৯ বছর পর দেশে ফিরলেন প্রবাসী আরিফুর, তবে লাশ হয়ে
রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৪:৩৭ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বুধবার

৯ বছর আগে জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়ায় যান রাজবাড়ীর আরিফুর ইসলাম (৪২)। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে পাড়ি জমিয়েছিলেন হাজারো মাইল দূরের জোহরবারু শহরে। তবে তিনি ফিরলেন লাশ হয়ে, নিঃস্ব-নিঃশব্দ।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) তাঁর মরদেহ এসে পৌঁছায় রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার কোমরপুর গ্রামে।
এসময় প্রিয় স্বজনদের আহাজারিতে মুহ্যমান হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন, আর প্রতিবেশীরা নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন একটি কাফনে মোড়ানো নিথর দেহের দিকে।
আরিফুর ইসলামের প্রতিবন্ধী মেয়ে জান্নাত আর ছোট ছেলে স্বাধীন বাবার লাশের খাটিয়ার পাশে বসে কাঁদছিল। জান্নাত একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল বাবার দিকে-শুধু তাকিয়েই ছিল, হয়তো এখনো বিশ্বাসই করতে পারছে না, বাবা আর কোনোদিন ফিরে তাকাবে না, কথা বলবে না।
২০১৬ সালে মালয়েশিয়ার জোহরবারুতে কনস্ট্রাকশনের কাজে যোগ দেন আরিফুর। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি পরিবার চালাতেন। কিন্তু গত ৩১ আগস্ট রাতে প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে রুমে ফিরে স্ত্রী সাজেদা ও মেয়ে জান্নাতের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। কথার একপর্যায়ে স্ত্রী গরুকে খাবার দেওয়ার কথা বললে তিনি ফোন রেখে দেন। কে জানতো, এটাই হবে তার সঙ্গে পরিবারের শেষ কথা!
পরদিন জানা যায়, কাজ শেষে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান আরিফুর ইসলাম।
তবে মৃত্যুপরবর্তী সময়টাও শান্ত ছিল না। ১৮ বছর আগে নিজের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার বিরাহিমপুর ছেড়ে স্ত্রীকে নিয়ে কালুখালীতে বসতি গড়েছিলেন তিনি। সেই থেকেই বাবার পরিবার ও আত্মীয়দের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। ফলে মৃত্যুর পর লাশ কোথায় দাফন হবে-তা নিয়েও দেখা দেয় মতবিরোধ।
সব জটিলতা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৬ দিন পর তাঁর মরদেহ দেশে আনা হয় এবং কালুখালীর কোমরপুর গ্রামে দাফন সম্পন্ন হয়।
এএইচ