‘সি’ গ্রেডেই বেরোবির শিক্ষক! মিললো ফল জালিয়াতির প্রমাণ
বেরোবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১১:৩৫ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শনিবার | আপডেট: ১১:৩৮ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শনিবার

শর্ত অনুযায়ী চাকরিতে আবেদন করার যোগ্যতা না থাকলেও রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে জালিয়াতি করে নিয়োগ পেয়ে শিক্ষকতা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে মো. ইউসুফ নামে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এবার শিক্ষা বোর্ডের তথ্যেও মিলল সেই শিক্ষকের ফলাফল জালিয়াতির প্রমাণ।
আওয়ামী রাজনীতির সাথে যুক্ত বঙ্গবন্ধু পরিষদ, রংপুর জেলার সহ-সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী সংগঠন নীল দলের যুগ্ন-আহ্বায়ক মো. ইউসুফ সাবেক আওয়ামীপন্থী বিতর্কিত উপাচার্য অধ্যাপক ড.নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর আমলে নিয়োগ পান।
জানা যায়, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত তদন্ত কমিটি এই জালিয়াতির সত্যতা পেয়েছে। মো. ইউসুফের সনদ যাচাইয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে জানানো হয় তাদের রেকর্ডের সাথে প্রেরিত ইউসুফের উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের কোন মিল নেই।
মো. ইউসুফের নিয়োগের শর্তে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে যে কোন একটিতে কমপক্ষে জিপিএ ৪ শর্ত হিসেবে চাওয়া হলেও নিয়োগের সময় জমা দেয়া সার্টিফিকেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায় মো. ইউসুফ এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৩.৫০ ও এইচএসসিতে পেয়েছেন ৩.০১ পেয়েছেন, যা নিয়োগরে এ শর্তটি পূরণ করেনি।
তবে তদন্ত কমিটি শিক্ষা বোর্ডে এ তথ্য যাচাই করতে গিয়েও জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছেন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে জানানো হয়, এ শিক্ষকের জমা দেয়া এইচএসসি ফলাফল ৩.০১ যা তাদের সংরক্ষিত ফলাফলের সাথে গরমিল রয়েছে। বোর্ডের তথ্যমতে, এ শিক্ষকের এইচএসসির ফলাফল ২.৯০ যেখানে তিনি ফলাফল বাড়িয়ে ৩.০১ দিয়েছেন। জালিয়াতি করা ফলাফলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে আবেদনের শর্ত পূরণ করেনি।
জানা যায়, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় একটি শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই বিজ্ঞপ্তির পদের বিবরণীর ‘খ’তে ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক (স্থায়ী) একটি পদে নিয়োগের কথা বলা হয়। বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলির (গ)নং শর্তে উল্লেখ করা হয়, ‘এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার যেকোনো একটিতে ন্যূনতম ‘এ’ গ্রেড (৫.০০ পয়েন্ট ভিত্তিক গ্রেড সিস্টেমে সিজিপিএ/জিপিএ ন্যূনতম ৪.০ থাকতে হবে।’
এসব শর্তে পূরণ না করেই ওই পদে নিয়োগ পায় মো. ইউসুফ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, মো. ইউসুফের নিয়োগ পেতে কোনো প্লানিং কমিটি গঠন করা হয়নি। সিন্ডিকেট ওই নিয়োগ বাতিল করলেও বিষয়টি চ্যান্সেলরকে জানানোর আইন থাকলেও সেটা কৌশলে এড়িয়ে যায় তৎকালীন কর্তৃপক্ষ। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে হাইকোর্টে রিটের পর রায় নিয়ে মো. ইউসুফ শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন বিভাগে। এ বিষয়ে আপিলও করেনি কর্তৃপক্ষ।
কাগজপত্রে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন লঙ্ঘন করে একটি প্রভাষকের পদ বিজ্ঞাপিত করলেও দুজন প্রার্থীকে এবং অধ্যাপক পদের বিপরীতে একজনসহ মোট তিনজনকে নিয়োগ প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও অনুমোদিত (স্থায়ী) পদ ছিল কেবল একটি। তবু তিনজনকেই স্থায়ী পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, নিয়োগের পুরো লেখাটি টাইপ করা থাকলেও ‘স্থায়ী একটি প্রভাষক পদ’ এর জায়গায় ‘এক’ শব্দটি কলম দিয়ে কেটে ‘তিন’ হাতে লিখে দেওয়া হয়। আবেদনের যোগ্যতা না থাকা মো. ইউসুফকে বাছাই বোর্ড নিয়োগের সুপারিশ করা তিনজনের মধ্যে প্রথম হিসেবে উল্লেখ করে। কিন্তু তার নামের আগে ক্রমিক নং ২ লেখা হয়।
ফলাফল জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার পরও কেনো এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য প্রফেসর ড.মো. শওকাত আলী বলেন, উনারটা সহ তিনজন শিক্ষকের নিয়োগের জালিয়াতির তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়৷ যেহেতু তিনজনের একটি কমিটি। তাই তার প্রতিবেদন জমা হলেও বাকি দুইজনেরটা এখনো জমা হয়নি। এছাড়াও তিনি (ইউসুফ) বিশ্ববিদ্যালয়কে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন যেখানে তার বিষয়টি ৯০ দিন স্থগিত রাখার কথা বলা হয়েছে।
এএইচ