পাঠানো মতামতে বিএনপি তিনবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য উদ্ধৃত করেছে। 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার একাধিক ভাষণে বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “যেসব সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হবে, শুধু সেগুলোই জুলাই সনদে থাকবে। অন্তর্বর্তী সরকার তা বাস্তবায়ন শুরু করবে। অবশিষ্ট কাজ নির্বাচিত সরকার করবে।”

প্রধান উপদেষ্টার সেই বক্তব্যও মতামতে উল্লেখ করেছে বিএনপি। বলেছে, “জুলাই সনদের বাস্তবায়ন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার অবস্থান অত্যন্ত সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত। বিএনপি তাই দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে বর্ণিত বাস্তবায়ন কৌশলকে সমর্থন করে।”

“এ ক্ষেত্রে কোনো অন্যথা করার সুযোগ বা প্রয়োজন নেই” বলেও জানিয়ে দিয়েছে বৃহত্তম রাজনৈতিক দলটি।

বিএনপি চিঠির কয়েক জায়গায় কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। দলটি বলেছে, কয়েকটি রাজনৈতিক দল বাস্তবায়ন প্রশ্নে সনদের স্বপ্নদ্রষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সুচিন্তিত ধারণার বাইরে গিয়ে নানা নিত্যনতুন ধারণা, পন্থার কথা বলছে।”

‘এসব ধারণা সুচিন্তিত ও বাস্তবসম্মত নয়’ বলে মনে করে বিএনপি।

জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ কয়েকটি দল জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চায়। এ দলগুলোর দাবি, সংবিধান সংস্কারসহ জুলাই সনদ নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন করতে হবে। সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন হবে। 

অন্য দলগুলোর নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি প্রসঙ্গে বিএনপির চিঠিতে ‘অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে গঠিত হয়েছে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হয়নি। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা থাকায়, সনদকে সংবিধানের ওপর প্রাধান্য দেয়া আইনি ও সাংবিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে অসম্ভব, অসংগত ও অগ্রহণযোগ্য। 

বিএনপির স্পষ্ট ভাষ্য, সংবিধানের অধীনে গঠিত কোনো সরকার রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করলে তা বিপ্লব নয় ক্যু হিসেবে গণ্য হয়। 

বিএনপি মনে করে, গৌরবময় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গঠিত সরকারকে কোনো দল বা গোষ্ঠী এরূপ অসম্মানজনক পথে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করলে তা হবে জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক।

সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন করার বিপজ্জনক চেষ্টা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাস্তবসম্মতও নয় বলেও মতামত দলটির।

এসএস//